রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

স্বপ্নপর্বের তিন কাহন : এক

ছবিএলিয়া পালেংগিনি

নুরনাহার বনু ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলেন!
দেখেন যে, তার স্বামী আবদুর রশীদ পাটোয়ারী বারান্দায় মুরগী কোলে নিয়ে বসে আছেন।
এমত দৃশ্যে যে কোন মানুষেরই চমকে ওঠার কথা।
স্থবির নুরনাহার বানু ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবার চেষ্টা করলেন, বাড়িতে কী হচ্ছে এসব!
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, তার স্বামীর কোলে কাপড়ের পোটলা। মাঝেমধ্যে রশীদ পাটোয়ারী গরম লাগলে গায়ের চাদর, শাল কিংবা সোয়েটার খুলে পোটলা করে কোলের উপর রাখেন। দূর থেকে মনে হ’তে পারে, একটুকরো অন্ধকার কোলে নিয়ে বসে আছেন তিনি। আজো তাই ভেবেছিলেন, কিন্তু দৃশ্যের ভিতরে তৃতীয় প্রাণীর উপস্থিতি টের পেয়ে মুরগী কক্্ কক্ করে ডেকে উঠলে এমত ভ্রম ভেঙে যায় নুরনাহার বানুর।
মুরগী জানান দেয়,‘কাপড়ের পোটলা নয়, অন্ধকারও নয়। আমি, আমি বসে আছি তোমার স্বামীর কোলে। অসুবিধা আছে?’
নুরনাহার বানুর বিষ্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বাসায় তো মুরগী পালা হয় না। তাছাড়া এপার্টমেন্ট বাড়িতে সে সুযোগও নেই। তাহলে এ ধরনের কথা বলা মুরগী এলো কোত্থেকে? বিস্ময়ে হতবাক হ’য়ে যান নুরনাহার বানু।

তখন সন্ধ্যাবেলা।
বারান্দায় আলো আঁধারীর দ্বিধাদ্বন্দের ভিতর আবদুর রশীদ পাটোয়ারী দোল চেয়ারে মুরগী কোলে নিয়ে দোল খাচ্ছেন। তাঁর চোখ বন্ধ। ছায়ার মতো নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়ান নুরনাহার বানু। দেখেন যে, তাঁর স্বামীর কোলের ভিতর মুরগীটিও পরম নিশ্চিন্তে চোখ বুজে আছে। এমতাবস্থায় তার কী করা উচিত সহসা বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি। তবে এরকম দৃশ্য অমরত্বের দাবী রাখে। একথা মনে হ’তে না হ’তেই তিনি নিঃশব্দে স্বামীর পিছন থেকে সরে আসেন।

- Advertisement -

বৌমা, ও বৌমা দরজা খোলো।
একটু আগে বাইরে থেকে ফিরে নিজের ঘরে কাপড় পাল্টাচ্ছিল পুত্রবধু ঋতু। দরজা খুলে দিতেই নুরনাহার বানু ফিসফিস করে বলেন, তাড়াতাড়ি ক্যামেরা নিয়ে আসো বৌমা। একটা ছবি তুলতে হবে, এমন দৃশ্য জীবনেও পাবে না।
বারান্দার দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে ঋতু। তারপর অবাক বিষ্ময়ে জানতে চায়, বাবার কি হয়েছে ? ওরকম কোলের ভিতর মুরগী নিয়ে বসে আছেন কেন ?
এসব প্রশ্নের জবাব তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিও। এখন বাহাজ না করে ঝটপট কয়েকটি ছবি তুলে ফেল। আজই ফেসবুকে দিতে হবে।
আমি এ ছবি তুলতে পারবো না মা। বাবা জানতে পারলে মাইন্ড করবেন। আপনি তোলেন বরং। আপনাকে কিছু বলবেন না।

ঋতুর কথায় কপট রাগ দেখালেন নুরনাহার বানু। বললেন, হ’য়েছে হ’য়েছে। তোমাকে বাহাজ করতে হবে না। আমিই তুলছি। এই বলে তিনি কয়েকটি ছবি তুলে ফেললেন।
আর তখন ক্যামেরার ফ্লাশ জ্বলে উঠতেই মুরগীটি কক্ কক্ শব্দ করে উঠল। আবদুর রশীদ পাটোয়ারী চোখ মেলে তাকালেন। তারপর গুরুগম্ভীর স্বরে বললেন, কী হচ্ছে এসব?
আপনাদের অমর করে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।
মানে ?
আপনাদের দু’জনের ছবি তোলা হচ্ছে।
নুরনাহার বানু কিছু বলার আগেই ঋতু বলল, আপনাদের দু’জন, মানে আপনার আর মুরগীর ছবি তুলেছেন মা। ফেসবুকে দেবেন।
ননসেন্স। আবার চোখ বন্ধ করলেন আবদুর রশীদ পাটোয়ারী।

ইস্টইয়র্ক, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent