রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

বিভাসিত লোচন


প্রায় তিন বছর পর গতকাল আবার মাছ ধরতে গেলাম।
ছোট কাফেলা। মৎস গুরু জালাল আর আমি। সাথে সঙ্গ দিতে এসেছেন আমদেরই এক নবাগত ছোটভাই আনিসুল শুভ। চোখে মুখে তারুণ্যের আভা আর কৌতুহলী দৃষ্টি। আজ সে দেখবে কানাডার মাছের সাথে বড়শী ছিপের সুতার টানের খেলা।
কিংসভিলের সিডার বীচ মেরিনায় মৎস শিকারীদের মেলা বসেছে। শনিবারের ছুটির দিন বলেই হয়ত একটু বেশী জমজমাট। বড়শী ফেলেছি মোট চারটি – দু’টু আমার আর দু’টু জালালের। এখন নাকি নতুন নিয়ম হয়েছে। প্লান্ট বেজ ফুড দিয়ে একজন পাশাপাশি দুটু বড়শী ফেলতে পারে। তাই দুজনের চার বড়শী। আমাদের এক সাথে মাছ ধরার আর একটি অলিখিত নিয়ম আছে। আর তা হলো কোন ছিপে মাছ আটকালো তা গৌন। মাছ আমরা পেয়েছি এটাই মূখ্য। মাছ ধরা শেষে সবাই ভাগ পায়।
জানিনা – ছুটির দিন বলে কি আজ মাছেরাও ছুটিতে?
ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেও মাছের কোন বাইট (ঠুকর) নেই – সাড়া শব্ধও নেই। টিম হরটনের কফি- ক্রোসান্ট সবই খেয়ে সাবার। জালাল এখন সবার হাতে একটি করে পটেটু চিপস্‌ এর প্যাকেট ধরিয়ে দিয়েছে। গল্প হচ্ছে দেদারসে। কখনো রাজনীতি কখনোবা সমাজনীতি। আমি কথা বলছি আর তাকিয়ে আছি সারাক্ষন ছিপের মাথার দিকে। মাঝে মাঝেই ভাটার টানে বড়শীতে টান পড়ে এবং ভেসে আসা ছোট পাথরের নীচে বড়শীর হুক চাপা পড়ে। তাই মাঝে মাঝেই ফিশিং রড উঠিয়ে দেখছি বড়শীর হুক ঠিক আছে কিনা। জালাল দেখছি অনেকটা চিন্তা মুক্ত। বড়শী ছিপের মাথার উপর আজ তার কেন যেন কোন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নেই। ভাবলাম কোন বাইট নেই বলেই হয়ত একটু হতাশ।
কিন্তু আসল কারন টের পেলাম কিছুক্ষন পর। আমাদের গল্পের ফাঁকে হঠাৎ
শুনি সাইরেন বাজছে। বিকট শব্দের পেপ পেপ ফিশিং এলার্ম। তাকিয়ে দেখি মাছের টানে বড়শী ভাঙ্গার উপক্রম। ফিশিং রডে আগেই এলার্ম লাগিয়ে দিয়েছিল জালাল। মাছ যতই সুতা টানছে, এলার্মের শব্দ ততই প্রকট হচ্ছে। আমি দ্রুত নেট হাতে রেডি হলাম। আমি জানি বড় মাছ বড়শীতে আটকালেও তাকে টেনে তীরে আনা এবং ফিশিং নেটে ঠুকানো বেশ কঠিন কাজ। প্রায় মিনিট দশেক টানা হেঁচড়ার পর মাছ কাহিল হয়ে যখন পাড়ে এল ঠিক তখনি আমি পানিতে নেট ডুবিয়ে মাছ উপরে উঠালাম। সাড়ে তের পাউন্ডের এক বিশালকায় কার্প মাছ। দেখতে অনেকটা বাংলাদেশী রুই মাছের মতো। তবে এই মাছের স্বাদ কিছুটা ভিন্ন।
এক সময় আমাদের সব প্রতিক্ষার অবসান ঘটল।
আমারা দু’টো বড় মাছ পেলাম। একটি সাড়ে তের পাউন্ডের আর –
অন্যটি সাড়ে দশ পাউন্ড ওজনের। মাছেরা করোনা কালে ছুটিতে গেলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের হতাশ করেনি। মাছ নিয়ে যখন বাসায় আসি তখন ভর দুপুর – বেলা তখন প্রায় দুইটা। অবাক হলেও সত্যি মাছ গুলো সব তখনো পুরুপুরি জীবিত। অবশ্য আমরা লেকের পাড়ে থাকাকালীন সব মাছ পানির গামলায় ডুবিয়ে রেখেছিলাম।
বাসায় এসে কয়েকটি সান ফিশ এবং একটি বড় কার্প এর সব গুলোকেই লন্ড্রি রুমে এনে নিজ হাতে ক্লিন করি। কিছুক্ষন পর স্নাদি শেষ করে যখন খেতে বসলাম দেখি গরম ভাত আর ফিস ফ্রাই সবই সামনে হাজির। গিন্নী খবি তড়িতকর্মা। মচমচে সানফিস ফ্রাই এবং মাছের পেটি ভূনা সবি রেডি হয়েছে এই অল্পক্ষণের মধ্যে।
শুনলাম – জালাল এবং শুভো তাদের মাছ সাথে সাথেই কেটেছে তারপর ব্যাক ইয়ার্ডে ফ্রাই আর মাছের মাথা দিয়ে মুড়িঘন্ট।
আহা! কতদিন পর – টাটকা মাছ – টাটকা ভূনা।
মুখে এর স্বাদ লেগে থাকবে আজন্ম ।।

উইন্ডসর, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent