রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

বৃষ্টিভেজা আকাশ দেখবো না

ছবি মাইকেল সিডোসফকি

ঘুম আমি পছন্দ করি না। এক ঘণ্টা পর পর নিজে চা খাই। রাতে পানি দিয়ে চোখ ধৌত করি। ঘুমের কোলে ঢলে পড়লে স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়ে যায়। স্বপ্ন দেখি বলেই বেঁচে আছি। মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবি প্রতিটি লোক বসে বসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। জেগে থাকা মানুষগুলোর মুখের সাথে হাসিনার ঘুমঘুম মুখটির কথা চিন্তা করি। সব মুখের পাশাপাশি হাসিনার মুখটাকে টেনে নিয়ে আসি। জলপাইয়ের মতো একজোড়া চোখ ছিল। কিছুতেই সেই চোখ খুলে রাখতে পারতো না। চোখের পাতায় পাতায় ছিল মিতালী। সবসময় একটার সাথে আরেকটা মিলে থাকতো। ক্লাসের ঊনচল্লিশ জন ছাত্রছাত্রী ওরা সবাই চোখ-কান খাড়া করে আমার লেকচার শুনতো। শুধু মাত্র হাসিনা বেঞ্চের উপর বসে বসে ঝিমাতো। প্রথম দিন ভেবেছিলাম রাতে হয়তো ঘুমোতে পারেনি। হয়তো বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলো। কিন্তু পরে বুঝলাম এটা ওর অভ্যেস। দিনের বেশির ভাগ সময় সে বসে ঘুমোয়। রাতের বেলায় মরা বিড়াল। কি বিচিত্র অভ্যাস।

আমারও কি বিচিত্র ভাগ্য। জগতে ভালো লাগার কতো কি ছিলো। হাসিনার ঘুমঘুম চেহারাটাই আমার কাছে প্রিয় হয়ে দাঁড়ালো। মনে হলো ওর ঘুম দেখার জন্য আমিও একটা তাজমহল বানিয়ে ফেলবো। কি মায়াবী তার তন্দ্রায় ভেজা চোখ। এ পৃথিবীর কারোর সাথে যার মিল হয় না। একদিন আমি ক্লাস নিচ্ছি হঠাৎ বৃষ্টি এলো। ভীষণ বৃষ্টি। আমার স্বপ্নের বুড়িগঙ্গা মধুমতী আকাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। চারিদিকে অন্ধকার। তারই ভেতর টাপুর-টুপুর শব্দ। মনে হচ্ছিল নোঙ্গর ছিঁড়ে স্বর্গটি মাথার উপর নেমে এসেছে। চিরকালের মতো সেদিনও আমার ক্লাসে পিনপতন নীরবতা। চিরকালের মতো হাসিনারও ঘুমের সাথে একতা। সেদিন পরণে তার নীল রঙ্গের শাড়ী। সেই নীল রঙ্গেরই ব্লাউজ। নীল রঙ্গের পেটিকোট। আমি বৃষ্টিভেজা আকাশ দেখবো না চোখবোজা নীলিমা। ভর্তি হয়ে গেলাম নীলিমার ক্লাসে। তাকে বললাম, গুরু পাঠ দাও, শিক্ষা দাও। আমাকে ধারাপাত শেখাও। তোমার অশেষে আমি ডুবে যেতে চাই। কিন্তু সে কিছুই শেখাতে পারলো না। ঐ যে ‘ভালবাসি’ কথাটি শব্দ করে বলতে পারিনি সেই কারণে।

- Advertisement -

একটি শব্দের কাছে আমার নিযুত কথা বৃথা হয়ে গেল। গাদায় গাদায় পাশ করিয়ে কি পেলাম। একটি ফেল মেরেই শিক্ষকতার ইতি টানলাম। আমাকে এখন এক এন-জি-ও প্রচুর টাকা দেয়। প্রচুর টাকার আমার কোনো প্রয়োজন নেই। দিনের মধ্যে শুধু চব্বিশ কাপ চা খাই। অত টাকা দিয়ে আমি কি করবো। এন-জি-ও’র টাকা নিয়ে যাদের বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে কান জুড়ানো কথা বলি। বিদেশী এন-জি-ও’র কর্মকর্তারা ভাবে আমার মতো করে কেউ নাকি বিয়ের কথাটা বোঝাতে পারে না। বিয়ে ভেঙ্গে গেছে বলে মন ভেঙ্গে যাবে সেটা যেন না হয়। মনের মধ্যে ঈশ্বরের বাস। ঘরই যদি না থাকে ঈশ্বর কি বারান্দায় গিয়ে বসবে। গ্রামে গ্রামে গিয়ে আমি তাই মাচা বেঁধে আসি। মনের মধ্যে লতাপাতা জাগিয়ে তুলি। এই আমার কাজ।

 

স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent