অ্যাস্টারয়েডের নমুনা সংগ্রহের জন্য উৎক্ষেপণের সাত বছর পর নাসা নেতৃত্বাধীন নভোযান ওসিরিস-আরএক্স রোববার বিরল কার্গো সরবরাহ করেছে। এর মধ্য দিয়ে কানাডা অ্যাস্টারয়েডের নমুনা পাচ্ছে।
অ্যাস্টারয়েডের নমুনা সংগ্রহের জন্য নভোযানটি ২০১৬ সালে মহকাশে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে সৌর ব্যবস্থার গঠন সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যাবে বলে ধারণা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ২০১৮ সালে নভোযানটি বেনু নামের অ্যাস্টারয়েডটির চারপাশে প্রদক্ষিণ করা শুরু করে এবং ২০২০ সালে একটি নমুনা সংগ্র করে।
২০২১ সালে নভোযানটি পৃথিবীর পথে যাত্রা শুরু করে এবং পাথর ও মহাকাশেল ধূলিসহ একটি ক্যাপসুল রোববার উটাহ মরুভূমিতে অবতরণ করে। এরপর মহাকাশযানটি আরেকটি অ্যাস্টারয়েডের উদ্দেশে যাত্রা করে।
এই অভিযানে কানাডা একটি লেজার অ্যাল্টিমিটার সরবরাহ করে। ডিভাইসটি দিয়ে উচ্চতা ও দূরত্ব পরিমাপ করা হয়ে থাকে। এই ডিভাইসের কারণে আমাদের সৌর ম-লের সবচেয়ে নিখুঁত জরিপ সম্ভব হয় বলে জানান কানাডিয়ান স্পেস কোম্পানি এমডিএ লিমিটেডের প্রকৌশলী ক্যামেরন ডিকিনসন। কোম্পানিটি মহাকাশজানটির কানাডিয়ান অনুষঙ্গ তৈরি করেছে।
দুই বছর ধরে শত শত কোটি পরিমাপ নেওয়ার মাধ্যমে ওলা নামে পরিচিত কানাডার অ্যাল্টিমিটারটি বিজ্ঞানীদের নমুনা সংগ্রহের জন্য অ্যাস্টারয়েডটির সর্বোত্তম স্থান নির্বাচনে সহায়তা করেছে। এরপর নমুনা সংগ্রহের জন্য মহাকাশযানটি কিছু সময়ের জন্য অ্যাস্টারয়েডে অবতরণ করে।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ডিকিনসন বলেন, সব মিলিয়ে আমরা ৩০০ কোটি পরিমাপের কথা ভেবেছিলাম। সুতরাং এটা এখন আমাদের অ্যাস্টারয়েডের খুবই নিখুঁত মানচিত্র সরবরাহ করছে।
ওসিরিস-আরএক্স হচ্ছে নাসার নমুনাসহ ফিরে আসা প্রথম মহাকাশযান, যেখানে অংশগ্রহণ রয়েছে কানাডারও। সেই সঙ্গে মহাকাশের কিছু পাথরের গায়ে কানাডার নাম রেখে আসা সম্ভব হয়েছে।
কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা জন মুরস এই মিশন সম্পর্কে সাম্প্রতিক এক ব্রিফিংয়ে বলেন, এই অবদানের বিনিময়ে শুরু থেকেই কানাডিয়ান বিজ্ঞানীরা ওসিরিস-আরএক্স বৈজ্ঞানিক দলে রয়েছেন। এ ছাড়া এর মধ্য দিয়ে বিশে^র পঞ্চম দেশ হিসেবে কানাডা মহাকাশ থেকে নমুনা সংগ্রহের কৃতিত্ব দেখাল।
কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানী টিম হল্টিজিন এক দশক ধরে এই প্রকল্পে কাজ করছেন। তিনি বলেন, সৌরমন্ডল গঠন প্রক্রিয়ায় পরিত্যক্ত সামগ্রী হচ্ছে অ্যাস্টারয়েড। এর একটি থেকে নমুনা সংগ্রহ চিনি অথবা ময়দা থেকে একটিমাত্র দানা বেছে নেওয়ার মতোই ব্যাপার। অথবা একটি চকোলেট চিপ আলাদা করার মতো। এর মধ্য দিয়ে আমরা সৌরমন্ডলের একেবারে কাঁচা উপাদান নিয়ে গবেষণার সুযোগ পাচ্ছি। এটা গঠিত হয়েছে শত শত শত বছর আগে।
নমুনা সংগ্রহের এই অভিযানে বেনুকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো দূরত্ব কম হওয়ায় এখানে পৌঁছানো তুলনামূলক সহজ। এ ছাড়া এটা আকৃতিতেও যথেষ্ট বড়, যেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা সহজ হয়।