রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

টরন্টো : পঞ্চান্নে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়

সিককিডস এর প্রস্তাবিত সাপোর্ট সেন্টার আরেকটি নির্মাণ বিস্ময়

শিরোনাম দেখে মনে হতে পারে এটি স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনা। স্বাস্থ্য বাহেলথ নিয়ে আলোচনা খানিকটা আছে। তবে মেডিক্যাল হেলথ নয়বরং ইঞ্জিনিয়ারিং হেলথ। ইঞ্জিনিয়ারিং পরিভাষায় ইংরেজিতে একে বলেস্ট্রাকচারাল হেলথ মনিটরিং বা এসএইচএম। প্রতিনিয়ত বিভিন্নলোডিংএর ফলে একটি ভবন বা ব্রিজের স্ট্রাকচারের ভেতর কি রকমেরস্ট্রেস এবং স্ট্রেইন হচ্ছে তা মনিটর করার নাম স্ট্রাকচারাল হেলথমনিটরিং। সাধারণ মানুষের সাথে এরকম স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের সম্পর্ক নেইবললেই চলে। থাকবেই বা কেনো? নিজের স্বাস্থ্য নিয়েই সচেতনা নাই, আবার যে ভবনে থাকছে তার স্বাস্থ্য দিয়ে কি হবে? তাছাড়া এসবপর্যবেক্ষণের জন্য একটি প্রকৌশল টিম বড় বড় ভবন, ব্রিজ এবং বাঁধেরজন্য সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকে।
টরন্টোর একটি পুরোনো ১৮ তলা ভবন। উনিশশো আটষট্টি সালেনির্মিত হয়েছিলো। সেটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রকৌশলীরা নিশ্চিত হলেনভবনটি কাঠামোগত দিক থেকে বেশ শক্তিশালীভাবেই দাঁড়িয়ে আছে।ভীষণ গুরুত্ত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা। বিশ্বখ্যাত শিশু হাসপাতাল টরন্টোসিক কিডস এবং বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব টরন্টো এইভবনের কাছাকাছি। আছে কোর্ট ভবন, ইন্স্যুরেন্স ভবন, বিখ্যাত ব্রান্ডেরহোটেল ইত্যাদি। এমন লোকেশনে মাত্র ১৮ তলা ভবন? বিষয়টি নিয়ে ভাবতে থাকে ডেভেলপার এমেক্সন কর্পোরেশন। বাণিজ্যিক সুবিধা এবংএলাকার শোভা বর্ধন দুটো জিনিস মাথায় রেখে তাঁরা স্মরণাপন্ন হলেন প্রখ্যাত আর্কিটেকচারাল ফার্ম ‘কোর আর্কিটেক্ট’ এর কাছে। প্রাথমিকসমীক্ষা শেষ করে তাঁরা জানালেন ১৮ তলা ভবনটি না ভেঙে এটিউপরের দিকে বৃদ্ধি করা সম্ভব।
প্রাথমিক সমীক্ষা রিপোর্ট পেয়ে বেজায় খুশি ডেভেলপার। হীরের খনি এইজমি। আবার একটি ভবনের ১৮তলা রেডিমেড পাওয়া যাবে। বাকিটানির্মাণ করতে পারলেই বড় অংকের মুনাফা। আগ্রহ নিয়ে আর্কিটেক্টের কাছে জানতে চাইলেন কতো তলা বাড়ানো যাবে? আর্কিটেক্ট বললেন, এটি প্রকৌশলী মহোদয়েরা বলতে পারবেনা। কারণ ভবনের নীচের ভিত্তিকতো হাজার টন ওজন বহন করতে পারবে তা আমরা জানিনা।

ভবনেরউপরিকাঠামো বাড়তি চাপ কতোটা নিতে পাবে সেসব হিসেবে করে বেরকরার দায়িত্ত্ব পুরকৌশলী বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের। সুতরাং তাঁরাপুনরায় ভবন পরীক্ষা করে কতো তলা বাড়ানো যাবে তা বলতে পারবেন।
এবার প্রকৌশলী খোঁজার পালা। নগরীর নামকরা প্রকৌশল পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিগমন্ড সুদাক এন্ড এসোসিয়েটস। মিসিসাগার টুইস্টিংমেরিলিন মনরো টাওয়ার (যা এখন এবসোলিউট টাওয়ার নামেপরিচিত) ডিজাইন করে তাঁরা বিশ্বব্যাপী খ্যাতি পেয়েছেন। প্রায় পঞ্চাশবছরের পুরোনো ১৮ তলা ভবনকে মাঝখানে রেখে নতুন মোড়ক লাগিয়েবহুতল ভবন বানানো চাট্টিখানি কথা নয়। বিশ্বে এমন নির্মাণ রেকর্ডখুঁজে পাওয়া যায়না। বিশাল চ্যালেঞ্জ ! সেই চ্যালেঞ্জ সিগমন্ড সুদাকগ্রহণ করলেন। তাঁর প্রকৌশল টিম দিনরাত পরিশ্রম করে বিশালএনালাইসিস রিপোর্ট বানালেন। প্রকৌশল গাণিতিক বিশ্লেষণে তাঁরা পূর্ণনিরাপত্তায় ভবনটিকে ১৮ তলা থেকে বাড়িয়ে ৫৫ তলায় উন্নীত করারঘোষণা দিলেন। অর্থাৎ বাড়তি ৩৭ তলা নির্মাণ করা হবে বর্তমান ১৮তলা ভবনের উপর।
ডিটেইল ডিজাইন করা হলো। পুরোনো ভবনের নিচে যে পাইলিং ছিলোতা ৫৫ তলা ভবনের লোড বহনের উপুযুক্ত ছিলোনা। কিন্তু বিশেষব্যবস্থায় মেকানিক্যাল সাপোর্টে ভবন সুরক্ষিত রেখে পাইলের মাথাউম্মুক্ত করা হয়। এর উপর বেসমেন্ট পার্কিং লটের স্ল্যাব ঢালাই দেয়াহয়। চারিদিকের গ্রেড বিমের নিচে আন্ডারপিনিং পদ্ধতিতে নতুন করেফাউন্ডেশন দেয়া হয়। এরপর ব্রেসিং পদ্ধতিতে ৫৫ তলা ভবনের লোডেরবেশিরভাগ অংশ চারদিকের গ্রেড বিমের উপর ট্রান্সফার করা হয়।উপরের প্রতি তলার কলাম ও বিমের ক্ষেত্রেও ব্রেসিং পদ্ধতি প্রয়োগ করেলোডের বেশিরভাগ অংশ বহির্ভাগে ট্রান্সফার করা করা। যদিওজ্যামিতিকভাবে যে কোনো বস্তুর লোড তার কেন্দ্র বরাবর গমন করে।কিন্তু এই ভবনের প্রকৌশলী বিশেষ টেকনিকে লোডকে কেন্দ্র থেকে সরিয়েফেলেন। পুরকৌশল বা সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংএ পুরোনো মধ্যমতলভবনকে উচ্চতলে পরিণত করা প্রায় নজিরবিহীন।
৪৮৮ ইউনিভার্সিটি এভিনিউ, টরন্টোর উপর অবস্থিত ১৮ তলাভবনটিকে ৫৫ তলায় উন্নীতকরণ শেষ হয় ২০১৯ সালের শেষদিকে।তখন ভবনের মূল ফাউন্ডেশনের বয়স ৫১ বছর। অর্ধ শতাব্দী পার করাএকটি ১৮ তলা ভবনের ৫৫ তলায় এক্সটেনশন এক পরম বিস্ময়।কানাডার প্রকৌশলীরা তা পেরেছেন।

- Advertisement -

এ্যাজাক্স, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent