রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

ভয়ঙ্কর সুন্দর

A New Sakura Tree Project Celebrates Municipal Friendship

প্রকৃতি এবং পরিবেশ নিয়ে সারা বিশ্বে আজকাল একটি বিশেষ চর্চা লক্ষ্যনীয়, অনেক দেশ অবশ্য শুধু কাগুজে চর্চা করেই দায়িত্ব পালন করছে। কানাডা এ বিষয়ে বাস্তব সম্মত দৃষ্টিকোণ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে উৎসাহী। জাপানও আর একটি দেশ, প্রকৃতি এবং পরিবেশ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আমি এই লেখায় জাপান-কানাডা সহযোগিতা ও সমন্বয়ে একটি প্রকল্পের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে অনুপ্রাণিত হয়েছি। লেখার শিরোনামটি যদিও বর্ণনার অতিরিক্ত উপাদান রূপে পাওয়া। মূল আলোচনার লক্ষ্য আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ।
আমার টরন্টোতে বসবাস প্রায় ১৫ বৎসর৷ Applefield Rd. & Tordale Cres. Intersection এ আমার বাড়ী। Applefield Rd. এর গা ঘেঁষে বহমান একটি নদী, নাম হাইল্যান্ড ক্রীক (বাংলাদেশে বড় খাল, যদিও এখানে নদীই বলে), এই নদীর পাশ দিয়ে চলে গেছে Birkdale Ravine & Walking Trail.
প্রাত্যহিক পায়ে হাঁটার অতি চমৎকার ও উন্নত ব্যবস্থা তাই প্রতিদিন Trail এ গিয়ে না হাঁটলে মনেহয় নিজের প্রতি নিজে অবহেলা করছি, কর্তৃপক্ষ এত সুব্যবস্থা করলেও আমরা তা উপভোগ করতে শিখিনী, আমি তাই চেষ্টা করি প্রাত্যহিকতার নিস্তরঙ্গে গা না এলিয়ে হাঁটা অব্যাহত রাখতে, তবে বরফ ঢাকা মাস কটি বাদ দিয়ে৷ বরফ যখন গলতে শুরু করে নদীর দৃশ্য হয় পাহাড়ী নদীর মত খরস্রোতা৷ হঠাৎ প্রথম যেদিন একটি পোলের উপর দাঁড়িয়ে দেখেছি, থমকে গিয়েছিলাম, চারদিক বরফ ঢাকা এত জলের স্রোত কোথা থেকে আসে, মুহূর্তে মনেহল ভূমির উত্তাপে বরফতো নীচ থেকে গলা শুরু হয়৷ উপরে বরফ ঢাকা থাকলেও নিচের স্তর গলা শুরু হলে এই বিস্তীর্ণ শহরের জল নদী দিয়ে বয়ে চলে, পড়ে গিয়ে Ontario Lake এ ৷ আমি প্রায়শই এই Walking Trail এ হাঁটতে বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাই, অনেকে এসে বার বার আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং City of Torontoকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

- Advertisement -

Walking Trail এ প্রতি ৪০০/৫০০ মিটার দূরে দূরে নদীর উপর অপর প্রান্তের প্রতিবেশীদের সংযোগ করতে মজবুত লোহার তৈরি পোল রয়েছে, এমন একটি পোল পার হলে Pomproy Ave, পাশে একটি ছোট খালিমাঠ, সরকারি সম্পত্তি। ২০১৫ সালের জুন মাসে হাঁটতে গিয়ে আমাদের এলাকার City Councilor, Michael এর সাথে দেখা, সে জানালো City একটি মহান কাজ কিছুদিন আগে সম্পন্ন করেছে, সেটি হল The Sakura Tree Planting Project, City of Sagamihara, Japan and City of Toronto joint venture project. আমাকে গিয়ে দেখে আসতে পরামর্শ দিল এবং প্রকল্পটি ঐ Pomproy Ave এর পাশে খালি মাঠে করা হয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ হেঁটে চলে গিয়েছিলাম প্রকল্পটি দেখতে, দেখে বর্ণনাতীত আনন্দ উপভোগ করেছি, বুকে হাত রেখে মনে মনে বলেছি Salute City of Sagamihara Japan & City of Toronto.
এখানে উল্লেখ করা বাঞ্ছনীয় যে জাপানী ভাষায় চেরী গাছকে সাকুরা গাছ বলে, তাই নামকরণ হয়েছে Sakura Tree Planting Project. ২৫টি চেরী গাছ বিভিন্ন সারিতে লাগানো হয়েছে, এক কোনে বিশাল প্রস্তরখন্ডের উপর প্রকল্পের নামধাম ইত্যাদি, পাশে বড় বড় বসার বেঞ্চ, অত্যন্ত মনোরম, দৈনন্দিন হাঁটাচলার ক্লান্তি অবসানের আবেদন রাখে।
Councilor Michael আরো জানিয়েছিলেন, আমরা অন্য কোথাও এধরণের উপযুক্ত জায়গা দেখালে city cherry project করার জন্যে বিবেচনায় নেবে ৷ তবে তাদের হাতে এ ধরনের আরও কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে বিভিন্ন স্থানে। (Environmental cherry project on going) বিশদ ভাবে জানতে পারলে আপনাদের অবশ্যই ফের জানাবার চেষ্টা করব।
আমার স্বভাব হল এভাবে হাঁটা চলায় নূতন কিছু চোখে পড়লে একটু অনুসন্ধান করে দেখা ৷ তাই Ravine এ হাঁটতে গেলে, দেখি ছোট বা মাঝারি ম্যাপল গাছ বা অন্য কোন গাছ Walking Trail এর দুই পাশে একটু দূরে দূরে অতি যত্নে লাগানো এবং প্রতিটি গাছের গোড়ায় পরিচ্ছন্ন মেটাল প্লেটে কিছু লেখা৷

চারা গাছ গুলো ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে, আমাদের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখবে, আবার সাথে সাথে যে ব্যক্তির স্মরণে গাছ রোপণ হয়েছিল তাঁর স্মৃতি কমিউনিটিতে বজায় রাখতে শ্রদ্ধাভরে কিছু লেখা নাম সহ ৷ যাদের অবদানে আমাদের এ প্রাপ্তি, অজানা অচেনা তাদের ধন্যবাদ জানাই মনে মনে হাঁটা চলার অবকাশে৷
এ ধরনের Name plate লেখার কিছু নমুনা পাঠকদের সৌজন্যে দেয়া হল৷

এই নামের ফলকে একটিতে (ছবি-৩) লেখা দেখছেন In loving memory of GEORGE PAT LESLIE (1922-2003)That was bloody Marvellous. আমার লেখার শিরোনামের অংশ ৷ Marvellous সাধারণত আমরা বলি বিশেষ কোন অর্জনে বাহবা জানাতে, আর bloody বলা হয় ভয়ঙ্করের মাএায় তীক্ষ্ণতা বাড়িয়ে বুঝাতে অথবা কাউকে খুব মন্দ গালাগাল দিতে, কিন্তু এখানে এর ব্যবহার বিশ্লেষণের অপেক্ষা রাখে তাই আমার এই প্রচেষ্টা, জানিনা কতটা সফল হবো৷

আজ থেকে বেস কয়েক বৎসর আগের একটি কথা মনে পড়ে, তার উল্লেখ করা এখানে একান্ত প্রাসঙ্গিক। প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব-পশ্চিম পড়া শেষ করে কলকাতা বেড়াতে গিয়েছিলাম একবার, সেখানে আমার বড়দাদার ছেলে অনুপের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে বলেছিলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বইটি পড়ে খুব ভাল লেগেছে। অনুপ তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল “ সুনীলতো ভয়ঙ্কর সুন্দর লিখে”, আমি একটু অপ্রস্তুত বা হতবাক সুরে বলেছিলাম, ভয়ঙ্কর বিশেষণ যতটা জানি ভয়ঙ্কর তুফান, সামুদ্রিক ঢেউ বা মারাত্মক আক্রমণের সাথে যায়, কিন্তু ভয়ঙ্কর সুন্দর লিখা সে কেমন কথা হল অনুপ। সে বিশ্লেষণ দিল, না কাকু ওর লেখা এতটা সুন্দর যে ভয়ানক তুফান সৃষ্টি করে ফেলেছে, তাই ভয়ঙ্কর সুন্দর, আমাকে মৃদুসরে বলতেই হয়েছিল, হয়তোবা৷
এত বৎসর পর টরন্টোতে এসে কারো নামের সাথে প্রশংসা সূচক Bloody Marvellous লেখা দেখে মনে পড়ে সুন্দর লেখা ঝড় তুফান সৃষ্টি করতে পারলে Marvellous can be used for something amazing & heavy like bloody, why not. আসলে একটি কথা মানতেই হবে Wise men think alike. বাংলা ভাষাভাষীরা নিশ্চয়ই জানতো না , At Toronto someone will use bloody Marvellous for one who did something very brilliant. এখানে আমি ভাষা জ্ঞানীদের একাত্মতা অনুধাবন করছি৷
তাই আমার এই রচনার শিরোনাম ‘‘Bloody Marvellous (or, বা) ভয়ঙ্কর সুন্দর’’৷
ভাষা জ্ঞানের কথা যখন এসে পড়ল তখন আমার আজ অনুপের সেই বিশেষণ ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ কথাটিকে সাধুবাদ জানাতেই হয়, আর টরন্টোতে যে ব্যক্তি bloody Marvellous লিখেছেন তার পরিচয় জানা নেই ফলে সাধুবাদ জানাতে অপারগ বলে দুঃখিত৷
অনুপ প্রসঙ্গে আরও একটি কথা পাঠকরা জানলে হয়ত আবারও সুখী হবেন, আজকাল সে রীতিমত একজন কবিও, তার কবিতায় গভীরতা রয়েছে, শব্দ চয়নেও বেশ চমৎকার, মেধা প্রশংসার দাবি রাখে আমার বিশ্বাস৷
কিছুদিন আগে নেপালে ভূমিকম্প হওয়ার পর অনুপ ’হৃদকম্প’ নামে নিম্নোক্ত কবিতাটি লিখেছিল, পড়ে আমার ভালোলেগেছিল হয়ত আপনাদের ভাল লাগবে৷

হৃৎকম্প /

নেপালে এত ভূকম্প না হয়ে, আমাদের প্রাত্যহিকতার নিস্তরঙ্গে, মৃদুমন্দ একটা ভূকম্প হোক বরং । উৎস স্থল হৃদয়।
তবে মেজর কিছু নয়, মৃদু আফটার শক্ গোছের, রিখটার স্কেলে যার কৌলীন্য নেই।
যাতে ভাঙ্গবে না ঘর গেরস্থালী, একটু আধটু কেঁপে উঠবে এই যা; টেকটনিক প্লেটের অবিমৃশ্যকারিতায়।
আর জেগে উঠবে বুকে এক পলি চর, তাতে শ্যামল আবাদ। একটু উদ্দীপন, শিহরন কে না ভালবাসে।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent