রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

সবুজ শাড়ী লাল পাড়

ছবিঅংশু পুরকাত

স্বাধীনতা দিবসের বন্ধ । রাস্তাঘাট ফাকা। আমি তখন ক্লাস টু তে পড়ি । সরকারী ছুটি থাকলেও স্কুলের ফাংশানে গান গাইবো তাই কয়েকটা বাচ্চা বুয়ার সাথে হেটে হেটে স্কুলে যাচছি। আমি তিন বছর একটা বুয়ার সাথে হেটে স্কুলে যেতাম। ওটা আমার স্কুল জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল। সেদিন ভীষন নিরজন সকালে স্কুল যাওয়ার পথে রেল লাইনের সামনে যখন আমরা এসে পৌছালাম তখন ট্রেন যাওয়ার জন্য রেল ক্রসিংয়ের গেট বন্ধ । আমরা কয়েকটা বাচ্চা আর আমাদের বুয়া অপেক্ষা করছি ট্রেন চলে যাবার। আমাদের পাশেই একটা সুন্দরী মেয়ে সবুজ শাড়ী লাল পাড় পড়ে দাড়িয়ে আছে। ফুলের গহনা, কপালে লাল টিপ। মাথায় আলতো কাপড় । বুয়াকে বললাম “আনুর মা দেখেন মেয়েটা কি সেজে এত সকালে দাড়ায় আসে।” বুয়া বলল “আরে স্বাধীনতা দিবসের অনুস্ঠানে যায়। “

আমরা হেসে কুটি কুটি, স্বাধীনতা দিবসে বুঝি কেউ সবুজ শাড়ী পরে? তখনও বিজয় দিবস স্বাধীনতা দিবসে সবুজ শাড়ী লাল পাড় পড়ার চল আসেনায়। ট্রেন এর জন্য অপেক্ষা করছি। ট্রেন চলে যাবে, গেট উঠবে আমরা স্কুলে যাবো। ওইতো ট্রেন আসছে। মেয়েটা পায়চারি করছে রাস্তায় । ট্রেন খুব কাছে চলে আসছে, ট্রেন যাচ্ছে। ঠিক তখনই মেয়েটা ঝাপ দিল। কিছু বুঝে উঠার আগেই ট্রেন চলে গেল। মেয়েটা একটা কাটা পা থাই থেকে নিচের অংশ রেল লাইনের উপর ধরফর করছে। মাথাটা ছিটকে কোথায় জানিনা , সবুজ শাড়ী বডিটা নিথর। পুরো ঘটনাটা দুই মিনিটের । আমরা হতভম্ব। আমরা আর স্কুলে যেতে পারিনি। বাসায় ফিরে এসে বলা মাত্র মামা আর নানী লাশটা দেখতে গেল রেল লাইনে। পরে জানা গেল মেয়েটা আমাদের পাশের গলিতে থাকতো। আগের রাতে ওর গায়ে হলুদ ছিল। ভালবাসার মানুষকে না পাবার আতঙ্কে এই সিদ্ধান্ত।

- Advertisement -

ঝালমুড়ি আড্ডায় আমার শাড়ীটা অবিকল তাই ছিল। ওইদিন ইচ্ছা করেই গাদা ফুল গুলা পড়েছিলাম। পার্কে দুপুরে বসে আছি একা। টিমের কেউ এসে পৌছায়নি। ইফতেখার একটা গাড়ী নিয় ব্যাক এন্ড ফোর্থ জিনিষ আনছে। আমি অবিকল সেই মেয়েটার পোশাকে। বসে বসে ভাবছি, আচ্ছা সেদিন যদি ও এত বড় একটা ডিসিশন না নিত আজকে তাহলে ওর বয়স হত ৫০ প্লাস। কি জানি হয়তো ভীষন সুখী হত তার দুই মেয়ে এক ছেলেকে নিয়ে। কি জানি , হয়তো ভীষন অসুখী হত জীবনে ; তবু চান্সটা তো নেয়া হত!

ওটাআমার জীবনে দেখা প্রথম লাশ। গ্রেড টু তে দেখা। ভাবতাম খুব কম বাচ্চায় এধরনের কিছু এক্সপেরিয়েন্স করে এত ছোট বয়সে।

২০১৬ শাল। ৩০শে অক্টোবর হ্যালোইনের আগের রাত। বাবুন সবে মাত্র গ্রেড ওয়ানে। ম্যাসিতে থাকি।৭ ক্রিসেনটের সোহানা ফোন দিয়ে বলল আপু বাসায় চলে আস। ওর বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়ে দাড়িয়েছি। অনেক জোরে উপর থেকে ঝুপ করে একটা বস্তা পড়লো বাসার সামনের ঘাসে। ভীষন জোরে । বাবুন আর আমি দেখলাম দাড়িয়ে। বস্তা ছিলনা। একটা লোক উচু তলার বারান্দা দিয়ে লাফিয়ে পড়েছিল। বাবুন এক্সপেরিয়েন্স করলো তার দেখা প্রথম মৃত্যু। পুলিশ আসলো, কত কি হল। বাসায় ফিরে এলাম। রাত মনে হয় তখন দশটা। ঢাকা থেকে ফোন আসল। রুপক শোন, কনক আর নাই । ও একটু আগে মারা গেছে। কে যে ফোনটা করেছিল কোনোদিন মনে করতে পারলাম না। আমি আর বাবুন এক্সপেরিয়েন্স করলাম আমাদের সব থেকে কাছের মানুষের মৃত্যু …..

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent