বুধবার - মে ১৫ - ২০২৪

অজানা দেশ : আট

ছবিওমর ফারুক

বসারঘরে ঢুকে মুখোমুখি যার চোখে চোখ পড়ে সে একজন যুবক। তাতাই কেন যেন অপ্রস্তুত হয়। একনিমিশে চোখে গেঁথে যায় যেন চেহারাটা। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ রঙ, মায়াময় চোখের চাহুনি, যেন তাতাইর ভিতর দেখে ফেলেছে। থমকে থেমে যায় তাতাই। মামা আদরভরা কন্ঠে বলেন,
আয় মা ভিতরে আয়। বস আমার পাশে। মামা অনেক খুশি হয়েছেন এরা এসে পড়ায়, সেটা চোখে-মুখে প্রকাশ পাচ্ছে। মামা আবার ডাকেন,
তাতাই আয় আমার পাশে এসে বস মা। তাতাই ভিতরে এসে মামার পাশে সোফায় বসে। ওর পিঠে হাত দিয়ে উৎসাহী কন্ঠে মামা বলেন,
মিসেস সামিয়া, ও হচ্ছে আমার বোনের মেয়ে নভেরা ইউসুফ তাতাই, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর করেছে। লন্ডন থেকে বেড়াতে এসেছে।
মামার মুখোমুখি বসা মহিলাকে বলেন মামা, এরপর মেহমানদের একজন একজন দেখিয়ে তাতাইকে বলেন, উনি মিস্টার হারুন ইকবাল, আর উনি সামিয়া ইকবাল, দুজনেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখন স্বামী-স্ত্রী। পাশে বসা মহিলাকে দেখিয়ে বলেন, কুলসুম বিবি, আরেকজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। আর ও হচ্ছে তিতাস ইকবাল, উনাদের একমাত্র ছেলে। তাতাই সবাইকে সালাম দেয়। তিতাসের দিকে চেয়ে হাসে।
সামিয়া তাতাইর দিকে তাকিয়ে আবেদিন আহমেদের কাছে জানতে চান,
মেয়ে বাংলা বলতে পারে ?
উচ্চকিত হাসিতে ভেঙ্গে পড়েন মামা, হা হা হা হা।
খুব ভালো পারে, আপনাদের অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্ব ওকে দিয়েছি।
বাহ খুব ভালো লাগল, সামিয়া সপ্রশংস দৃষ্টিতে তাকান তাতাইর দিকে আর বলেন,
কেমন লাগে বাংলাদেশ ?
আমার খুব ভালো লাগে, তাই সুযোগ পেলেই এসে পড়ি।
বাহ বাহ শুনে খুব ভালো লাগল, হারুন বলেন,
আচ্ছা জয়, সাজিদ ওরা সব কোথায়, ওদের ডাক না?
মামা, এখুনি তুমি রেকর্ডিং শুরু করছো না। ওরা সব আসবে, পরিচয় হয়ে যাবে কিন্তু আমার মনে হয় উনাদের এখন একটু ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ দেয়া দরকার। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। সামিয়া মুখ নিচু করে তাতাইর দিকে তাকিয়ে হাসছেন আর আবেদিন আহমেদ বলেন,
ঠিক বলেছিস, তুই ওদের ভিতরে নিয়ে যা।
উনাদের নিজেদের মতন ছেড়ে দাও মামা, আপনারা ঘুরে দেখুন নিজের বাড়ি মনে করে, সব হাতের কাছে পেয়ে যাবেন। এই বাড়িটা এত ভালো লাগবে দেখবেন, যেতে ইচ্ছা করবে না আর।
হারুন বলেন,
ঠিক বলেছো, আমাদের জন্য ব্যস্ত হওয়ার কিছু নাই। সামিয়ার মনে পড়ে গেল অজানা এক বাড়িতে ওরা নিজেদের মতন সব খুঁজে নিয়েছিল। কুলসুম বিবি, হারুন, সামিয়া তিনজনই ছিলেন, আরো ছিল শিবু, সাদেকীন, ইসরাত।

মিসেস আবেদিন এসে বলেন, চলেন বাইরে বারান্দায় খাবার দেওয়া হয়েছে, এ বাড়িতে ঘরে বসে থাকার কোনো মানে নাই।
সবাই বেরিয়ে আসেন ঘরের বাইরে ভিতরের দিকের উঠানে। নানান রঙের গোলাপ, জবা, হলুদ গাঁদা ফুলের সমারোহে চারপাশ ঝলমল করছে। মিষ্টি একটা ঘ্রাণ ছড়িয়ে আছে, গাছগাছালির, ফুলের। পেছনে ঘন গাছগাছালির সবুজ মায়া যতদূর চোখের দৃষ্টি সীমানা। হারুন বলেন,
অনেক যত্নে গড়া খুব সুন্দর, দৃষ্টিনন্দন। সামিয়া বলেন,
সত্যি না এলে খুব মিস হতো, ঢাকায় তো ইটকাঠ ছাড়া সবুজ দেখতেই পাই না। ধন্যবাদ মিস্টার আবেদিন।
নো ফরমালিটিজ মিসেস সামিয়া, আপনারা নিজের মতন আনন্দ উপভোগ করুন, যেমন তাতাই বলল।
তাই প্রকৃতি বড় বেশি হৃদয়ের কাছাকাছি করে।

- Advertisement -

তাতাই এক সময় কুলসুম বিবির কাছে চলে যায়। হাত ধরে হাঁটছে দুজনে। মৃদু স্বরে কথা বলেছে দুজনে যেন কতদিনের চেনা। ওরা হাঁটতে হাঁটতে চলে যাচ্ছে দূরে পুকুর পাড়ের দিকে।
পুকুরের জলে হাত মুখ ধুয়ে কুলসুম বলে,
মা গো তোমার পরাণে এত মায়া কেন ? তুমি লন্ডনে থাকো মনে হয় না, তুমি বাংলাদেশের মেয়ে।
আমি এদেশেরই মেয়ে তবে কি জানেন, পৃথিবীজুড়ে সব মানুষের মনই এমনি মায়ায়, ভালোবাসায় ভরা। হঠাৎ কুলসুম বিবি প্রতিবাদ করে, তাতাইর কথার।
না গো মাইয়া, সব মানুষ ভালা না। কিছু মানুষ আছে ইবলিশের লাহান। তুমি তাদের দেখো নাই। দোয়া করি যেন জীবনে দেখা না পাও। জীবনটা ছারখার হইয়া যাইব।
তাতাই শুনেছে আবেদিন আহমেদের কাছে, মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত কিছু মানুষ আসছেন অনুষ্ঠানের জন্য। এই সেই মানুষ এরা কতটা কষ্ট পেয়েছিলেন সে সময় যে এখনও এমন ভয়াবহ স্মৃতি বাজে বুকের মাঝে ? তাতাই নীরবে মেনে নেয় কুলসুম বিবির কথা। কিছু মানুষ যুদ্ধের ভয়াবহতা তৈরি করে পৃথিবীতে এও ধ্র“ব সত্য, অস্বীকার করার উপায় নাই। মনটা খারাপ হয়ে যায় তাতাইর।
আয়শা দুটো বেনি দুলিয়ে দৌড়ে আসে। খেতে ডাকে আপনাদের আসেন।
আয়শা কুলসুম বিবির হাত ধরে লাফাতে লাফাতে হাঁটছে। খাওয়ার টেবিলে জোর কথা চলছে স্যামুয়েল আর তিতাসের। জিনিয়া আর হারুনের মধ্যে, সামিয়া, আবেদিন আহমেদ তিনজোড়া মানুষ নিজেদের গল্পে নিমগ্ন। কুলসুম বিবিসহ তাতাই আর আয়শা পৌঁছালে মামী ওদের খাবার তুলে দেন। ওদের রাজনীতি, অর্থনীতি আর নিজেদের মধ্যে কথাবার্তায় এরা চুপচাপ খাওয়া সেরে টেবিল থেকে উঠে পড়ে।
তিতাসের কিছু বুদ্ধিদীপ্ত কথা তাতাইকে আকর্ষণ করে। ছেলেটা বেশ জানে। অনেক বিষয়ে খবর রাখে মনে হয়। লিমা আপার মতন বড়লোক মা-বাবার আদরের নন্দন না মনে হয়। এই বিষয়টা ভালো লাগে ওর। ছেলেটার চশমার আড়ালে চোখ দুটো বড় মায়াময়। তবে দৃষ্টি ভীষণ তীক্ষè। ঝাকড়া মাথাভর্তি চুল আর অনেক লম্বা, বিষয়টা ওকে কেমন একটা ব্যক্তিত্ব দিয়েছে।
তাতাই আর কুলসুম বিবি হেঁটে পুরো বাড়ি চক্কর দিয়ে পুকুরের বাঁধানো সিঁড়িতে বসে। ফলফুলের গাছ দেখে কুলসুম বিবি খুব খুশি। হাত দিয়ে আদর করে যত্ন করে নেড়েচেড়ে দেখে গাছ, ফুল, ফল। নানান রকম পাতা দেখিয়ে বলছে কোনোটা কি কাজে লাগে। অনেক বিষয়ে কুলসুম বিবির যে জ্ঞান আছে তাতাইর তা নেই। ওর খুব ভালো লাগছে কুলসুম বিবির গল্প শুনতে।
একসময় তাতাই জিজ্ঞেস করে আপনার আর কে আছে ?
প্রাণবন্ত কুলসুম বিবি হঠাৎ থমকে যায়, ভাবলেশ শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে তাতাইর মুখের দিকে। একসময় আস্তে বলে এখন আর কেউ নাই।
আমি দুঃখিত আপনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য।
তুমি আর কি করলে গো মাইয়া। আমার পুড়া কপাল তাই সব হারাইলাম। সব আছিল─এমন বাড়ি, ধানী জমি, গোলা, গরু, শাশুড়ি, সোয়ামী, মাইয়া। এক রাতে সব শ্যাষ হইয়া গেল। হারামীর বাচ্চারা সব ছাড়খার কইরা দিল। সোয়ামীরে মাইরা ফালাইল আমার চোখের সামনে থাইকা নিয়া। মাইয়াটারে আর কোনোদিন খুঁইজা পাই নাই। মাইনষে কইছে মইরা ছিল দাদীর কোলের ভিতর আমার ফুলি। আমি কোনোদিন দেখি নাই। খুঁইজাও পাই নাই আর। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস কুলসুম বিবির।
আমার এই শরীরের উপর কি অত্যাচার যে করছে। মনে হয় দোজখের আজাবের মধ্যে আছিলাম। মুক্তিযোদ্ধারা যখন ক্যাম্প থাইকা বাইর করে তখন শরীরে কোনো শক্তি আছিল না গো মা। উদাস হয়ে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে থাকেন কুলসুম বিবি। তাতাইর চোখ ভরে উঠে জলে। ওর বুকের ভিতর কষ্টে মুচড়াতে থাকে। একটা দলা আটকে থাকে গলার কাছে, ভিতরেও যায় না বেরও হয় না।
আস্তে আস্তে আবার কুলসুম বিবি বলেন,
হাসপাতালে আমার একটা ছেলে হইছিল নাম রাখছিলাম জয়। এক বিদেশি মেমসাবের কাছে তারে দিয়া দিছিরে মা।
চমকে কুলসুম বিবির দিকে তাকায় তাতাই, ওর নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে।
ভালোই হইছিল, রাজাকারে বাড়িঘর দখল কইরা নিছে। যারা যুদ্ধে হারামীগো লগে আছিল তারা সব দখল কইরা বইসা রইছে। আমি সর্বহারা পথে পথে ঘুরি, ভিক্ষা করি। তারে কি খাইতে দিতাম, কই রাখতাম। হে মনে লয় ভালোই আছে বিদেশি মায়ের কাছে। আপন মনে যেন প্রলাপ বকে যাচ্ছে কুলসুম বিবি।
তাতাই এখন কি করবে, ইনি কি জয়ের মা, যদি না হয়। বড় লজ্জা হবে তাহলে। বাংলার ঘরে ঘরে কত মেয়ের এমন ঘটনা ঘটেছে সবাই কি তাদের ছেলের নাম রেখেছিল জয়? জয় কোথায়? তাতাইর সমস্ত শক্তি যেন নিঃশেষিত হয়ে গেছে। ও কথা বলতে পারছে না, নড়তে পারছে না। শুধু চোখ দিয়ে ঝরছে অশ্র“।
কুলসুম বিবি কথা বলতে বলতে তাতাইর দিকে তাকান। ওর চোখের জল মুছে দিয়ে বলেন, তোমার মনটা এমন নরম কেনরে মা। তাতাই উনাকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে চুপচাপ।
কুলসুম বিবি একসময় বলেন,
মারে একটু যদি শুইতে পারতাম শইলটা ভালা লাগতাছে না। তাতাই নিজের ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেয় উনাকে।
ঘুম দেন একটা ভালো লাগবে। অনেকটা পথ এসেছেন তো ঢাকা থেকে জার্নি করে।
অল্প সময়েই ঘুমিয়ে পড়েন কুলসুম বিবি।
তাতাই বাঁধান সিঁড়ির উপর বসে আছে পুকুর পাড়ে। অনেক কথা মনে ভাসছে। সব কথা সঠিকভাবে মিলাতে পারছে না। পানির মাঝে ছোট ছোট ঢেউ দেখতে দেখতে হঠাৎ মনে হয় প্লেনে জয়ের সাথে বলা কিছু কথা।
তুমি কীভাবে এই বিশাল জনসমুদ্রে তোমার মাকে খুঁজবে ? জানি না তবে মনে হয় তুমি সাহায্য করবে। আমি ! অবাক হয়েছিল তাতাই,
হুম তাইতো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল, মজা করেছিল জয়। তাতাইও বলেছিল।
বলা যায় না, তোমার সাহায্যে আসতেও পারি।
মজা করে বলা কথাগুলো ওরা কেউ তো কিছু ভেবে বলেনি তখন। জয় বলেছিল তুমি আমাকে সাহায্য করবে ?
এই কুলসুম বিবি জয়ের মা কিনা তাতাই কীভাবে মিলাবে ? ওর বড় অস্থির লাগছে। জয় আর সাজিদ কোথায় ? ওদের আজ সারাদিন দেখছি না যে।
খাওয়া-দাওয়ার পরে দুপুরের ঝিমধরা সময় সবাই ঘরে। বাবা-মা বিশ্রাম করছেন। অনেকটা পথ এসে ওরা ক্লান্ত।
একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে তিতাস বাড়িটার চারপাশে। বড় বেশি সবুজের আবরণ, ছিমছাম মায়াময়, খুব ভালো লাগছে ওর। তাতাইর এক নওয়েজিয়ান বন্ধু আছেন আর বিখ্যাত গায়ক সাজিদ মেহরা উনিও নাকি আছেন এ বাড়িতে। তবে ওদের সাথে দেখা হয়নি। কাল রাতে সবাই ভোর পর্যন্ত আড্ডা দিয়েছেন তাই উনারা ঘুমাচ্ছেন। দিনের বেলা এত ঘুম কেউ ঘুমাতে পারে নাকি? তিতাস পারে না। ও সকালে উঠে যায়। আনমনা হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ চোখে পড়ল পুকুর পাড়ে একা বসে আছে তাতাই। একটু যেন বেশি গম্ভীর মনে হচ্ছে।

তিতাসের চোখ চলে যাচ্ছে বারবার তাতাইর দিকে। সাধারণ বেশভূষায় অসাধারণ এক আকর্ষণ মেয়েটার মাঝে। ফর্সা, লম্বা, পাতলা ঠোঁট, খাড়া নাক, বড় বড় স্বপ্নভাসা দুটো চোখ আর রেশমের মতন কুচকুচে কালো চুল ঘিরে আছে মুখের চারপাশ পিঠ অবধি। তবে সব ছাপিয়ে প্রাণবন্ত একটা স্বতস্ফ‚র্ততা মেয়েটার অবয়বে যেন খেলে বেড়ায় যা মনে হয় ওর প্রাণ।
কুলসুম বিবির হাত জড়িয়ে কি গভীর মমতায় যেন ওরা চলে যাচ্ছে পুকুরের পথ বেয়ে। ছবিটা বারবার ভেসে উঠছে তিতাসের চোখে আর এক মুগ্ধতায় জড়িয়ে যাচ্ছে ও কেন যে নিজেই জানে না।
তাতাইর পিছনে চলে এসেছে তিতাস কিন্তু তাতাই টের পাচ্ছে না ওর উপস্থিতি।
– কিছু ভাবছেন ?
চমকে উঠে দাঁড়ায় তাতাই। ও আপনি। তিতাসকে দেখে যেন স্বস্তি পায়।
– নাহ তেমন কিছু না।
মুখে না বললেও ও যে আনমনা, প্রাণহারা সেটা পরিষ্কার তিতাসের কাছে। মানুষের কত রকম কষ্ট যন্ত্রণা, একাকী নিজের ভিতর ধারণ করে চলে। কি জানি, তেমনি কি কষ্টের কথা ভাবছে মেয়েটা। থাক ও নিজের মতন। আর কথাও হয়নি তেমন। হয়তো তিতাসের সাথে কথা বলায় আগ্রহী নয়। আপন মনে ভেবে তিতাস চলে যেতে উদ্যত হয়। তখনি তাতাই বলে,
– বসুন না।
– বসবো?
মৃদু হাসির ঝিলিক দেখা যায় ঠোঁটের ফাঁকে। তাতাই আবার বলে,
– বসুন।
– কঠিন কোনো বিষয় ?
– মানে।
– মানে কঠিন কিছু ভাবছিলেন ? তিতাস সরাসরি বলে।
– বহুত জটিল।
– সমস্যা চশমার ভিতর মায়াময় চোখ কুঁচকে তাকায় তিতাস আর মাথা ঝাঁকায়।
হেসে ফেলে প্রশ্ন করে তাতাই,
– আমরা কি এভাবেই শুরু করব?
– শুরু হয়ে গেছে।
– ওহ তাইতো, কি করছিলেন?
– একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম।
– ভাত ঘুম দিচ্ছেন না ?
– আসে না, অভ্যাস নাই। আপনি কি করছিলেন?
– অনেক ভাবনা একসাথে একটা সুতায় বাঁধার চেষ্টা করছিলাম।
– একটা সূতায় বাঁধার চেষ্টা করছিলেন, বাঁধা হলো ?
– না, আপনি এসে গেলেন।
– ও তাইত চলে যাবো? সূতা বাঁধতে থাকবেন একা একা ?
– আপনিও চেষ্টা করে দেখুন না।
– তাহলে সূতার জটটা একটু মেলে ধরুন।
তাতাইর ভাবনা জটাজালের খবর শুনে তিতাস রীতিমত শ্রদ্ধা করতে শুরু করল তাতাইকে। বিদেশে থাকা মেয়ে যেমন হালকা টাইপের মনে হয় তাতো না।
– আই এ্যাম ভেরি গ্ল্যাড টু মিট ইউ তাতাই।
– থ্যাংকস তিতাস, বাট হোয়াট সুড আই ডু নাও?
– ইউ শুড ইনফর্ম জয়।
স্বস্তির একটা শ্বাস ফেলে এতক্ষণে তাতাই।

শীত বিকেলের গাঢ় কমলা রঙ রোদের আলো ছড়িয়ে পড়েছে প্রকৃতিতে। গাছের ছায়াগুলো লম্বা হচ্ছে। আকাশে অনেক রঙের মেঘ। গোলাপি, হলুদ, কমলা, ঘিয়া, সোনালি, সাদা, ছাই, রঙগুলো নিয়ে গুনছে তাতাই ও তিতাস। একসময় তাতাই বলে,
– চলো ভিতরে যাই। ওরা বাড়ির ভিতর সবুজ উঠান ধরে হাঁটছে।
– তাতাই আমাদের ঘরে আসবে একটু, স্যামুয়েল বারান্দা থেকে ডাকে।
– অবশ্যই তাতাই বলে, ওদের রুমের দিকে হাঁটে। তিতাস অন্যদিকে পা বাড়ায়।
– ইয়াং ম্যান ইউ কেন কাম টু স্যামুয়েল বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওদের জন্য অপেক্ষা করছেন।
ওরা দুজনে এসে জিনিয়া স্যামুয়েলের ঘরে ঢুকে। ঘরে একটিমাত্র বিছানা।
– আমি কি কয়েকটা চেয়ার নিয়ে আসব? তাতাই বলে,
– এখানে আসো বিছানায় ডাকেন জিনিয়া। সবাই পাশাপাশি ঘন হয়ে বসে বিছানার উপর।
স্যামুয়েল বলে,
– তাতাই তোমার প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা কীভাবে বলব তা ঠিক করেছি।
– বাহ আমি কি তবে আমার প্রশ্নগুলো আবার করব ?
– প্রশ্নগুলো আমাদের মনে আছে। যদি তোমাদের সময় থাকে তবে আমাদের উত্তরগুলো শুনতে পারো।
– আমাদের সময় আছে বলুন।

টরন্টো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent