মঙ্গলবার - মে ১৪ - ২০২৪

শুভ জন্মদিন বঙ্গতাজ!


যে মানুষ সাড়ে সাত কোটি মানুষের একটি অঞ্চলের রাজনীতির সময়কে নির্মাণ করেছিলেন এবং নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন রাজনৈতিক গতি-প্রকৃতি, তাঁর হৃদয়টি ছিল বাংলা মায়ের সোঁদা মাটির কোমল পরশে পূর্ণ। হ্যাঁ, আমি বঙ্গবন্ধুর কথাই বলছি।
বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্রের জনক শেখ মুজিবুর রহমান। মানুষ ভালোবেসে যাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধি দিয়েছেন। তাঁর নির্ভরতার হাতটি সবসময়ই তাজউদ্দীন আহমদের কাঁধে ছিল৷ ব্যক্তি ‘মুজিব ভাই’ থেকে রাষ্ট্রের অবিসংবাদিত নেতা সবক্ষেত্রেই তাঁর ডানপাশে একজনকেই তিনি রেখেছিলেন পরম বিশ্বাসের জায়গায়। পরম নির্ভরতার জায়গায়। মায়ামমতায় ও শ্রদ্ধায় জড়িয়ে থাকা এই গভীর সম্পর্ক আপাত দৃষ্টিতে দেখা ক্ষমতায় থাকা না থাকা বিষয়টি মূখ্য ছিল না।
একজন আদর্শবান ও প্রবল নীতিজ্ঞান সম্পন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পূর্ণতর উদাহরণ তাজউদ্দীন আহমদ। এক চুল পরিমাণ আপসেরও বিরোধী ছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর দিল্লীতে এক বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী তৎকালীন বিশ্বব্যাংক প্রধান রবার্ট ম্যাকনামারাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন। রবার্ট ম্যাকনামারা হাত বাড়িয়ে করমর্দন করতে চাইলে তাজউদ্দীন আহমদ বললেন – পাকিস্তানি খুনিদের সমর্থনকারী কারো সাথে তাজউদ্দীন আহমদ হাত মিলায় না। উল্লেখ্য বিশ্বব্যাংক তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের ঘোর সমর্থক ছিল।
বঙ্গবন্ধু মন্ত্রীপরিষদ থেকে তাজউদ্দীন আহমদকে বাদ দিলে তিনি তাঁর মুজিব ভাইয়ের সিদ্ধান্তকে একটি শব্দ উচ্চারণ করেও কোথাও কখনোই তাঁর মনোকষ্টের কোন ইঙ্গিত দেননি৷ কেননা, তিনি বিশ্বাস করতেন দেশের আশু সমাধান প্রয়োজন। বন্ধু রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রয়োজন। বৈদেশিক সাহায্য প্রয়োজন। দেশের অবকাঠামো নির্মাণ প্রয়োজন। ক্ষুধার্ত মানুষকে খাদ্য দিয়ে বাঁচানো প্রয়োজন। অতএ, মুজিব ভাই যা করছেন সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের অনিবার্য প্রয়োজনেই করছেন। কোন কোন কুচক্রী মহলের গভীর চক্রান্ত ও অশুভ থাবার কারণে তাজউদ্দীন আহমদকে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সফল হওয়ার পরেও তাজউদ্দীন আহমদ কষ্টকে গোপন রেখেছিলেন। তিনি শুধু আশংকা করেছিলেন মোশতাক ও তার দোসরেরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় যা পারেনি; স্বাধীনতা অর্জিত হয়ে দেশ গড়ার মুহূর্তে মুজিব ভাইকে দিয়ে সেই ব্যর্থতার গন্তব্য রাস্তায়ই তাঁকে নিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করবে। বাস্তবে হয়েওছিল তাই। এজন্য তখনই সতর্ক করে দিয়েছিলেন তাঁর মুজিব ভাইকে- বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিকদের নামে একদলীয় শাসন ব্যবস্থাটা ঘোষণা দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। হ্যাঁ, এই দেশটি রক্ষা করতে গেলে এবং সমাজ ব্যবস্থাকে সমতার নিরিখে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের ঋণে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সুফল হবে৷ তবে, তাজউদ্দীন বলেছিলেন সেই সে সময় তখনো আসেনি।
স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এক অমৃত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম তাজউদ্দীন আহমদ। তাঁর ডায়েরির পাতা ছাড়া যেমন ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনা সম্ভব হয়নি; তেমনি, ‘তাজউদ্দীন আহমদ’ ছাড়া বাংলাদেশের ইতিহাসও অসম্পূর্ণ। তাজউদ্দীন আহমদ ও অপরাপর রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি পূর্ণাঙ্গ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন মানেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মহত্বের আসনে আরো বড় করে অবলোকন করার আলো ফেলা। বঙ্গবন্ধু যদি বাংলাদেশ নামক দেশনৌকাটির কাণ্ডারী হোন, তবে সেই নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মাঝিমাল্লাদের অন্যতম মুখ্য বাহক তাজউদ্দীন আহমদ। আমরা যত বেশী তাজউদ্দীন আহমদ ও অপরাপর জাতীয় নেতাদের ত্যাগ ও রাজনৈতিক কার্যক্রম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবো, ততোই বঙ্গবন্ধু আরো উজ্জ্বল মহিমায় আমাদের কাছে আবির্ভূত হবেন। এবং এটাই হবে জাতীয় নেতা সহ সকল শহিদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন।
জন্মদিনে তাজউদ্দীন আহমদের অবিস্মরণীয় স্মৃতির প্রতি আমার অবিরাম শ্রদ্ধা। অভিবাদন।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent