রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪
ফেসবুক দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছেছবিফার্মবি আনসপ্লাশ

ফেসবুক দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে। তার জ্বলো জ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছে সাম্প্রতি একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে হিন্দুদের বাড়ি ঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কোন ব্যবস্থা নেই।বার বার এই ধরনের উস্কানীমূলক পোস্টের বিরুদ্ধে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোন রকম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ।
তারা কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড নামে একটি অটোমেটেড সিস্টেম গড়ে তুলেছে কিন্তু এই অটোমেটেড সিস্টেম তেমন কিছুই করতে পারে না।
শুধুমাত্র কেউ রিপোর্ট করলে এই অটোমেটেড সিস্টেম কিছুটা কাজ করে।
এই সিস্টেম কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ব-উদ্যোগেই কাজ করতে শুরু করে। কেউ ফেসবুকে হিংসাত্মক বক্তব্য দিলে, কাউকে আক্রমণ করে এবিউসিভ শব্দ ব্যবহার করলে এরা কিছুটা সক্রিয় হয়ে উঠে। কারন, তাদের অটোমেটেড সিস্টেমের মধ্যে ওই সব এবিউসিভ, হেইট ক্রাইমের মত শব্দগুলি দেওয়া থাকে। যখনই ফেসবুকে কেউ এইসব শব্দ ব্যবহার করে কিছু লেখে তখন তাদের সিস্টেমে তা ধরা পড়ে। তখন তারা ব্যবস্থা নেয়। ভুল তথ্য দিলেও এরা ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে যে সব ভুল তথ্য স্বাস্থ্য এবং জীবনের ঝুঁকির কারন হতে পারে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এটি হয় থার্ড পার্টি ভ্যারিফিকেশনের মাধ্যমে। ধর্মিয় অনুভূতিতে আঘাত করে ফেসবুকে কেউ কিছু লেখলে বা বক্তব্য দিলে ফেসবুক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা কোনটি মতামত আর কোনটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত তার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। যার কারনে তারা নাস্তিকদের মতামতধর্মী পোস্টকেও ডিলিট করে ফেসবুক হোল্ডারকে শাস্তি দেন দুই তিন দিন তার একাউন্ট বন্ধ করার মাধ্যমে।
যারা নাস্তিক তারা ধর্মকে টার্গেট করে তাদের মতামত লেখবেন সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু ফেসবুকের সিস্টেমে সেটি ধরা পড়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হিসাবে। তখন ফেসবুক তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠে।
কিন্তু ধর্মীয় বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ফেসবুকে কেউ কোন ধর্মের অনুসারীদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বক্তব্য দিলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেক্ষেত্রে ব্যবস্থা না নিয়ে নিশ্চুপ থাকে। এই কারনে দেখা যায় ফেসবুকে শেয়ার করা ওয়াজ মাহফিলের অনেক বক্তব্যে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বক্তব্য থাকলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।
ফেসবুকের মাধ্যমে উত্তেজনা সৃষ্টি করে পৃথিবীতে অনেক দাংগা, হাংগামা এবং হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে কিন্তু ফেসবুক তা প্রতিরোধ করতে পারেনি।
আরেকটি ভয়ংকর দিক হচ্ছে, ফেসবুকের মাধ্যমে অতি সহজেই রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে দেওয়া যায় যার কারনে দেশে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ হত্যার উদাহরণ রয়েছে। ফেসবুক সেগুলির বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারেনি।
এছাড়াও ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষে মানুষে বিভেদ, বিভাজন, কারো চরিত্র হনন ইত্যাদি অহরহ ঘটেই চলেছে কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ স্বতোঃপ্রনোদিত হয়ে সেই সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ।
এর আগে শিবের মাথায় কাবাশরীফ এমন একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে দাংগা বেধে গিয়েছিল কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সেই ক্ষেত্রে ছিলেন নিরব দর্শক।
এবারো চাঁদপুর, লক্ষীপুর, পীরগঞ্জ,হবিগঞ্জ ইত্যাদি জায়গায় হিন্দুদের বাড়ী-ঘর আক্রমন করা হয়েছে, তাদের মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে আর এই সবের মূল উত্তেজনা, উস্কানী দেওয়া হয়েছে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। এবারো ফেসবুক কোন ব্যবস্থা বা এই সব অপকর্মকে প্রতিরোধ করতে পারেনি।
তাই প্রশ্ন উঠেছে ফেসবুক আসলে কিসের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড মেনটেইন করছে? এরা আসলে কার স্বার্থ রক্ষা করছে সেটিও একটি বড় প্রশ্ন।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent