রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

মফস্বল থেকে শহরে আসা এক ‘গ্রাম্য বালিকা’র ভালোবাসার গল্প

আলোকচিত্রী Rafid Yasar

এই আমি তোর চোখের সামনে দিনে দিনে বড় হলাম।
তুইও হলি সুঠাম যুবক কিশোর থেকে।
আমরা খুবই গরিব ছিলাম।
তোর প্রাপ্য খাদ্য-খাবার-পুষ্টি-পানি
সকল কিছুর যোগান দিতে বাবা আমার কষ্ট করতো দিবা নিশি।
অনটনের এ সংসারে খুব দামি এক অতিথি তুই।
মাঝে মধ্যে আমরা কিছু কম খেলেও তোকে দিতো যা প্রয়োজন যখন যেটুক।
তোরও হতো অসুখ-বিসুখ অষুধ পথ্য লাগতো তোরও।
বাবার ছিলো তীক্ষ্ণ নজর।
তোর শারীরিক সুস্থতাটা বাবার কাছে কাম্য ছিলো সবচে বেশি।
ছেলে মেয়ের প্রয়োজনে ডাক্তার খুব কম ডেকেছেন।
আমরা অষুধ না পেলেও তুই পেতি ঠিক যথারীতি।
আমরা পেতাম পড়া-পানি। খুব বড়জোর একটা তাবিজ।
দিনে দিনে কেমন তাগড়া জোয়ান হলি।
বড় হলি। অনেক বড়।
অল্পসল্প হিংসে হলেও আমরা সবাই ভালোবাসতাম তোকে খুবই।
তুইও কিছু কম বাসিসনি।
খুব জরুরি সদস্য তুই পরিবারের।
০২
তোর সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে হাটে এলাম বাবার কথায়।
তোর দড়িটা বাবার হাতে।
কোরবানী হাট। লোক গিজগিজ। ব্যস্ত মানুষ। উৎসাহী চোখ। পূণ্যলোভী।
তুই ছিলি খুব নজর কাড়া। হাটের মানুষ তোকে দেখে সবাই খুশি।
ওরা দেখে। শরীরে তোর হাত বুলিয়ে মাংস পেশীর গড়ন দেখে।
ঘাড়টা দেখে। হাত রাখে তোর শিঙ-এর ওপর।
দাঁতও দেখে। লেজ উঁচিয়ে কী যে দেখে খোদাই জানে!
ওদের হাতের মোবাইল ফোনের ক্যালকুলেটর খুব দ্রুত তোর শরীর মাপে।
মাংস মাপে আনুমানিক। সেলফোনে তোর ছবি তোলে।
হোয়াটস্‌এপে তা পাঠিয়ে দেয় পরিবারের সদস্যদের।
দরদাম হয়।
আমি পড়ি দোয়া দরুদ মনে মনে এক নাগাড়ে।
আল্লা, যেনো বিক্রি না হয়।
আমার শুধু কান্নাই পায় বারে বারে। তোর ও বাবার চোখ এড়িয়ে আমি শুধু অশ্রু মুছি।
তোকে খুবই ঝাপসা দেখি। চোখ মুছলেই ফকফকা তুই আগের মতো।
আদর করে তোর শরীরে সরিষার তেল মাখিয়ে বাবা
চকচকে আর পালিশ করলো কাল বিকেলে।
বনিবনা হয় না যখন ক্রেতার সাথে, আমি তখন বেজায় খুশি।
শুকরিয়া গো হে দয়াময়। সত্যি তুমি দয়ার সাগর।
দুপুর গড়ায়।
বিক্রি হসনি।
সবই তাঁহার লীলাখেলা। আমরা আবার বাড়ি ফিরবো তোকে নিয়ে।
বাবার চোখে দুশ্চিন্তার নিঝুম পাহাড় আর কুয়াশা।
তোবড়ানো গাল কপাল জুড়ে ধ্বস্ত মুখের বলিরেখায় দারিদ্র্য তার মানচিত্রের নকশাটা ঠিক এঁকে গেছে।
দারিদ্র্য খুব খারাপ জিনিস।
মায়াকে সে থোরাই গোণে মূল্য দেয় না।
মমতাকে দেখতে পায় না দেখতে চায় না ভালোবাসার অশ্রুবিন্দু।
দরিদ্ররা সবার আগে বিক্রি করে ভালোবাসা।
নিদান কালে ভালোবাসার মূল্য তো নেই কানাকড়ির।
বিকেল গড়ায়।
শুকরিয়া গো ও দয়াময়। তুই তাহলে বেঁচেই গেলি আপাতত।
শেষ বিকেলের যাই যাই রোদ হঠাৎ কেমন ম্লান হয়ে যায়।
চোখে আমি আঁধার দেখি।
এ কি হলো? এ কী হলো!
এক ধন্যাঢ্য পূণ্যবানের লোভী দু’চোখ তোকে হঠাৎ চিনে নিলো।
বাবার বলা দামেই তোকে এক লহমায় কিনে নিলো!
তোর জীবনটা ছুরির নিচে এগিয়ে দিলাম। ক্ষমা করিস।
তোকে যখন সবাই মিলে শুইয়ে দেবে জবরদস্তি
রক্তমাখা ছুরি হাতে কসাই যখন কাটবে গলা
বিস্ফারিত তোর দু’চোখে বাবার ছবি আসবে যখন ক্ষমা করিস।
কান্না ভেজা তোর দু’চোখে আমার ছবি ভাসবে যখন ক্ষমা করিস।
ক্ষমা করিস বোবা বন্ধু……

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent