শনিবার - মে ১১ - ২০২৪

ব্যাকটেরিয়ার কারণে আমরা বাঁচি?

ছবিড্রি হাইজ

আজব শোনালে কী হবে ঘটনা কিন্তু সেটাই। আমাদের শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও এনজাইমের জন্মই হয় ব্যাকটেরিয়ার পেট থেকে। ভিটামিন বি১২ এর কথাই ধরা যাক। প্রোটিনকে মুখ গহŸর থেকে ধরে পাকস্থলিতে নিয়ে যাওয়া এবং সেখানে এসিড ও অন্যান্য এনজাইম কর্তৃক হজম হয়ে অ্যাামিনো এসিডে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত ভিটামিন বি১২ প্রোটিনের সাথে আঠার মতো লেগে থাকে। তারপর ক্ষুদ্রান্তের পথ বেয়ে বৃহদান্তে গিয়ে পুনরায় লিভারে ফিরে আসে এবং মুখে প্রোটিন আসা মাত্রই লিভার থেকে সে মুখ গহŸরে ছুটে যায়। এই চক্র চলতেই থাকে। বৃহদান্তে বড় আঁশযুক্ত কার্ব (যেমন মিষ্টি আলু, ব্রকলি, পাতাকপি, ফুলকপি, কেশরআলু, লালপেয়াঁজ, মাশরুম, সবুজ শাক ইত্যাদি) থেকে ফার্মেন্টেশনের মাধ্যমে ভিটামিন বি১২ এর জন্ম। বাইরে যেসব খাবারে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়, সেগুলোর উৎসও এই ব্যাকটেরিয়ার ফার্মেন্টেশন। কিন্তু বিউটারেট নামক এনজাইমের বেলায় ঘটনা আরও জটিল। এই এনজাইম বাইরের কোনো খাবারে পাওয়া যায় না। কারণ, যে ব্যাকটেরিয়া এটার জন্ম দেয়, সে আবার অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বাঁচতে পারে না। সেজন্য আমাদের বৃহদান্তে বসে বসে সে তার খাবারের খোঁজ করে এবং পেলে তবেই বিউটারেট নামক এনজাইমের জন্ম দিয়ে তাকে লিভারে পাঠিয়ে দেয়। বিউটারেট হচ্ছে এক ধরনের সর্টচেইন ফ্যাটি অ্যাসিড যা পুরো খাদ্যনালির দেয়ালের সুরক্ষা দেওয়া ছাড়াও আমাদের ইমিউন সিস্টেমের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এর স্বল্পতায় মানুষ নানা ধরনের অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হয়।

বলা হচ্ছে যে, আমাদের বুদ্ধি যতটা না মগজে তার চেয়ে বেশি এই মাইক্রোবায়ম বা গাট ফ্লোরায়, মানে খাদ্যনালির এই বিস্তৃত পথে। শুধু তাই না, আমাদের বুদ্ধিমত্তা ও এই গাটফ্লোরা পরস্পরের পরমবন্ধু, একজনের সমস্যায় আরেকজন আক্রান্ত। আর অধ্যাপক জাস্টিন, ডাক্তার জুলিয়া বা ডাক্তার গ্রান্ডির কথা মানলে এটা মানতে হবে যে, পেটের বুদ্ধিই মাথার মগজকে চালায়। কারণ পেটে কে এসেছে সেই খবর না পেলে মাথার মগজ শরীরকে কীভাবে বুঝ দেবে? তা যে যাকেই চালাক, এই পেটকে সুস্থ রাখাটা অতিব জরুরি। কিন্তু দৈনন্দিনের জীবনযাপনে, বিশেষ করে খাবার গ্রহণের বেলায় গাটফ্লোরা তথা পেটের অধিবাসীদের কথা বিস্মৃত হই। তখন কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে শুরু করে চর্মরোগ, এসিড রিফ্লেক্স, চামড়া ও শরীরে প্রদাহ, নির্ঘুমতার মতো নানা অসঙ্গতি শরীরে জেঁকে বসে। এছাড়া অসুখের জন্য দায়ি কিছু দুষ্টু ব্যাকটেরিয়াকে খতম করতে প্রায়শঃই আমরা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া খাই, তখন দুষ্টু ব্যাকটেরিয়া মারতে গিয়ে ওইসব মেডিসিন কতশত ভালো ব্যাকটেরিয়াকে যে খতম করে তার কোনো হিসাব নাই। তখন পুরো গাটফ্লোরায় দেখা দেয় ব্যাকটেরিয়া সংকট, যার পাশর্^প্রতিক্রিয়ায় শরীরে নানা রোগের জন্ম হয়। গাট ফ্লোরার যতœ নিতে নিয়মিতভাবে ভালো ব্যাকটেরিয়া অর্থাৎ প্রো-বায়োটিক খাওয়ার পাশাপাশি পেটের মধ্যে বসবাসরত ব্যাকটেরিয়াদের জন্য খাবারের জোগান ঠিক রাখাটা তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেফির, টকদই, ঘোল, ডার্কচকোলেটথেকে শুরু করে ফার্মেন্টেড যেকোনো খাবার যেমন, আপেলসিডার ভিনেগার, ছাওয়ারক্রাউট (ফার্মেন্টেড পাতাকপি), নারিকেল ভিনেগার, পান্তাভাত, আচার ইত্যাদি হচ্ছে ভালো ব্যাকটেরিয়ার উৎস। একইভাবে শরীরে বসবাসরত ব্যাকটেরিয়ার খাবার হচ্ছে মিষ্টিআলু, শ্যাকাআলুসহ নানাজাতের মূল, চালের আস্তরণ, ইসবগুলের ভুষি, তিল-তিশি গুড়া, চিয়া, ওট, বার্লি, আদা, রসুন, হলুদ, পেঁয়াজ থেকে শুরু করে কলা, পেঁপে, বেল, আপেল, বড়ই, জলপাই, জাম, জাম্বুরা, পেয়ারার মতো নানা খাবার। অমৌসুমে খাওয়ার জন্য এসব ফল দিয়ে বানানো আচার তো আছেই।

- Advertisement -

ক্যালগেরি, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent