বৃহস্পতিবার - মে ৯ - ২০২৪

সুমেরুতে উষ্ণায়নে বরফের হ্রাস

ছবিহেনস জারগেন মাজার

বায়ুমন্ডলে গ্রীন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বেড়েই চলছে প্রানীজগতের অস্তিত্বের জন্য এক মারাত্মক হুমকিও দিনদিন বেড়ে উঠছে। পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের প্রাণী যাদের আবাস মনুষ্য জাতি এস্কিমোদের মত বৃক্ষহীন বরফের জগতে তারাও সেই হুমকির থেকে নিষ্কৃতি পাচ্ছে না।
উত্তর মেরু বা সুমেরু অঞ্চলে বিশ্ব উষ্ণায়ণের ফলে বরফ হ্রাস হচ্ছে, মেরু অঞ্চলীয় ভল্লুক ( পোলার বিয়ার) চার গুণ শক্তিক্ষয় করে বেঁচে থাকার প্রয়াস করছে।এমনটাই বিজ্ঞানীদের গবেষণার চিত্র।
পোলার বিয়ার প্রথমত খাদ্যের জন্য বেশী পরিশ্রম করে না বা করতে হয় না, বসে থাকা ও শিকারের অপেক্ষায় থাকার জন্যেই তাদের শারীরিক গঠন উপযোগী। বরফের স্তুপে মাঝে মাঝে গর্ত থাকে মেরু অঞ্চলের সামুদ্রিক সীল মাছদের শ্বাস ক্রিয়া পরিচালনার জন্য, এই সব গর্ত থেকেই সীল ধরে খায় পোলার বিয়ার। তাদের স্বাভাবিক আবাস স্থল থেকে এসব গর্ত পরিবর্তিত হচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে বরফ গলার সাথে সাথে। তাছাড়া উত্তর মেরু অঞ্চলের তিমি মাছ বরফের নীচে জলে ডুব দিয়ে খুব ধীর গতিতে চলাচল করে শিকার খুঁজে পেত সহজে। কিন্তু আজকাল তাদের বেস পরিশ্রমের পরও শিকার ধরা কঠিন হয়ে পড়ছে, বাঁচাই মুশকিল তাদের।
শ্মশ্রু ওয়ালা সীলমাছ পোলার বিয়ারদের প্রধান খাদ্যের উৎস ও শক্তির আধার , আজকাল তারা সেই উৎস হারাতে বসেছে। সুমেরু মহাসাগরের পর যে বরফের স্তূপে বসে তারা অল্প পরিশ্রমে শিকার করত, ১৯৭৯ সালের পর থেকে সে বরফ প্রতি দশকে ১৩% সঙ্কুচিত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে পোলার বিয়াররা এখন গড়ে তিনদিন চেষ্টা করলে হয়ত সীল মাছ পেতে পারে। অন্যথায় পার্থিব অন্য কোন খাদ্যের উৎস খুঁজে পেতে অনেক দূরদূরান্ত চলাচল করতে হয় এবং পার্থিব অন্য খাদ্যের উৎস কিছুতেই সীল মাছের অবক্ষয় পূরণ করতে পারে না।
অর্থাৎ পোলার বিয়ারদের খাদ্যাভাব দিনদিন প্রকট হয়ে আসছে। একটি সীল মাছ থেকে যে পরিমান হজমসাধ্য শক্তি পাওয়া সম্ভব, সেই পরিমান শক্তি ৭৬ টি মেরু অঞ্চলের রাজহংসের সমান। এমন প্রকাশ গবেষকদের বিশ্লেষণে।
মেরু অঞ্চলের তিমি মাছ সহিষ্ণু সাঁতারু তবে তাদেরও শ্বাস ক্রিয়ার জন্য বরফ স্তূপে নির্ভরযোগ্য গর্তের প্রয়োজন হয় কিন্তু আজ পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে বরফের পরিমাণ ও স্থিতি বদল হচ্ছে, প্রাণীদের একান্ত প্রয়োজনীয় গর্ত স্থানান্তরিত হচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে।
সুমেরু অঞ্চলের বাস্তবতা আজ এমনটাই অনিশ্চিত সেখানকার প্রাণীদের জন্য, যেমন তিমিদের শরীরে যে পরিমান অক্সিজেন থাকে সে-অনুপাতে জলের গভীরে বেশীদূর সাঁতার কেটে শিকার না পেলে তাদের ডুবে মরাছাড়া গত্যন্তর নাই। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবজগৎ ও উদ্ভিদ জগতের পরিবেশের সামঞ্জস্য-বিজ্ঞান ও ক্রমবিকাশ-সম্বন্ধীয় বায়্যোলজী বিভাগের রিপোর্ট এমন বিশ্লেষণ দিয়েছে।
আবহাওয়া সঙ্কট ধীরে ধীরে সুমেরু অঞ্চলেও শিল্পকারখানা গড়ার সুযোগ করে দিবে হয়ত, তাহবে স্থানীয় এসব প্রাণীদের রাজ্যে অনধিকারপ্রবেশ। প্রচন্ড মারাত্মক একপ্রকার বড় তিমিমাছও রয়েছে যারা ধীরে চলা ছোট তিমিদের শীর্ষ শিকারি।
পোলার বিয়ার ও তিমিদের অবক্ষয় মেরু অঞ্চলের সামুদ্রিক অন্যান্য প্রাণীদের জগৎকেও দ্রুত পরিবর্তন করবে যেমন এ অঞ্চলের একপ্রকার ষাঁড়, খেঁকশিয়াল ইত্যাদি।
গবেষকরা বলতে চাইছেন, বর্তমান শতাব্দীর শেষ দিকে বিশ্বের পোলার বিয়ার ও তিমিদের সংখ্যা এক তৃতীয়াংশ হারিয়ে যাবে। তাই মনুষ্য জাতির যেভাবেই হউক কার্বন ফুটপ্রিন্ট বা গ্রীন হাউজ গ্যাস নির্গতকরণ কমানো চাই উদ্ভাবনকুশলতার সহায়তায়। তাছাড়া আমরা বিমর্ষতাপূর্ণ এক বিশ্ব পেতে চলেছি।
সুমেরুতে উষ্ণতা এভাবে বেড়ে গেলে এবং বরফ গলতে থাকলে অনেক বন্দর নগরও সমুদ্রে নিমজ্জিত হতে পারে, জলপ্রপাতের মতই নেমে আসবে বিশ্বব্যাপী নানা অভিঘাতী অনুরণন।
সুমেরু অঞ্চলের আইকনিক্ সব প্রাণী পোলার বিয়ার, তিমি, সীল ইত্যাদি অরিক্ষত হতে থাকবে সুমেরু মহাসাগরে বরফের ঘনত্ব যতই কমতে থাকবে। পরিবর্তিত পরিবেশে প্রাণীদের অভিযোজিত হওয়ার ক্ষমতা প্রাকৃতিক বাস্তবতায় সীমিত।।
বিজ্ঞানীদের হিসাব অনুসারে আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ এই সব প্রাণীদের অবক্ষয়ের সংখ্যা জানার পূর্বেই ভবিষ্যদ্বাণী করা হচ্ছে তাদের বংশবৃদ্ধির উপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তার দিক বিবেচনায় রেখে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সচেতন হওয়া আজ আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপরিহার্য, কী পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করছি ব্যক্তিগত পর্যায়ে তার প্রতি পুঙ্খানুপুঙ্খ চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়া অত্যাবশ্যক। পরিবেশের সুস্থতা রক্ষার্থে সরকারীভাবে সকল পণ্যের উৎপাদনে কার্বন ফুটপ্রিন্টের একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ন এবং একটা গ্রহণযোগ্য মান নির্ধারণ করা প্রয়োজন যাতে করে কোনো প্রতিষ্ঠানই পরিবেশের ক্ষতি করে পণ্য উৎপাদন করতে না পারে।

টরন্টো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent