রবিবার - মে ১২ - ২০২৪

প্রহেলিকা তো প্রহেলিকাই

রিলিজের আগে মাহফুজের কিছু সাক্ষাৎকার আর সিনেমাটির ট্রেইলার সেই আগ্রহকে বাস্তবায়নের দিকে ধাবিত করল

বহু দিন পর অভিনেতা মাহফুজ আহমেদের সিনেমা!মনা চরিত্রের জন্য মাহফুজের অনেক প্রস্তুতি সিনেমাটি নিয়ে আগ্রহী করে তুলেছিল। রিলিজের আগে মাহফুজের কিছু সাক্ষাৎকার আর সিনেমাটির ট্রেইলার সেই আগ্রহকে বাস্তবায়নের দিকে ধাবিত করল!

স্পয়লার এলার্ট:

- Advertisement -

ফেরারী আসামী মনা আশ্র‍য় নেয় বাবার পরিচিত এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে।প্রথম দিনেই তাকে মুখোমুখি হতে হয় আগাগোড়া রহস্যাবৃত জামশেদের রূঢ় ব্যাবহারের সাথে।যাতে মনা যারপরনাই ভড়কে যায়।জামশেদের স্ত্রী অসম্ভব রূপবতী অর্পা,যার রুপে মোহিত হয়ে না থাকাটা কষ্টকরই!কিন্তু সেই অর্পাই কেন তাদের বাড়িতে আশ্রিত মনার প্রতি আকৃষ্ট হতে থাকে?মনার পক্ষে তো সেই ডাক উপক্ষা করা অসম্ভবই! জামশেদ একজন ক্লাসিকাল সংগীত চর্চাকারী মানুষ,তার আচরণ কেন হবে এই রকম রূঢ়?অর্পাকে অত্যাচার করে সে তার কোন দু:খ, কষ্টকে আড়াল করতে চায়?শুধুই কি শারিরীক মিলনে অক্ষমতা?নাকি তার দুর্বিষহ শৈশবের স্মৃতি?এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বেশ সুন্দরভাবেই পাওয়া গেল।

কিন্তু যে চরিত্রটি সিনেমার  প্রটাগোনিস্ট সেই মনা চরিত্রের কোন কূল কিনারা খূজে পেলাম না!কেনই বা সে অপরাধ করে?অপরাধের স্পষ্টত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মনাকে বলতে শোনা যায় তার অপরাধ প্রমাণহীন।অতি সুক্ষ্ণভাবে  অপরাধ না করেও  আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেও সে ঘোল খাইয়ে ফেলে।অর্পার প্রতি এত প্রেম এত ভালোবাসা মুহুর্তেই কিভাবে কর্পূরের মত উবে গেল সামান্য একটু সন্দেহে?যার কোন দৃশ্যমান প্রমাণও তার কাছে ছিল না!এর কি ব্যাখ্যা থাকতে পারে আমি জানি না!পুরো সিনেমাতে এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর আমি পাই নাই।

এবং মনাকে নিয়ে যে রহস্যটা শুরু থেকেই থাকে তা উন্মোচনের পর,আরো অবাক হতে হয় এইভেবে যে পুরো সিনেমাতে এমন ভাবে হাইলাইট করা হয়েছিল মনে হয়েছিল অনেক রহস্যের সমাধান সেখানেই লুকিয়ে আছে কিন্তু না!বরং এইটার কোন যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা নাই ইভেন মনার চরিত্রে এর কোন ইম্প্যাক্টও দেখতে পেলাম না।ফলশ্রুতিতে পুরোটাই খেলো হয়ে গেল,বাহুল্য মনে হল।

অর্পার চরিত্রটি বেশ শক্তিশালী ছিল সিনেমাটিতে।অর্পাকে বিভিন্ন রকম পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।অন্ধকার জগত থেকে ঝলমলে আলোর জগতে আগমন জামশেদের সংগীত জাদুতে মুগ্ধ হয়ে।কিন্তু সেই আলোর পেছনেই ছিল নিকষ অন্ধকার যা অর্পাকে ক্রমান্বয়ে নি:শেষ করে দিচ্ছিল!সেই মুহুর্তেই ফেরারি মনার আগমনে অর্পা যেন খুজে পেল তার নষ্ট জীবনে বেঁচে থাকার নব প্রেরণা!মনা যেন হয়ে উঠল অর্পার পরশ পাথর।

তো প্রভাবশালী জামশেদকে রুখতে  কি পারবে মনা?অর্পার পক্ষে কি সম্ভব ভাগ্যের দুষ্টচক্র থেকে বের হওয়া?

সব উত্তরই পেলাম,কিন্তু মনমত হল না এইটাই আফসোস। অবশ্য আফসোস শুধু এইটা বললে ভুল হবে এর থেকেও বেশি আফসোস এত সুন্দর ব্যতিক্রমী একটা প্লটের এহেন করূণ পরিণতি!পরিচালক সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ হলেন জমজমাট একটা গল্পের যথাযথ চিত্রায়নে।

অনেকের কাছেই প্রশংসিত হলেও আমি একরাশ হতাশা নিয়েই ফেরত আসলাম!

সিনেমায় গানের আগমন হয় গল্পের সিকোয়েন্স অনুযায়ী। আর গানের প্লেসমেন্ট এমন হওয়া উচিত গল্পের গতিকে যেন তা বাধাগ্রস্ত না করে।প্রথমার্ধ জুড়ে এত গান প্রচন্ড বিরক্তির  উদ্রেক করে।যা এই সুন্দর গানগুলোর প্রতিও এক ধরনের অবিচার।এখনকার দিনে গানের মাধ্যমে নায়িকার পর্দায় আগমন একেবারেই অযৌক্তিক। আর গান যদি দিতেই হয় কিছু অংশ ব্যাকগ্রাউন্ডে দিলেই হয়।সম্পুর্ন গান দিতেই হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতাও নেই।।মনে হচ্ছিল যেন মিউজিক্যাল ফিল্ম!

জামশেদ চরিত্রে এলেন স্বপণ খ্যাত নাসির উদ্দিন যেন নতুন করে আরো একবার নিজের জাতটা চিনালেন।কি দুর্দান্ত অভিনয় ভাই রে ভাই।মাহফুজ থাকা সত্ত্বেও সব আলো নিজের দিকে নিয়ে নিলেন!

টান ওয়েব ফিল্মে নতুন করে আবিষ্কার করা অভিনেত্রী বুবলী যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার নেশায় মত্ত।অর্পার মত একটা ধূসর চরিত্রের স্বার্থক রুপায়ন আর সৌন্দর্য যেন ঠিকরে বেরোচ্ছিল।বুবলী যে এত সুন্দর কখনো বুঝি নাই!

মনা চরিত্রে মাহফুজের কোন কমতি ছিল না!পুরা সিনেমা জুড়েই কেমন জানি খালি খালি। লাগছিল মাহফুজকে।শেষের ১৫-২০ মিনিট যেন ওয়ান ম্যান শো!কি শক্তিশালী অভিনয়,মাহফুজ প্রমাণ করলেন তিনি এখনো ফুরিয়ে যান নি।শুধু  আফসোস পরিচালক তো তাকে যথাযথ সুযোগ দিতেই ব্যর্থ হলেন।

পুলিশ চরিত্রে রাশেদ মামুনও বরাবরের মতই ভালো করছেন।তবে তার কিছু দৃশ্য অযৌক্তিক এইটাও পরিচালকেরই দোষ।

অনেক দিন পর আমাদের দেশের কোন সিনেমার সংলাপ আমাকে এত আলোড়িত করল।এত সুন্দর, শক্তিশালী সংলাপের জন্য পান্থ শাহরিয়ারকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়।

এছাড়া সিনেমাটোগ্রাফি,বিজিএম সেট ডিজাইন সুন্দর ছিল।কিছু কিছু  শট আপনাকে বিমোহিত করতে বাধ্য!

পরিশেষে বলতে চাই আশার পারদ খুব একটা উচুঁতে ছিল না কিন্তু মানুষের প্রশংসা পারদটা উচুঁতেই নিয়ে গিয়েছিল।যা আর শেষ পর্যন্ত অক্ষুণ্ণ থাকল না।প্রহেলিকা আমার জন্য প্রহেলিকাই হয়ে রইল..

- Advertisement -

Read More

Recent