রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

এশিয়ার বিখ্যাত মানসিক হাসপাতাল

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিকল্পণা শাখায় যখন কাজ করতাম তখন কয়েকবার পাবনাতে অফিসের কাজে যাওয়ার সুযোগ আমার হয়েছে। সর্বশেষ একটি কর্মশালা পরিচালনা করার জন্য একজন সহকারী পরিচালকের সাথে আমাকেও পাঠানো হয় পাবনায়। অফিসের কাজের চাপ বেশী থাকায় একদিন পর আমাকে পাঠানো হয়। আমি গিয়ে জানতে পারি আগের দিন যারা এসেছে তারা সড়ক দূর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। মনে মনে ডাইরেক্টর স্যারকে ধন্যবাদ জানালাম আমাকে একদিন বিলম্বে ছাড়ার কারণে।
দূর্ঘটনা কবলিত আমার সহকর্মীদের আঘাত গুরুতর ছিলোনা তাই সময়মতো আমরা আমাদের কর্মশালা শুরু করতে পেরেছিলাম। যেদিন শেষ হলো আমাদের হাতে তখনো অনেক সময় ছিলো তাই সিভিল সার্জন অফিস থেকে নেয়া হলো পাবনা মানষিক হাসপাতালে ঘুরে দেখানোর জন্য। আমরা ৩/৪ জনের একটি দল সেখানে গেলাম।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল সম্পর্কে অনেক কথাই শুনতাম ছোটবেলায়। ধারনা হয়েছিলো যে এটি এশিয়ার বিখ্যাত মানসিক হাসপাতাল। এটি হওয়ার কথা ছিলো পাটনায় কিন্ত্ত ভুলক্রমে PATNA এর স্থলে PABNA হওয়ার কারণে তা পাবনায় হয়। এ ধরনের গল্প শুনে আমরা বিস্মিত হতাম। আমাদের কারো মধ্যে পাগলামি দেখলে অথবা অনেক সময় কথার ছলে বলতাম -ওকে পাবনা পাঠাতে হবে। যাহোক এই পাবনা অনেকের জীবনের গতিধারা ফিরিয়ে দিয়েছে।
আমরা সে দিন দুপুরে হাসপাতাল এলাকায় প্রবেশ করলাম। হাসপাতালের সুপার আমাদের সাথেই ছিলেন। অনেক বড় জায়গা প্রাচীর ঘেরা। বিভিন্ন ওয়ার্ড আছে। এলাকার ভেতরে একটি ছোট সিনেমা হলও আছে। পরিবেশ নিরিবিলি। বিভিন্ন ওয়ার্ড বা সেলে নিয়ে যাওয়া হলো।একটি সেলের কাছে গিয়ে দেখি তালা দেয়া। ভিতরে রোগীরা। জানানো হলো এ সেলটিতে Violent patient রা আছে। এরা Violent তাই বন্দী এরা। আমরা যখন সেখানে গেলাম। কয়েকজন রোগী এসে ভিতর থেকে আমাদেরকে দেখছেন।
সুপার যখন জানলেন আমি ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে ডাক্তার হয়েছি তখন তিনি আমাকে জানালেন যে আমাদের মেডিকেল থেকে পাশ করা একজন ডাক্তারও আছেন এই ভায়োলেন্ট পেশেন্টদের দলে। বললাম -তাকে কি দেখা যাবে? তিনি সেলের ধারে নিয়ে গেলেন। ভিতর থেকে রোগী এসে সামনে দাড়ালেন। আরে ইনিতো একজন বড় ভাই আমার পরিচিত। তারা অনেকগুলি ভাই। একজন আমার সাথেও পড়তো। বললাম-আপনি এখানে কেন? – আমার ভায়েরা সবাই মিলে আমাকে এখানে রেখে গেছে। আমি ভালো মানুষ। কি বলবো? চুপ করে তার কথা শুনলাম। নিশ্চয় কোন কারনে তারা তাকে এখানে রেখে গেছে।
আজ অনেকদিন পর এসব মনে পড়ে। জানতে ইচ্ছা করে মলিন মুখের হতাশাগ্রস্থ সেই ডাক্তার বড় ভাই এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন। দিনরাতের এই প্রবাহের কাছে আমরা সবাইতো কম-বেশী বন্দী কেউ গারদের অন্তরালে কেউবা জীবনের কাছে।

- Advertisement -

ইনুভিক, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent