শনিবার - মে ১৮ - ২০২৪

যৌনতার প্রতীক আর্টেমিস

বার্লিনের এফকেকে আর্টেমিস সম্পর্কে আমার  পরিস্কার কোন ধারনা ছিল না। ২০১২ সালের আগস্টের কোন এক বিকেলে কফিতে চুমুক দিয়ে আসিফভাই বললেন,  ‘রাতে এমন এক জায়গায় নিয়ে যাব,যা হয়ত তুমি আগে কোথাও দেখেছো। কিন্তু সেসব স্থানের সাথে এর কোন তুলনা চলে না। ‘

- Advertisement -

আমি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাই,  কোথায় নিয়ে যাবেন যা আমি আগে দেখিনি?

আসিফভাই নির্লিপ্ত কন্ঠে বললেন, আর্টেমিস।

এটা আবার কি?

তিনি আমাকে রহস্যের মধ্যে রেখে বললেন,’ যাও এখন নান্নুভাইয়ের সাথে ঘুরে আসো ব্রার্টেনবুর্গ হতে। রাইখস্টাগ দেখে আসো।আমি হাতের কাজগুলো সেরে ফ্রি হয়ে যাব।’

কফিপান শেষ করে আসিফভাইয়ের রেস্টুরেন্ট হতে বের হয়ে ব্রার্টেনবুর্গ চলে যাই। আপাততঃ  আর্টেমিস নিয়ে কৌতূহল দূরে সরিয়ে নান্নুভাইয়ের সাথে ঘুরে ঘুরে দেখি বার্লিন দেয়ালের ধ্বংসাবেশের স্মৃতি চিহ্ন, জার্মান জাতীয় সংসদ রাইখস্টাগ, বার্লিন গেট ও আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো।

বার্লিন খুব পরিচ্ছন্ন, গোছানো শহর। যেদিকে তাকাই মনে হয় সবই যেন ছক কষে তৈরি করা। আধুনিক স্থাপনার সাথে প্রশস্ত সড়কপথগুলোর দু’পাশে সবুজবৃক্ষায়নের অপূর্ব সৌন্দর্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। পার্কিংলটে গাড়ি রেখে আমরা দীর্ঘক্ষন হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াই আলেক্সান্ডার প্লাটজে। কত ভাষাভাষী, বর্ন ও সংস্কৃতির মানুষের দেখা মেলে। প্লাটজের বেশ ক’স্থানে দেখা পাই কেউ গিটার বাজিয়ে গান গাইছে। কোথাও দলবেঁধে বেশ ক’জন তরুন ড্রাম, কীবোর্ড ও গিটার বাজিয়ে গান গেয়ে জমিয়ে দিয়েছে। তাদের ঘিরে অসংখ্য তরুন-তরুনী নেচে চলেছে। আবার কোথাও ভ্রাম্যমান ফুডকার্টের সামনে দীর্ঘ সারি। অনেকেই ওর্যাল্ড টাইম ক্লক এর সামনে বিয়ারের ক্যান নিয়ে বসেছে। মাঝেমধ্যে দু’চারটি জুটির রোমান্সও দৃষ্টি এড়ায় না।

এখানে সেখানে ঘুরে ফিরে রাত ন’টা বেজে যায়। অনেক হাঁটাহাঁটির কারনে কিছুটা ক্লান্তি পেয়ে বসায় নান্নুভাইকে তাড়া দেই।

চলেন ফিরে যাই। আর হাঁটতে পারব না, পা দু’টো ব্যাথা করছে।

পা ব্যাথা করছে নাকি আর্টেমিসে যাবার জন্য অস্থির হয়ে গেলেন?

এতোক্ষন একবারের জন্য মনে পড়েনি আসিফভাই আর্টেমিস নিয়ে যাবে। আসলে আর্টেমিস কি আমার কোন ধারণা নেই। সুযোগ পেয়ে নান্নুভাইকে চেপে ধরি।

ভাই,আর্টেমিস কি?

আমার কথা শুনে হো হো হো হাসিতে নান্নুভাইয়ের গড়িয়ে পড়ার অবস্থা।

আমি কি কোন হাসির কথা বলেছি?

আপনি আর্টেমিস কি জানেন না?

রিয়েলি জানি না। আসিফভাই শুধু বলেছেন আগে এমন জায়গায় আমি নাকি যাইনি। যদি গিয়েও থাকি আর্টেমিসের সাথে কোন তুলনা চলে না!

আচ্ছা। চলেন গাড়িতে আলাপ হবে।

২.

নান্নুভাই খুব চালাক প্রকৃতির মানুষ। আমি তাকে যতোই জিগেস করি,ভাই আর্টেমিস সম্পর্কে বলেন। তিনি একথা সেকথা বলে অন্য প্রসঙ্গে চলে যান। মুশকিল হচ্ছে তিনি সহজে ধরা দেন না। রহস্য করতে পছন্দ করেন।

একটু বিরক্তি নিয়ে বলি, আপনার বাড়ি হোমনা। জানতাম নদীর পাড়ের মানুষ সহজ সরল হয়। আপনি ঠিক রির্ভাস। একটু ক্রিটিক্যালও বটে।

এবার মনে হয় তিনি সদয় হলেন।

ধুর ভাই, আপনার ধৈর্য্য নাই। আসিফ আপনাকে নিয়ে যাবার পরই জেনে যাবেন হ্যাভেন কাকে বলে। আর কিছুক্ষন অপেক্ষা করেন।

এ লোক সাংঘাতিক রহস্যবাজ! তার কাছ থেকে ঝানু টিকটিকিও ( গোয়েন্দা) কোন তথ্যই বের করতে পারবে না। আমি হাল ছেড়ে দেই।

৩.

রাত দশটায় কাজ শেষ করে আসিফভাই ফ্রি হন। এরমাঝে নান্নুভাই ডিনার করে বাসায় চলে যান। যাবার আগে বললেন, ‘আসিফ, তুই রনিভাইকে আর্টেমিসে চোখের আড়াল করিস না। দেখিস বেচারি যেন কোন সুন্দরীর খপ্পড়ে পড়ে হারিয়ে না যায়। ‘

নান্নুভাইয়ের ইঙ্গিতপূর্ণ কথা শুনে আর্টেমিস সম্পর্কে কিছু একটা অান্দাজ করি। মনে মনে বলি, আপনি যা ভেবেছেন তা আমি নই।

৪.

রাত প্রায় এগারোটায় আমরা শার্লটেনবার্গ এর হ্যালেনসি স্ট্রাসের এফকেকে আর্টেমিস পৌঁছাই। পার্কিংলটে গাড়ি রেখে আসিফভাই জনপ্রতি ৮০ ইউরো করে মোট ১৬০ ইউরো দিয়ে দু’টো টিকেট কেটে নেন। আর্চওয়ে দিয়ে ভেতরে প্রবেশের আগে বিশালদেহী দুই বাউন্সার আমাদের সারা দেহ মেটাল ডিক্টেটর দিয়ে চেক করেন।

রিসিপশন কাউন্টার লাগোয়া লকারে মোবাইল,ঘড়ি, ব্রেসলেট, প্যান্টের বেল্ট সবকিছুই রাখতে হলো।শুধু পরিধেয় পোষাকের সাথে মানিব্যাগ এবং ওয়ালেট ব্যতিত কোন ধাতব বস্তু নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ।

লকারকে পিছনে ফেলে সামনে এগুতেই চোখ ধাঁধানো স্বল্প আলোয় দর্শন মেলে মর্ত্যে নেমে আসা স্বর্গের অপ্সরীদের! বার টুলে বসা নগ্ন বক্ষের দুই নারীর নিম্মাঙ্গে একটুকরো প্যান্টি ছাড়া কিছুই নেই। এমন দৃশ্য দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। চোখ নামিয়ে  অন্যদিকে তাকাতে একই দৃশ্য।

ফিসফিসিয়ে জিগেস করি, ভাই এটা কোথায় নিয়ে এলেন।

কেন, তুমি কি ভয় পাচ্ছো?

ভয় না ঠিক, কেমন সংকোচ ও লজ্জা লাগছে।

হা হা হা করে হেসে উঠেন আসিফভাই।

তার হাসির শব্দে কেউ কেউ ঘুরে আমাদের দিকে তাকায়।

এটা হচ্ছে জার্মানীর বৃহত্তম প্রাইভেট সৌনা ক্লাব বা ব্রোথেল।তুমি তো জানো এখানে প্রস্টিটিউশন লিগ্যাল।মানুষ এখানে শুধু যৌনতা উপভোগ করতে আসে না । এদের অনেক রকম সার্ভিস আছে। সেই সব সার্ভিস নিতে আসে। হোটেল, ক্লাব, বার,পাব ড্যান্স ফ্লোর , সুইমিং,স্পা, সৌনা, স্ট্রিপ বার, রেস্টুরেন্ট, ইরোটিক সিনেমার জন্য দু’টো হল ছাড়াও আছে সুন্দরী নারী। বিশাল এক ছাদের নীচে থাকছে বিনোদন ও যৌনতার সমস্ত আয়োজন। অর্থবান,  বিত্তশালীরা মুলতঃ এদের কাস্টমার। এন্ট্রি ফি আশি ইউরো খরচ করে তুমি সারাদিন কাটাতে পারো।কিন্ত যখন যা সার্ভিস নিবে তার জন্য ইউ হ্যাভ টু পে।

হাঁটতে হাঁটতে আমরা চলে যাই পুলসাইডে। আলো আধারিতে পেতে রাখা চেয়ারে বসে পড়ি। এদিকটায় স্মোকিং জোন হওয়ায় আমার জন্য ভাল হলো। অনেকক্ষন যাবত সিগারেট খাওয়া হচ্ছিল না। লকারে প্যাকেট,লাইটার রেখে আসায় আসিফভাই বারের পাশে তাবাক স্টোর থেকে এক প্যাকেট মালবোরো নিয়ে এলেন। একজন এসে দু’মগ বিয়ার দিয়ে গেল।

ফেনায়িত বিয়ারের মগে চুমুক দিয়ে আসিফভাইকে জিগেস করি, এরকম ব্রোথেল কি আরো আছে?

থাকবে না কেন?  ২০০১ সালে জার্মান সরকার আইন করে প্রস্টিটিউশনকে লিগ্যালাইজ করেছে। ১৮ বছরের যে কোন নারী স্বেচ্ছায় প্রফেশন হিসেবে এটা গ্রহন করার অধিকার রাখে। এরা অন্য ৮/১০ টা জবের মতন এইটাকে জব হিসেবেই দেখে। হ্যা,এখানে কেউ কাউকে ফোর্স করতে পারবে না। সেক্স ওয়ার্কারদের সাথে খারাপ আচরণ করলে বিশাল অংকের মাশুল গুনতে হবে।

সিগারেটের ধোয়া ছেড়ে তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে আবার প্রসঙ্গে ফিরে আসেন।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি এ পেশায় আসতে চায় তাকে অবশ্যই অনেক ডকুমেন্টস জমা দিতে হয়। যতোটুকু মনে পড়ে, এ নারীদের জন্ম সনদ, ন্যাশনাল আইডি, মেডিক্যাল কার্ড, কোন রোগ বালাই যে নেই তার জন্য হেলথ সার্টিফিকেট, হেলথ ইন্সুইরেন্সসহ স্বেচ্ছায় পেশাগ্রহনের সম্মতিপত্র জমা দিতে হয়। পেশাটি খুব ঝুঁকিপূর্ন। এ আদিম ব্যবসাকে কেন্দ্র করে যে হিউম্যান ট্রাফিকিং হয়, তা রোধে র‍্যানডম চেকিংয়ে আসে পুলিশ। রেগুলেটরি কমিশন আছে। এরা ব্রোথেলগুলো হেলদি ও হাইজেনিক এনভায়রনমেন্ট বজায় আছে কিনা তা নিয়মিত পরীক্ষা করে।

বিয়ার শেষ হলে আমরা উঠে পড়ি।

চলো পুরো আর্টেমিস ঘুরে দেখাবো।

আমি আসিফভাইয়ের পিছু পিছু হাঁটতে থাকি।

মৃদু শব্দে ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক ভেসে আসে। আগত অনেকেই সেই মিউজিকের সাথে তালে তালে নেচে চলেছে।  তাদের পাশ কাটিয়ে আমরা একটি ছোট সিনেমা হলে প্রবেশ করি। নামমাত্র মুল্যে টিকেট নিতে হয়। সর্বোচ্চ ২৫ আসনের হলে শুধুমাত্র ইরোটিক সিনেমা, হার্ড সেক্স ভিডিও প্রদর্শিত হয়। আমরা যখন প্রবেশ করি তখন মনে হয় ২ থেকে ৩ জন বসে ছিল। তখনো ছবি শুরু হয়নি।

হলের দেয়ালজুড়ে বেশকিছু পেইন্টিং। সবই নারী- পুরুষের নগ্ন দেহের এবং রতিকলার।

ছবি শুরুর আগে হলের বাতি নিভিয়ে দেয়া হয়।পর্দাজুড়ে তখন নর নারীর আদিম যৌনতা। দুই মিনিট না যেতেই আমরা বের হয়ে যাই। আসলে আমাদের দেখার উদ্দেশ্য ছিল কি ধরনের ইরোটিক সিনেমা চলে তাই দেখা।

সৌনা, স্পা রুমগুলো পাশাপাশি। সামনে অপ্সরীরা দাঁড়িয়ে গ্রাহকদের দৃষ্টি আর্কষনের চেস্টা করে। এদের পাশ কাটিয়ে হাম্মামখানা পিছনে ফেলে সামনে এগুতে চোখে পড়ে রেস্টুরেন্ট। সম্ভবত টার্কিশ ফুডস ও গ্রীক ফুডসের দু’টো পাশাপাশি রেস্টুরেন্ট।

আসিফভাই একটা বারে তার পরিচিত বারটেন্ডারের সাথে কথা বলেন ফ্লুয়েন্ট ডয়েচ ভাষায়। আমি হা শুনি, আগামাথা কিছুই বুঝি না। বিদায় নেয়ার সময় যখন  আউফভিডারজেনজি বললেন, সেটাই বুঝতে পারি। ইংরেজীতে তরজমা করলে যার অর্থ গুডবাই।

স্ট্রিপ বারে ঢুঁ মারতে চোখে পড়ে বেশ ক’জন বয়স্ক লোক বসে দেখছেন নগ্ন নারীদের নানান শারীরিক কসরত।

বুঝলে এই বুড়োদের বিনোদন নগ্ন নারীদের শরীর দেখা। আল্লাহ জানেন এরা কি আনন্দ পায়!  তুমি পৃথিবীর যেকোন স্ট্রিপ ক্লাবে যাবে, দেখবে উপস্থিত লোকদের মধ্যে সিক্সটি পার্সেন্ট হচ্ছে পঞ্চাশোর্ধ বুড়ো।

তাই নাকি, ভেরি ইন্টারেস্টিং!

হুম। পারভাটেড বুড়োদের বিনোদন হচ্ছে নারীর শরীর দেখা।

স্ট্রিপ বার থেকে বের হয়ে আমরা এগিয়ে যাই ড্যান্স ফ্লোরের দিকে। পথে দেখা হয় আসিফভাইয়ের পূর্ব পরিচিত জার্মান সেক্স ওয়ার্কার হানা’র সাথে।হানাও আমাদের সাথে ড্যান্স ফ্লোরে এলো।

আমরা ড্যান্স ফ্লোরে ঢুকে কাউন্টার হতে বিয়ার নেই।  আসিফভাই ও হানা বিয়ার অর্ধেক খেয়ে ফ্লোরে নাচতে নেমে যায়। টুল বারে বসে মিউজিকের শব্দে আমার রীতিমতন কানে তালা লাগার জোগাড় হল।

হানা যেহেতু আর্টেমিসের স্টাফ, তার মোবাইল ব্যবহারে বিধি নিষেধ নেই। অনুরোধ জানালে সে আমার দু’টো ছবি তুলে সাথে সাথে আসিফভাইকে মেইলে করে। যা পরবর্তীতে আমি পেয়েছিলাম।

আমরা যখন হানার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরে আসি তখন দূরের কোন র্গীজায় ঘন্টা বেজে উঠে জানান দেয় রাত দু’টো বাজে।

৫.

এফকেকে আর্টেমিস চারতলা একটি ভবন। এর ভেতর ক্লাব,বার,রেস্টুরেন্ট, সৌনা, স্পা, সিনেমা হল,ড্যান্স ফ্লোর,সুইমিং পুল, স্ট্রিপবার ছাড়াও  ৭০ টি আবাসিক কক্ষ রয়েছে। সকাল ১১টা হতে ভোর রাত পর্যন্ত নানান বয়সী, নানান ভাষার অর্থবানদের আগমন ঘটে। জার্মান নারী ছাড়াও সেক্স ওয়ার্কাদের বেশীরভাগই পুর্ব ইউরোপের অধিবাসী। তুর্কি ব্যবসায়ী হাকি সিমসাকি’র মালিকানাধীন আর্টেমিস ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে।গ্রীক পুরাণের দেবী যৌনতার প্রতীক আর্টেমিসের নামানুসারে জার্মানের বৃহত্তম পতিতালয়টির নামকরণ করা হয়। রবি ও সোমবার দু’দিন আর্টেমিসে প্রবেশ ফি এবং অন্যান্য সার্ভিস ফি ফিফটি পার্সেন্ট অফ থাকে। ২০০৬ সালে জার্মানে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে আর্টেমিস দারুন জমজমাট হয়ে উঠে।

 

মন্ট্রিয়ল, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent