রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

কিলিং ইজ এ্যন এ্যাক্ট অফ পারভার্সন

বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরী

বর্তমানে কানাডা অবস্থানরত লে. ক (অব) নূর একজন আত্মস্বীকৃত খুনী।
তবে ওকে সাধারন খুনী বলা যাবে না! সাধারন একজন খুনীর মতো যদিও পালিয়ে থাকতে হচ্ছে ওকে। কখনো সবুজ, কখনো বা লাল পাসপোর্টের ছত্রছায়ায় প্রাণভয়ে দৌঁড়–তে হচ্ছে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, এক দেশ থেকে আরেক দেশে। সাধারন খুনীরা কাউকে খুন করার পর দম্ভোক্তি করে এমন শুনিনি কখনো। খুনী নূরেরা করে ছিল। ওর হাতেই খুন হয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু। কাপুরুষের মতো রাতের অন্ধকারে ওরা হানা দিয়েছিল ৩২ নম্বরে। নূরের সাব-মেশিন গান ঝাঝড়া করে দিয়েছিল যেন বাংলাদেশের কোমল মানচিত্র। সিঁড়ির উপর মুখ থুবরে পরে থাকলো ৫৬ হাজার বর্গমাইল। বাংলাদেশ জুড়ে সহসাই যেন নেমে এল অমাবশ্যার গাঢ় অন্ধকার।
৩৪ বছর পর, নাউ ইজ দ্যা পে ব্যাক টাইম, আজ ওকে তাড়া করছে আইনের দীর্ঘ হাত, বিচারের রায় আর ফায়ারিং স্কোয়াডের সোনালী বুলেট। পরশু মন্ট্রিয়াল, কাল অটোয়া, আজ টরন্টো, এইভাবে চার দেয়ালের বদ্ধ ঘরে প্রাণ হাতে নিয়ে এখন ওকে ছুটোছুটি করতে হচ্ছে কক্রোচের মতো। ওর কাছের-দূরের চাকর-বাকরেরা সুচতুর ভাবে সুকৌশলে এখান থেকে যতই মিথ্যা প্রচারনা চালাক না কেন, প্রকৃত সত্য এই যে, ক্রমশ খুব ছোট হয়ে আসছে খুনী নূরের পৃথিবী। মিথ্যাচারে ভরা চাতুর্যময় ওর রাজনৈতিক আবেদন প্রত্যাখান করেছে কানাডা সরকার, বন্ধ হয়ে গেছে আপিলের সবগুলো দরোজা। নাউ হজ দ্যা পে ব্যাক টাইম।
এখন সবার প্রশ্ন, কোথায় পালাবে ও, পালাবে কোথায়? আপন ছায়াও আজ ওকে দেখে দূরে সড়ে যায়, ভয়ে নয়, ঘৃনায় ঘৃনায়! (এমন কি মোনাফেক, সন্ত্রাসী লিবিয়ান একনায়ক মোয়ামের কাজাফি (গাদ্দাফি)ও হাত গুটিয়ে নিয়েছেন। যিনি এক সময় এইসব ঘৃণীত কাপরুষদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তার দেশে। খুনীদের ধরতে এবং দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে এখন অই আফ্রিকান দেশটিতেও বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা টিম কাজ করছে বলে জানা গেছে।)
১৯৭৫ সালের আগষ্টের ১৫ তারিখে মানব ইতিহাসের বর্বরতম পৈশাচিক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে ফারুক, রশীদ, ডালিম, হুদা, নূর গং বিভিন্ন দেশের বিমান বন্দরে সংবাদ সম্মেলন করে অই পৈশাচিক হত্যাকান্ড সম্পর্কে দম্ভোক্তি করেছিল। ওরা নিজেরাই নিজেদের আখ্যা দিয়েছিল ‘সূর্য-সন্তান’ বলে!
কিন্তু জাতির জনক রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিধ, নিরপরাধ শিশু-কিশোর এবং বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলাদের যারা নির্দয় নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে পারে তাদের ‘সূর্য-সন্তান’ বলা পাপ। ‘সূর্য-সন্তান’ নয়, জাতি ওদের ‘জারজ সন্তান’ হিসেবে জানে।
স্বৈরাচার এরশাদের তাবেদার খুনী ফারুক যখন তথাকথিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ‘নামকাওয়াস্তে’ প্রার্থী
হয়েছিল তখন আমি ওর একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, টেপ-রেকর্ডারে ধারনকৃত অই সাক্ষাৎকারে
আমি এক পর্যায়ে জানতে চেয়েছিলাম, ‘…নিরপরাধ শিশু রাসেল’কে কেন নির্মমভাবে হত্যা করা
হল ? কেন গর্ভবতী নারীদের হত্যা করা হল?’ ওরা যে কতোটা কাপুরুষ, নিষ্ঠুর ও বর্বর তার প্রমান
রয়েছে খুনী ফারুকের উত্তরে, ‘…ভায়োলেন্সে এরকমই হয়। ভায়োলেন্সকে কন্ট্রোল করা যায় না। এন্ড ভায়োলেন্স ইজ অলওয়েজ ব্রæটাল। ১৫ তারিখে আমাদের যে টেকনিক ছিল তাতে তো ভায়োলেন্স হবেই।’
খুনীদের মদদদাতা বিশ্বাসঘাতক মোশতাক, সেনা-আইন লঙ্ঘন করে পেছন দরোজা দিয়ে রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতা দখলকারী তৃতীয় বিশ্বের খুঁদে একনায়ক লে.জে. জিয়া ও স্বৈরাচারী শাসক এরশাদ এই
তিন কুচক্রের কারনে রুদ্ধ হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার। এরা, বিচার করাতো দূরে থাক, উল্টো
খুনীদের পুরস্কৃত করেছিলেন বিভিন্ন দেশে কূটনৈতিক মিশনে উচ্চ পর্যায়ের দায়ীত্ব দিয়ে। যে কারনে জাতিকে ৩৪ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বিচারের রায় ঘোষনার হিরন্ময় মুহূর্তটির জন্যে। ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের মতো, আমরা যারা প্রবাসে আছি, আমাদেরও থাকতে হবে সজাগ ও সতর্ক। জেগে থাকতে হবে বিচারের রায় বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত। জেগে থাকতে হবে যে পর্যন্ত না একজন খুনীও বিদেশের মাটিতে আত্মগোপন করে থাকতে পারে।
আজ যারা বিদেশে বসে এইসব কাপুরুষদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে তাদের স্বরণ করিয়ে দিতে চাই
যে, বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে খুনীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আর এই
শাস্তিযোগ্য অপরাধের তোয়াক্কা না করে যারা বিদেশে বসে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে খুনীদের সাহায্য করে যাচ্ছে তাদের সনাক্ত করতে হবে। ক্ারন তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এবং বিচারের রায় বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

শান্তির দেশ কানাডা খুনীদের অভয়ারণ্য হতে পারে না।
কিলিং ইজ এ্যন এ্যাক্ট অফ পারভার্সন। কানাডাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশী
নাগরিকদের উচিত বিচারের রায় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে খুনীদের আশ্রয় না দেয়া এবং গনধিকৃত, বিকৃত-মস্তিষ্কের, নিষ্ঠুর খুনী নূরকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ সরকারের হাতে তুলে দিতে কানাডাকে বাধ্য করা।

- Advertisement -

ইস্টইয়র্ক, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent