বৃহস্পতিবার - মে ৯ - ২০২৪

পিসিআর টেস্ট নিয়ে পাগলামি

কানাডা এবং বাংলাদেশ উভয় দেশে করোনা গিজগিজ করছে সেখানে উড়োজাহাজের যাত্রীদের পিসিআর টেস্ট কার উপকারে লাগছে এটা আমার মাথায় ঢোকে না ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এমন যে নদীর দুইপারে শাপ কিলবিল করছে আর মাঝি বলছে কেউ সাপ নিয়ে নৌকায় উঠবেন না এই পিসিআর টেস্ট বর্তমানে এক মহা যন্ত্রণার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে

রোগের তো বটেই রোগ তাড়ানোর জন্য যে অসুধ, তারও সাইডইফেক্ট কম না। বিশ্বে বর্তমানে করোনাভাইরাস নিয়ে যা ঘটছে, তাকে কি করোনার নাকি ভ্যাকসিনের সাইডইফেক্ট বলা হবে, বলা মুশকিল। তবে, নিশ্চিত বলতে পারি, এটা এখন গণপাগলামোর রূপ নিয়েছে। সবখোলা― রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, ফুল ও ফলের দোকান সব খোলা, সেখানে মানুষ ঠেলাঠেলি করছে দেদারছে! রঙিনশাড়ি আর পাঞ্জাবি পরে আজ যে বসন্ত সেটা জানাতে আর কিছুক্ষণ পর লক্ষ লক্ষ মানুষ বেরিয়ে পড়বে পথে, কোথাও করোনাভাইরাস অথবা পাগলামোর চিহ্ন মাত্র নেই; কিন্তু, যেই মাত্র আপনি ইশকুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে তাকাবেন, কী সুনসান নিরবতা! যেন ভাইরাসের একমাত্র লক্ষ্যস্থল হচ্ছে বিদ্যার্থীরা।
হায় পাগলামি!
অথবা, হাওয়ার জাহাজে ভেসে ভিন দেশে যেতে চাইবেন কিংবা ভিনদেশ থেকে নিজ দেশে আসতে, তখন বলা হবে, পিসিআর টেস্ট দিয়া নেগেটিভ টেস্ট রেজাল্ট আনো মিয়া। আর যদি পাগল হয় সেরকম হুসিয়ার, তো টেস্ট মেয়াদ ৪৮ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়ে যদি ৪৯ ঘণ্টায় গিয়ে পড়ে, তো বলা হবে, এটাই কাজ হবে না, তরে প্লেনে উঠবার দিমু না।
আর কারো বেলায় কী ঘটে জানি না, আমার বেলায় গত ৮ তারিখে কানাডার ক্যালগারি বিমান বন্দরে এয়ারকানাডার সুন্দরি কর্মীগণ সেটাই প্রয়োগ করে আমাকে একদিনের জন্য আটকে দিতে পেরেছিল। আমার পিসিআর টেস্ট করা হয়েছিল ৬ তারিখে সকাল ১১:৩৩, আর প্লেন ছাড়ার সময় ছিল ৮ তারিখ দুপুর ১২:৩০ মিনিট। বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণায় বলা ছিল এই ব্যবধান ৪৮ ঘণ্টা হতে হবে। তো এয়ার কানাডার সুন্দরিরা পুলিশের চেয়ে বড় পুলিশ, ১০০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতির রাস্তায় ১১০ কিেলামিটার গতিতে চালালে তারা কোন চালককে নিয়ম ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত করে না, বড়জোড় থামিয়ে নম্রভাষায় বলে, ভাইসাব, গতিটা একটা দেখেশুনে চলেন। আর যদি টিকেট দিয়ে দেয়, আদালতে গেলে বিচারক মশাই ওই পুলিশের দিকে কটমট করে তাকিয়ে চোখের ভাষায় বলবেন, মজা লস! তারপর টিকেট বাতিল। এর পেছনে বড় যে দার্শনিক ব্যাখ্যাটি দেয়া হয়, তা হচ্ছে মানুষকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে হলে প্রয়োগকারীকে সতর্ক থাকতে হবে, ইচ্ছাকৃতভাবে আইন ভঙ্গ করা আর অনিচ্ছা অথবা অজ্ঞানতাবশতঃ আইন ভঙ্গ করা এক বিষয় না।
তো ১ ঘণ্টার বিষয়টা সেভাবেই দেখা যেতে পারতো। কিন্তু, ওই যে বললাম গণপাগলামো, সেটাই সেদিন পেয়ে বসেছিল তাদের। তা না হলে ১ বা ২ জন না, তাদের ম্যানেজার সহ ৫ জনের সেদিন রায় ছিল কিছুতেই আমাকে প্লেনে উঠতে দেবে না। ভাগ্য সহায় বলতে হবে, ওই দিন আবার পিসিআর টেস্ট করিয়ে, ১০০ ডলার গচ্চা দিয়ে, আর কাতার এয়ারওয়েজের সৌজন্যতায় কোন বাড়তি ভাড়া না দিয়ে পরদিন ভোর ৬ টায় আর যাত্রা শুরু করতে পেরেছিলাম।
আমার প্রশ্ন এই পিসিআর টেস্ট নিয়ে। কানাডা এবং বাংলাদেশ উভয় দেশে করোনা গিজগিজ করছে, সেখানে উড়োজাহাজের যাত্রীদের পিসিআর টেস্ট কার উপকারে লাগছে এটা আমার মাথায় ঢোকে না। ব্যাপারটা দাঁড়িয়েছে এমন যে, নদীর দুইপারে শাপ কিলবিল করছে, আর মাঝি বলছে কেউ সাপ নিয়ে নৌকায় উঠবেন না। এই পিসিআর টেস্ট বর্তমানে এক মহা যন্ত্রণার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে, কোন সিম্পটম নাই, টেস্ট করলে পজিটিভ, ব্যাস যাত্রা বাতিল এবং অনেক বেশি দাম দিয়ে অন্য কোন দিনের জন্য বুকিং। এমন হাজার হাজার হয়রানির শিকারে পরিণত হয়েছে হাজার হাজার যাত্রী। একেবারেই অপ্রয়োজনী এই পিসিআর টেস্ট হচ্ছে পাগলামোর সেরা। বহুবছর পরে কেউ যখন এই সময়ের গল্পগুলো শুনবে অথবা পড়বে, তখন তারা অবাক হয়ে ভাববে, মানুষ এমন নির্বোধ ছিল!!

ক্যালগেরি, আলবার্টা

- Advertisement -

Read More

Recent