রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

চেনা জীবন কোথায় হারিয়ে গেল

সামিয়া এই ঠিক আছো, হারুন ডাকে উৎকণ্ঠ হয়ে।
যেন গভীর ঘুমের ভিতর থেকে জেগে উঠে সামিয়া, বড় বড় চোখ করে তাকায় হারুনের দিকে।
─ কি হয়েছে?
─ কিছু না। সব কথা মনে পড়ে গেল তো কেমন অস্বস্তি কষ্ট লাগে, দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব হারুন।
─ ঠিক আছে করবে। আমাদের ক্যাম্পে বেশ কিছু মেয়ে আছে যারা মুক্তিযোদ্ধা।
─ কি করে তারা ?
─ হাসপাতালে রোগীদের সেবাযতœ। কেউ গান করে উৎসাহ দিচ্ছে। কেউ দেশের বাইরে খবর পৌঁছানোর সাহায্য-সহযোগিতার চেষ্টা করছে। বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে যে যেভাবে পারছে। তুমি তো অলরেডি যুদ্ধ করছো সামিয়া। আমি এখনও কিছু করতে পারলাম কই?
এই যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তুমি একা এখানে থাকলে, আমার দেখাশোনা করলে এট কি কম? আমি কে, চেনা নেই, জানা নেই।
সামিয়া অবাক হয়ে তাকায় হারুনের দিকে।
ঠিক তাই, অবাক হওয়ার কিছু নেই। দেশের ভিতরের মানুষ একে অপরকে যেভাবে সাহায্য করছে। মুক্তিযোদ্ধাদের থাকতে দিচ্ছে খেতে দিচ্ছে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অকল্পনীয়। মানুষ মানুষের জন্য বুঝেছো সামিয়া সবাই যুদ্ধে সাহায্য করছে।
কিন্তু ঐ মানুষগুলো মানুষের জন্য না?
হা হা হা হেসে উঠে হারুন, তুমি এখনো ওদের মানুষ ভাবছো সামিয়া! ওরা তো মানুষ না, ওরা পশুরও অধম জানোয়ার।
তুমি চিন্তা করতে পারবে না হারুন একরাতে কীভাবে আমি সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। শেষমেশ যাও ছিল শাহরিয়ার আর বাবুয়া ভয়ের চোটে দৌড়াতে দৌড়াতে তাদেরও হারিয়ে ফেললাম।
থাক এসব কথা। এখন দেখো আবদুল হাসিম তাদের বাড়ির জিনিসপত্র বেঁধে-ছেদে রওনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কাল রাতে গুলির আওয়াজ কোনোদিক থেকে আসছিল ধারণা করতে পারো কি?
সামিয়া হাত উঠিয়ে দেখায়, মনে হয় ঐ দিকে।
পশ্চিম দিকে তাহলে।
ঘরের ছোট খিড়কি দিয়ে সামিয়া দেখতে পায় নিঃশব্দ পায়ে উঠান পেরিয়ে উঠে আসছে শিবু। তাড়াতাড়ি উঠে দরজা খুলে দেয়।
শিবু ঘরে ঢুকে হারুনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে─কেমন দাদা, এখন ভালো?
সামিয়াই জবাব দেয়, আজই উঠে বসেছে।
যাক বাঁচা গেল, দিদি কিন্তু অনেক করেছে।
তা ঠিক, নইলে গেছিলাম এইবার। তোমাদের খবর বলো, বাইরের খবর কিছুই তো জানি না।
গতরাতে অনেক ফাইট হইছে বেটাদের অবস্থা কাহিল। তবে আমাদের দ্রুত সরে পড়তে হবে। আর্মির নতুন দল আসছে ঢাকা থেকে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে পড়ি চলো। গ্রামের পর গ্রাম জনমানব শূন্য খালি। ওরা এখন এইসব বড় বাড়িগুলো দখল করে ঘাঁটি বানাবে আর যেসব লোক আছে গ্রামে তাদের কিছু আবার শান্তি কমিটি আর রাজাকার দলে যোগ দিয়ে মুক্তিবাহিনীদের চিনিয়ে দিচ্ছে মিলিটারির কাছে। তাই আমাদের অনেক সাবধানে চলতে হবে।
দাদা একটু খেয়ে নিবেন?
খাওয়া থাকলে সাথে লন দিদি নৌকায় খাওয়া যাইব। এখন আর দেরি করা ঠিক না।
মিনিট পাঁচের মধ্যে বেরিয়ে পড়ে তিনজন। বাড়ির পিছন দিকে গাছপালার আড়ালে সন্ধ্যার আধো অন্ধকারে হাঁটে নদীর দিকে। নদী খুব বেশি দূরে নয় এই পথে। তবু ওরা দ্রুত পা চালায় পিছনে কি যেন ধেয়ে আসছে। নৌকায় বসার পর খানিকটা স্বস্তি, যদিও এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে বিপদসংকুল। নৌকায় একটা ছেলে বসে আছে। ওর নাম সীমান্ত। ঠোঁটের উপর গোঁফের রেখা দেখা যায় কি যায় না এমনই কিশোর বয়স। সীমান্ত এই এলাকার বাসিন্দা। পথ ওর খুব ভালো চেনা। খেয়া নৌকার মাঝি ছিল ওর বাবা, বাবার সাথে সাথে সেও নৌকা বায়। যুদ্ধের মাঝে ওর বাবা মুক্তিযুদ্ধ করছে। দিদি আর মা ওপারে ইন্ডিয়ায়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত মানুষদের পারাপার করে পৌঁছে দিচ্ছে ওপারে। দ্রুত হাত চলছে সীমান্তের কিন্তু পানিতে শব্দ উঠছে না তেমন। শব্দ না করে কীভাবে বৈঠা চালাতে হয় সে কৌশল আবিষ্কার করেছে সীমান্ত।

- Advertisement -

অনেকটা পথ দ্রুত হেঁটে এসে হারুনের ক্লান্তি লাগছে আবার। শুয়ে আছে চুপচাপ। শিবু সব মিলানো খিচুড়ি খেয়ে বলছে অমৃত খেলাম দিদি। সামিয়া চুপচাপ বসে ভাবছে জীবনটা কোথা থেকে কোথায় ভেসে যাচ্ছে। নৌকার এই চলা শেষ হবে কি আদৌ। পৌঁছাতে পারব তো বর্ডার ক্রস করে ওপারে। যতবার ওরা রওনা দিতে গেছে, মিলিটারি এসে পড়েছে সেপথে, অন্য পথে দৌড়ে পালিয়েছে। বেঁচে থাকা দু’টি আপনজন তারাও কোথায় হারিয়ে গেল। বাবুয়া ছোট বাচ্চাটাকে কোথায় ফেলে চলে এলাম আমি। বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিরে আসে সামিয়ার। উথালপাথাল কষ্ট হতে থাকে, এখন আর কান্না পায় না আগের মতন। চোখ জ্বালা করে, গলা শুকিয়ে উঠে। সব হারিয়ে এক ফাঁকা অনুভূতি নিয়ে বেঁচে আছে। এতদিনের চেনা জীবন কোথায় হারিয়ে গেল ?

অবশেষে আর কোনো অসুবিধা হয়নি। সীমান্ত ওদের নিরাপদে সীমান্ত পার করে দিয়েছে। নদী পার হয়ে হেঁটে ভোর রাতে ওরা ক্যাম্পে পৌঁছেছে। নিজের ঘরবাড়ি ছেড়ে এসে এখানে এক অমানুষিক জীবনযাপন করছে মানুষ। তবু জীবনের নিরাপত্তাটুকু আছে। গোলাগুলি আগুন যে কোনো সময় মরে যাওয়ার চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত নয়। তবে মরছে মানুষ প্রতিনিয়ত, বর্ডারের কাছে তুমুল যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধ চলছে ঢাকায়, বিভিন্ন শহরে। প্রতিদিন কারো না কারো কেউ মারা যাচ্ছে। একঝাঁক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাকশনে যায় তার মাঝে অনেকে ফিরে আসে না। কেউ আসে আহত হয়ে।
বেশি আহতরা ডাক্তারদের অনুরোধ করে, আমাকে নয় আমার সাথীকে দেখো। আমি এত আহত হয়েছি বাঁচব না, ওর আঘাত কম ভালো হয়ে আবার যুদ্ধে যেতে পারবে, ওকে ভালো করে দাও। এত শক্তি এত প্রাণ এত মায়া, দেশের জন্য ওরা নিজের প্রাণের মায়া করে না স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি─ওদের কাছে। ওরা হিন্দু না মুসলিম না, ওরা শুধু বাঙালি। সামিয়া ক্যাম্পের হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে। ভুলে থাকে আপন সব দুঃখ। স্টিমরোলারের নিচে এই জীবনে নিজস্ব চাওয়া-পাওয়া স্বাধ বলতে কিছু নেই। একটাই ইচ্ছা প্রার্থনা মনে দেশ স্বাধীন হওয়ার।
মাস চার পরে একদিন সকালে সামিয়া হাসপাতালে যাবার পথে ওর সামনে হাঁটতে থাকা একজন মানুষকে দেখে চমকে উঠে। লম্বা, চওড়া কাঁধের মানুষটি কে? বন্দুক কাঁধে ঝুলিয়ে দৃঢ় প্রত্যয়ে হেঁটে যাচ্ছে। চুল কাঁধ পর্যন্ত লম্বা মানুষটি কে? সামিয়া জোরে হাঁটে লোকটাকে ধরার জন্য কিন্তু লোকটার চলার সাথে তাল মেলাতে পারে না, প্রায় দৌড়ায় ও পিছনে পিছনে। লোকটা আরো দ্রুত হাঁটে, বাঁক ঘুরে চলে যাচ্ছে অন্যদিকে। আবছা মুখের অবয়ব দেখে চিৎকার দিয়ে ডাকে সামিয়া, শাহরিয়ার…

লোকটা থেমে যায়, পিছন ফিরে দেখে। সামিয়ার দিকে চোখ পড়তে দৌড়ে আসে─সামিয়া তুই বেঁচে আছিস?

শাহরিয়ার তুই এখানে! জাপটে ধরে সামিয়াও দৌড়ে গিয়ে শাহরিয়ারকে। টকটকে ফর্সা রঙ কেমন তামাটে হয়ে গেছে। রোগা হয়ে গেছে শাহরিয়ার। ঝলমলে সৌন্দর্যের সামিয়া কেমন ম্লান, রোগা হয়ে গেছে দেখে শাহরিয়ার। মুখটা শুকনো তবু বেঁচে আছে এই বড় কথা।

অনেকদিন পর চোখের জল ফেলে সামিয়া একজন আপনজন ফিরে পাওয়ার আনন্দে। সাথে একবুক ভয় নিয়ে জিজ্ঞেস করে, বাবুয়া?
শাহরিয়ার শুধু দু’পাশে মাথা নাড়ে। ধীরে উচ্চারণ করে, পাইনি।

মিলিটারির হাতে প্রায় ধরা পড়ে যাচ্ছিল ফিরে গিয়ে। পালাতে পালাতে কোথায় যে চলে গেল নাম- ঠিকানাবিহীন সামিয়াকে রেখে যাওয়া সেই গ্রামে আর ফিরার পথ পায়নি। ভাসতে ভাসতে অন্য পথে বর্ডার পাড়ি দিয়ে এক ক্যাম্পে পৌঁছে মুক্তিযোদ্ধার খাতায় নাম লেখায়। বিভিন্ন জায়গায় যুদ্ধ করেছে। দিন দুই হলো এই ক্যাম্পে এসেছে একটা খবর নিয়ে। দু’চার দিনের মধ্যে চলে যাবে। এবার ও ঢাকা যাবে। যদি মা-বাবার সাথে দেখা হয় বলো, আমি ভালো আছি। বেঁচে থাকলে দেশ স্বাধীন হলে দেখা হবে। শাহরিয়ার তুই লন্ডনে ফিরে যাবি না?
বেঁচে থাকলে দেশ স্বাধীন হলে ফিরব।

শিবু, হারুন মাঝে মধ্যে আসে, মাঝে মধ্যে উধাও হয়ে যায় আবার। আর কোনোদিন এ জীবনে দেখা হবে কিনা সে দুরাশায় স্বপ্ন বুনে সামিয়া। ফিরে এলে বড় আনন্দ হয়। কবে এ যুদ্ধ শেষ হবে? দিন দিন ভয়াবহতা বাড়ছে। ওপারে মেয়েদের উপর অত্যাচারের কাহিনী, তাদের ছেঁড়াখুঁড়া শরীরের বর্ণনা শুনে শিউরে উঠে সবাই। রাজাকারদের তৎপরতা ভয়াবহভাবে বেড়েছে। ওদের সাহায্যে পাকিরা এখন পথ খুঁজে পাচ্ছে। এতদিন ভরা বর্ষায় আর অচেনা রাস্তাঘাটে হাবুডুবু খেয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারাও ওদের নাকানি-চুবানি খাওয়াচ্ছিল ভালো মতন। বিশেষ করে ঢাকায় গেরিলা আক্রমণে অস্থির করে তুলেছিল পাকিদের বিচ্ছুরা। স্বাধীন বাংলা বেতারের এম আর আখতার মুকুল নামের এক লোক ঢাকাইয়া ভাষায় অনেক মজা করে যুদ্ধের বর্ণনা দেন। গেরিলাদের নাম দিয়েছেন বিচ্ছু । এই নাম সবার মুখে মুখে, বিচ্ছুদের আক্রমণে ঢাকা সরগরম। কীভাবে দিনে দুপুরে ফেলে দিচ্ছে পাকিদের। বোমা ফোটাচ্ছে যত্রতত্র। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে, ফার্মগেইট, ডিআইটি ভবন, নিজ বাসভবনে প্রাক্তন গভর্নর মোনায়েম খাঁকে গুলি করে মেরে ফেলেছে বিদেশি মেহমানদের সামনে।

এসব শুনলে বড় আনন্দ হয়। মানুষ আগ্রহভরে অপেক্ষা করে বিচ্ছুদের অ্যাকশন শোনার। খাওয়া না খাওয়া মানুষগুলোর চোখ স্বাধীনতার দৃপ্ত চেতনায় জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। অল্প ক’দিনের ট্রেনিংপ্রাপ্ত হয়েই, বাঘের মতন ঝাঁপিয়ে পড়ছে সুরক্ষিত সুশিক্ষিত একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীর সাথে লড়তে। অসম্ভব মনোবল স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার সুদৃঢ় ইচ্ছায় হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, সব ধর্ম বর্ণ ধনী-দরিদ্র, কিশোর, যুবা, প্রৌঢ়, বৃদ্ধ, নারী, ছাত্র, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অফিসার, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মাঝি, জেলে, তাঁতী, কৃষক, শ্রমিক, রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক, সেনা, পুলিশ, আনসার সর্বস্তরের মানুষ মতভেদ ভুলে, দলমত নির্বিশেষে এক পতাকাতলে এক উদ্দেশ্যে একত্রিত হয়েছে। স্বাধিকার, স্বাধীনতা, বাঙালির অস্তিত্বের প্রশ্নে কোনো মতভেদ নয়। হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভুলে গেছে ওরা ঘরবাড়ির ঠিকানা, দিন রাত্রি, প্রিয়ার মুখ, শিশুর হাসি।
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি…
একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি…

সামিয়াও ভুলে যেতে চায় সব শোক-তাপ, সব হারানোর ব্যথা। শাহরিয়ারের সাথে সেই দু’দিনের দেখা, কোথায় চলে গেল আবার, কোনো খবর জানে না। কোথায় কেমন আছে, আবার কবে দেখা হবে, আল­াহ ওকে ভালো রেখো। মনে মনে প্রার্থনা করে সামিয়া।
দিন দিন যুদ্ধের ভয়াবহতা বাড়ছে। মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে মারা যাচ্ছে। আগে যেমন পাকিরা বুঝতে পারত না। মুক্তি কারা, এখন সেই মুক্তিদের চিনিয়ে দিতে সাহায্য করছে তাদের দোসর রাজাকাররা। ঢাকায় অনেক গেরিলা ধরা পড়েছে আগস্ট মাসে। বদি, রুমি, আজাদ, চুলু, আলতাফ মাহমুদ ধরা পড়েছেন এমন আরো অনেকের নাম শোনা যায়। রাজাকারদের জন্য মিলিটারি এখন সহজে খুঁজে পেয়ে যাচ্ছে গেরিলাদের আস্তানা। আহারে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের ধরে নিয়ে কি অমানুষিক নির্যাতন করছে। কাউকে না পেলে তার পুরো পরিবারের লোকদের নিয়ে যাচ্ছে। এসব দুঃখ-দুর্দশার কথা আর সহ্য হয় না। কবে শেষ হবে যুদ্ধ?

ইসরাত, শিবু, সাদেকীন, হারুন, কলিমদের সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। হারুন একদিন বলে গেল ঢাকা যাচ্ছে। সামিয়া ওর বাড়ির ঠিকানা দিয়ে দিল। আমার বাবা, ভাই, মা কেমন আছে দেখে এসো যদি পারো। মাসের বেশি সময় হারুন গেছে, ফিরে আসেনি এখনো। কোনো খবর পায়নি এ পর্যন্ত। যেভাবে ঢাকায় ধরপাকড় হচ্ছে ভয়ে হাত-পা কাঁপে সামিয়ার। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের এক একটা দল ঢাকায় এগিয়ে যাচ্ছে। দুঃসাহসে ভর দিয়ে অসম্ভব মনোবল ওদের। সাথীদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মা মাটির মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত ওদের বিশ্রাম নেই। ঘুম, খাওয়া, বিশ্রামের খবর নেই। সারাক্ষণ অস্থির টান টান উত্তেজনা শত্র“ নিধনের। সারাদেশের বর্ডারজুড়ে যুদ্ধ চলছে। এছাড়া ব্যাপক আক্রমণ চলছে ভিতরে। কুলসুম বিবি, মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা-শুশ্রƒষা করছিল। সেও নাকি চলে গেছে যুদ্ধে। আপনজন সব হারিয়েছে। বাবা-মার খবর জানে না। যাদের সাথে চলাফেরা, যাদের সাথে পরিচয় তারাই এখন আপনজন। তাও কেউ স্থায়ীভাবে থাকছে না।

- Advertisement -

Read More

Recent