শনিবার - এপ্রিল ২৭ - ২০২৪

ফেবু সমাচার

ছবিজেন পলাশ

ফেসবুকে আসলে কতরকম যে লাইভ / রেকর্ডকৃত ভিডিও প্রোগ্রাম দেখি তার কোন ইয়োত্তা নাই। একদিকে সুলাইমান সুখন আবার অন্য দিকে ব্যারিস্টার সুমন। একদিকে, মুন্নি’স মিরর, আবার অন্য দিকে খাদিজাতুল কোবরা সোনিয়া।
আবার কিছু নালায়েক বেত্তোমিজ বান্দাও আছেন। তাদের মুখ একেবারেই পাস করা। এর মধ্যে স্বনামধন্য হচ্ছেন শিফাতুল্লা ওরোফে সেফুদা, আর হাল আমলে রোদ্দুর রায়ের নামও শোনা যাচ্ছে। পরের জন কারনে অকারনে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথকে টার্গেট করে কথা বলেন। কবিগুরুকে আক্রমণ করার কারন কি তা বোধগম্য নয়। ইদানীংকালে একটি চল হয়েছে, বিখ্যাত ব্যক্তিদের আক্রমণ করে লেখা বা কথা বলা। সেফুদা এবং রোদ্দুর রায় বিখ্যাত বা কুখ্যাত হবার জন্য অশ্লীলতারকে বেছে নিয়েছেন। এর কারন হচ্ছে,বেশ কিছু মানুষ অশ্লীলতাকেও উপভোগ করে। এদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই জন্য সেফুদা কিংবা রোদ্দুর রায়দের ভিউয়ারের সংখ্যা খুব একটা কম নয়।
ইদানীং কালে অনেক ডাক্তার লাইভে/ রেকর্ডকৃত ভিডিওতে এসে নানা রকম উপদেশও দিচ্ছেন। রোগ,ব্যাধি থেকে শুরু করে চিকন, মোটা হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের উপদেশ মাগনা পাওয়া যাচ্ছে এদের কাছ থেকে। কেউ কেউ স্লিম এবং স্বাস্থ্যবান থাকার জন্য নানা রকম কায়দা, কসরতও বাতলে দিচ্ছেন। এদের মধ্যে ডাক্তার জাহাঙ্গীর বেশ নাম করেছেন। তার অসংখ্য ভিউয়ার। আরো আছেন ডাক্তার সাকলাইন। অল্প বয়সী, মৃদু হেসে হেসে কথা বলেন। একেক দিন একেক টপিক নিয়ে আলোচনা করেন। আমেরিকাতে আছেন ডাক্তার ফেরদৌস। ইংল্যান্ডে আছেন ডাঃ তাসনিম জারা। ডাঃ তাসনিম অল্প বয়সেই বেশ নাম করেছেন। প্রচুর ভিউয়ার, প্রচুর লাইক।
কিছু ক্ষুদ্ধ লোক আবার লাইভে এসে রাজনৈতিক বক্তব্যও দেন। এদের বেশির ভাগ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে লাইভ প্রোগ্রাম করেন।
ধর্মীয় লাইভ প্রোগ্রামও আছে। আজহারী এর মধ্যে দেশে বিদেশে বেশ নাম কামিয়েছেন। অন্যান্যরা ওয়াজ মহফিলে দর্শক,শ্রোতাদের উপস্থিতিতে বক্তব্য দেন। কিন্তু আজহারী সাহেব ওয়াজ মহফিল ছাড়াও লাইভে এসে বক্তব্য দেন। ইনারও অসংখ্য ভিউয়ার, প্রচুর লাইক, love-ও ব্যাপক।
নানারকম স্পিরিচুয়াল গুরুদেরকেও মাঝে মধ্যে লাইভে অথবা ধারনকৃত ভিডিওতে দেখা যায়। সাদুগুরু, শ্রী শ্রী রবি শংকর কথার যাদু দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ অনুসারী তৈরি করেছেন। এদের গুন হচ্ছে সুন্দর করে কথা বলতে জানেন। এদের বক্তব্য মানুষ মুগ্ধ হয়ে শোনেন। এদের বক্তব্যের মধ্যে থাকে স্পিরিচুয়ালিটির মাধ্যমে কিভাবে মুক্তি লাভ করা যায় তার উপায়।
ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না এমন ব্যক্তিরাও ইদানীং তাদের বক্তব্য নিয়ে হাজির হচ্ছেন। তাদের বক্তব্যে যুক্তি দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা থাকে ঈশ্বর, ধর্ম, এই সমস্ত কিছুই অসাড়। মানুষের বানানো কল্প কাহিনি,বানোয়াট গল্প।
আমি তো খুব ধন্ধে পড়ে যাই। এত প্রোগ্রামের মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখি! ব্যস্ত জীবনে কতটুকুই বা দেখার বা শোনার সময় থাকে। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। জীবন সংগ্রাম চলমান।থেমে নেই। যান্ত্রিক সভ্যতায় সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে।
এই এত সব লাইভ, ভিডিও প্রোগ্রামগুলির মধ্যে বিনোদন আছে, আছে শিক্ষামূলক উপদেশ, আছে অনেক অজানা বিষয় জানানোর আকাঙ্ক্ষা,আছে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক আলোচনা,আছে জীবন দর্শন, গভীর জ্ঞান,জানা অজানা তথ্যের সম্ভার।
এই যে অবারিত দ্বার এর উপকার নিশ্চয়ই আছে। সেই সাথে আছে অপকারিতাও। এই অবারিত দ্বার দিয়ে যাদের যাতায়াত তারা নিশ্চয়ই অশিক্ষিতের মত জ্ঞানহীন মূর্খ থাকতে পারে না। তাদের নিশ্চয়ই কোন না কোন অর্জন ঘটে। তবে সব কিছু গ্রহন করা যায় না। এখানে বর্জনেরও ব্যাপার আছে। কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ সেই জ্ঞানটুকু অন্তত রাখতে হবে,থাকতে হবে।
যার এই পার্থক্যটুকু বুঝার সক্ষমতা আছে সে-ই কেবল এই অবারিত জগত থেকে ভালো কিছু গ্রহন করতে পারে। তানাহলে যা কিছু গ্রহন করা হবে তার সবই ভালোর জন্য হবে না, সংগে মন্দ কিছুও চলে আসবে। যা নিজের এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent