রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

আমাদের প্রাইম মিনিস্টার!

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো দিওয়ালি উদযাপন করতে ব্রাম্পটনে ইন্ডিয়াস টেষ্টস রেঁস্তোরায় জিলিবি কিনতে গেছেন তার মন্ত্রী পরিষদ সদস্য ও এম.পিদের সাথে নিয়ে। তিনি চমক দেয়া পছন্দ করেন নিজ দায়িত্ব ও দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে কর্তব্যবোধকে জলাঞ্জলি দিয়ে। তিনি বার বার ভুলকরে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন, সেটি আমাদের অভিপ্রেত নয়। আজকাল জিলিবি বেবী নামে একটি গান কানাডায় ভাইরাল হয়েছে, আমাদের নেতাও সেই গানে খুব প্রভাবিত হয়েছেন হয়ত, ভাল কথা হতেই পারেন, ব্যক্তিগত অনুভব বা অনুরাগের প্রশ্ন। তবে ওনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে তিনি কানাডাবাসী সবার প্রধানমন্ত্রী, ব্রাম্পটনে দিওয়ালিতে জিলিবি বিতরণ করলে সেখানকার ভোট ব্যাঙ্ক অবশ্যই ওনার দলের প্রতি অনুগত থাকবে কিন্তু দেশের বাকী সব দিওয়ালি উদযাপনকারীকে তিনি বঞ্চিত করলেন। একই ভাবে তিনি যদি ঈদের দিনে প্যারামাউন্ট ফাইন ফুডসে গিয়ে সোয়ারমা কিনে বিতরণ করেন, একই প্রশ্ন আসতে পারে।পরিবর্তে তিনি দিওয়ালির সময় দেশবাসীকে বাণী পাঠিয়ে দিয়ে যদি সবাইকে বলেন “আমাদের সবার জীবনে জ্ঞানের আলো জ্বলুক ও আমাদের জীবন থেকে সকল অশুভ দূর হউক” তাহলে দেশবাসী অনুপ্রাণিত হবে। ঈদেও তিনি বাণী প্রেরনের মাঝেই দেশবাসীকে খুশী বিতরণ করতে পারেন। আমরা এমন প্রথাই দেখে আসছি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিকট থেকে। আরো উদার হলে নিজ অফিসেই কিছু মিষ্টি রেখে যারা ওনার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসবেন তাদের আপ্যায়ন করতে পারতেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী জিলিবি কিনে বিতরণ করার সময় কোথায় পান, দেশ সেবার কাজে ব্যাস্ত থাকলে?
উপরোক্ত প্রসঙ্গটি ইদানিং দেশবাসীর কাছে এতটা প্রকট হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বহীন কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে, জনমনে প্রশ্ন জেগেছে তিনি নিজ কর্তব্য কতটা গুরুত্বদিয়ে সমাধা করেন? দেশবাসী মনে করে তিনি নিজে কানাডার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে প্রথম আদিবাসীদের জাতীয় পুনর্মিলন দিবসে উপস্থিত না থেকে অবসর কাটাতে কানাডার পশ্চিম উপকূল টোফিনোতে উড়ে যাওয়া অনৈতিক ছিল, এবং কর্তব্যে অবহেলার জন্য আদিবাসীগণ সমালোচনায় মুখর হয়েছেন অনেকে।
ট্রুডোর আদিবাসীদের জাতিয়ভাবে প্রথম পুনর্মিলন দিবসে টোফিনোতে ছুটি কাটানো দিবস টিকে উপহাস।
কানাডার জনগণ জাস্টিন ট্রুডোকে একটি কঠিন নির্বাচনী প্রচারণার পরিশ্রান্তির পর কিছুটা সময় অবসরে গেলে নিশ্চিত অভিমান করবে না। এবং তার পরিবারের সাথে কিছু দিন অবসরে থাকার ইচ্ছার প্রতি সবার সহানুভূতি থাকারই কথা।
কিন্তু প্রথমবারের মতো কানাডার আদিবাসীদের জাতীয় পুনর্মিলন দিবসে প্রধান মন্ত্রীর অনুপস্থিতি এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী টোফিনোতে অবকাশের জন্য ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে উড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তার কর্তব্যপরায়ণতা ও দায়িত্ববোধকে অতি সরল ভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এখানে তিনি মানবতাবোধকে হেয় প্রতিপন্ন করেছিলেন, জনগণ এটিকে একটি মর্মান্তিক ত্রুটি বলে বিবেচনা করেছে। সর্বোপরি, ট্রুডো সরকারই বিগত জুলাই মাসে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে (সর্বদলীয় সমর্থন সহ) আবাসিক বিদ্যালয়ের উত্তরাধিকার স্মরণে ৩০ সেপ্টেম্বরকে একটি জাতীয় দিবসে পরিণত করে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বস্তুত প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিজ ঘোষিত জাতীয় দিবসকে মান্যতা দিলেন না।
আমাদের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের অবশ্যই নিজ কর্তব্যপরায়ণতার দ্বারা উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করা উচিত। পরিবর্তে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্বোধনী জাতীয় দিবসে ব্যক্তিগত ছুটি বা ভ্রমনে যেতে দেখে কানাডাবাসী অকপটে বিরক্তি প্রকাশ করেছে।
দেশবাসীর কথা ভাববেন না, শুনবেন না বা ট্রুডো রাজনৈতিক বিরোধীদের কথা আমলে নেবেন না ফলে কেউ যদি প্রধানমন্ত্রীকে ভণ্ড, অজ্ঞান ও স্বার্থপর বলে বসে তাতে সকল জনগণের সমর্থন বা সম্মান তিনি হারাবেন, যেটি আমাদের কাউর জন্য সুখকর নয়।
প্রতিক্রিয়ায় আদিবাসী নেতাগণ গভীরভাবে হতাশার কথা জানিয়েছেন, অতীতের ভুলের পরে নিরাময় সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর সূক্ষ্ম বাণী এবং প্রথম স্থানে জাতীয় পুনর্মিলন দিবস প্রতিষ্ঠার জন্য তার সমর্থন আজ তার কর্মের সাথে মেলে না বলে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আদিবাসীগণ প্রধান মন্ত্রীর অফিসের খোঁড়া ব্যাখ্যা দ্বারা প্রভাবিত হননি এবং তাদের যুক্তি গ্রাহ্য করেনি , যে ট্রুডো ফ্লাইটে ভ্রমনে যাওয়ার পথে পশ্চিমে আবাসিক স্কুলে বেঁচে যাওয়াদের সাথে ফোনে কথা বলে সময় কাটিয়েছিলেন বা তিনি জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে অটোয়াতে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। একে ধোকা দেয়ার সামিল বলে আদিবাসীগণ মনে করছে।
ব্রিটিশ কলাম্বিয়া আদিবাসী ইউনিয়নের প্রধানদের সভাপতি গ্র্যান্ড চিফ স্টুয়ার্ট ফিলিপ বলেছেন, ট্রুডো যেভাবে আমাদের প্রথম জাতীয় দিবস কাটাতে আমোদ ভ্রমন বেছে নিয়েছিলেন তা ছিল আবাসিক স্কুলে বেঁচে যাওয়া শিক্ষার্থীদের “মুখে চড়”। এবং ফার্স্ট নেশন যেটি প্রথম কামলুপস, ব্রিটিশ কলাম্বিয়াতে একটি প্রাক্তন আবাসিক স্কুলের কাছে শিশুদের অচিহ্নিত কবর আবিষ্কার করেছিল, তারা বলেছে যে বৃহস্পতিবার সেখানে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দুটি লিখিত আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল। ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপে ভ্রমণে যেতে তিনি কার্যত কামলুপসের উপর দিয়ে উড়ে গেছেন কিন্তু স্পষ্টতই সেখানে থামতে কর্তব্য মনে করেননি।
প্রকৃতপক্ষে, প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হলে টোফিনোতেই অর্থপূর্ণ কিছু করতে পারতেন। নু-চাহ-নুলথ ট্রাইবাল কাউন্সিলের সদস্যরা জাতীয় দিবস উপলক্ষে টোফিনোর নিকটেই পদচারণা করেছিলেন এবং তাদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মারিয়া চার্লসন বলেছিলেন, তারা হতবাক হয়েছিলেন যে এমনকি তারা জানতেন না প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই এলাকায় থাকবেন। ” প্রথমে কানাডাবাসীকে বলা হয়েছে, আসুন একসাথে এগিয়ে যাওয়ার উপায় খুঁজে বের করি,” তিনি বলেছিলেন। “ আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় নেতাই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পছন্দ করেননি, একসাথে পদচারণ দূরের কথা। এটি হৃদয়বিদারক, সত্যি কথা বলতে।”
এর পর আর কি বলার থাকে? প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়া, সংশোধনের উপায় খুঁজে বের করার প্রয়াস হতে পারে কী?
কিন্তু কার্যকলাপ সর্বদা উচ্চকন্ঠে উচ্চারণের চেয়ে জোরে কথা বলে আমরা মনেকরি এবং ক্ষতি স্পষ্টতই হয়েছে আমাদের হৃদয়ে। সত্যের পথে ত্রুটিহীন পদক্ষেপ না দিয়ে এখন মেরামত বা পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টা কতটা ভাল কাজ হবে বা সকলের হৃদয় জয় করা যাবে কী?
শুধু ভোট ব্যাঙ্কের জন্য চটকদার অভিনব আবির্ভাব, আরও কেলেঙ্কারি, আরও দুর্নীতি, আরো কভার আপ বা ক্ষমা প্রার্থনা, জাস্টিন ট্রুডো এবং লিবারেলদের কাছ থেকে কানাডিয়ানরা এটাই আশা করতে থাকবে! আদিবাসী জনগণ দেশে ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে রয়েছে, ভোট ব্যাঙ্কের প্রক্রিয়ায় হার-জিত নির্ণয় দিতে উল্লেখযোগ্য নয়, তাই দীপাবলিতে জিলিবি বিতরণ আদিবাসীদের জাতিয় দিবসের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ । জাস্টিন ট্রুডো যদি তার পিতার পদাঙ্কও অনুস্মরণ করতেন লক্ষণীয় কিছু করতে পারতেন তার তিনবারের প্রধান মন্ত্রীত্বে। একটি উদাহরণ যথেষ্ট হতে পারে, পিয়ারে ট্রুডো এ্যাম্প্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্সের এমন একটি সুন্দর কাঠামো তৈরি করে দিয়ে গেছেন ফলে সকল কর্মজীবী সুবিধা ভোগ করছেন, শুধু তাই নয় এ্যাম্প্লয়মেন্ট ইন্সুরেন্সের তহবিলে এখন মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার জমা রয়েছে। তাছাড়া পিয়ারে ট্রুডো সব সময় একটি কথা বলতেন যে “আমি সান্তাক্লজ নই, নিজের থেকে আপনাদের কিছু দেবার নাই, আপনাদের টাকা দিয়েই তার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনাদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো।” পরিবর্তে জাস্টিন ট্রুডো বিলিয়ন ডলার ঋণের বোঁঝা আমাদের প্রজন্মদের উপর চাপিয়ে যাচ্ছেন, একবার ওনি এমনও মন্তব্য করেছিলেন, “বাজেটের ভারসাম্য নাকি কানাডায় আপনা থেকে ঠিক হয়, অর্থাৎ ওনার কিছু করার নেই”।
অটোয়াতে এই অনৈতিক সরকারের অবসান এবং নিরাপদ জবাবদিহির জন্য বিকল্প খুঁজতে হবে দেশবাসীকে।

স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent