রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

মায়ার বন্ধন


এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে কেউ যেতে চায় না। পৃথিবী মানুষকে তার মায়ার বন্ধনে বেধে ফেলে। তাই একজন মানুষের পক্ষে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ছেড়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর একটি অনুভূতি।
একটি জায়গায় দীর্ঘদিন থাকলে সেই জায়গার প্রতি যেমন একটা মায়া জন্মে যায়, পৃথিবীটাও ঠিক তেমনি।
জন্ম মৃত্যুর মাঝে যে সময়ের ব্যপ্তি, যে ট্রানজিশন, সেই সময়টাতে মানুষ নানারকম সম্পর্ক গড়ে তোলে। বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন, বাবা-মা, ভাই-বোন,প্রিয়জন; এই সব সম্পর্কগুলিও মাকড়সার জালের মতো মায়ার জাল বুনে চলে। এই মায়ার জাল ছিন্ন করে চলে যাওয়াটা খুব কষ্টের।
তাই কোন মানুষকে যখন ডাক্তার বলেন , সে খুব দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, তার আয়ূ স্বল্প সময়ের মধ্যে আবদ্ধ তখন সেই মানুষটির অনুভূতি কি হয় তা একমাত্র ওই মানুষটির পক্ষেই বোঝা সম্ভব। চর্তুদিকের মানুষ তার সামনেই স্বাভাবিক জীবন যাপন করে যাবে। তারা হয়ত মানুষটির প্রতি সমবেদনা, সহানুভূতি দেখাবে। হয়ত ব্যাথিতও হবে কিন্তু সেই মানুষটি যে একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেটি তারা কখনোই বুঝবে না। ক্ষনিকের সেই অতিথীর জন্য কারো জীবনের আনন্দ, উৎসব থেমে থাকে না। সবাই সবার মতো করেই জীবনকে বয়ে চলে স্বাভাবিক গতিতে। কারো কোন কিছুই থেমে থাকে না। নিষ্ঠুর শোনালেও, এটাই কঠিন সত্য।
যেই মানুষটি জানে কিছু দিন পর তাকে চলে যেতে হবে সেই মানুষটির কাছে প্রতিটি মানুষের আচরন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্যরকম ভাবে ধরা দেয় । কারন, তার কাছে হঠাৎ করেই চলমান সময়টা কোথায় যেন ছন্দ হারিয়ে থেমে গেছে। অন্য সবার সময় স্বাভাবিক ভাবে চলছে। তার ক্ষেত্রেই শুধু ব্যতিক্রম। কারন, সে আগের মতো হাসতে পারে না, আগের মতো ভাবতে পারে না, আগের মতো কাদতেও পারে না। তার কোন কিছুই আর আগের মতো থাকে না। সে এক গতিহীন নিশ্চল পাথরের মতো থমকে যায়।
তার পারিপার্শ্বিক সবাই এই পৃথিবীতে থেকে যাবে, তাকেই চলে যেতে হবে। সবাই জীবনের আনন্দ উৎসবে মেতে থাকবে। সে আর সেই সব আনন্দ উৎসবের অংশ থাকবে না। তার প্রিয়জনেরা সবাই থেকে যাচ্ছে। তাকে একাকি সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে। মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের এই ভাবনাগুলি খুবই কষ্টকর।
কারো জীবনে যেন এমন সময় না আসে। সবাই যেন সুস্থ্য স্বাভাবিক সুন্দরতম জীবনের নির্যসটুকু নিয়ে চলে যেতে পারে, সাবার জন্য এমন শুভকামনা ব্যক্ত করি।

স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent