রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

টরন্টোর পথ ঘাট অনেকটা ঢাকা শহরের মতো হয়ে যায়

প্লেনে আরোহনের ঘোষনা দিচ্ছে প্রথমে বৃদ্ধ তারপর শিশু ও অভিভাবক এর পর আমরালক্ষ করে দেখলাম মহিলা ও তার ছেলে ঘুমে অচেতন

কখনো বাস, ট্রেন ফেল করেছি বলে মনে পড়েনা তবে সেদিন প্লেন ফেল করতে হলো টরন্টোতে।আজকাল অফিস ছুটির টাইমে টরন্টোর পথ ঘাট অনেকটা ঢাকা শহরের মতো হয়ে যায়।অভ্যন্তরীন ফ্লাইটের জন্য প্রায় আড়াই ঘন্টা সময় নিয়ে পথে বেরলাম। যখন পৌছুলাম তখন হাতে আছে মাত্র ৫০ মিনিট এর মতো। কাউন্টারে হাজির হলাম। কাউন্টারের মহিলা জানতে চাইলেন আমি ওয়েব সাইটে গিয়ে সিট কনফার্ম করেছি কিনা। আমি তা করিনি কাজেই সিট ওপেন থাকার কথা। এবার আমাকে বলা হলো যে টাইম নেই।বললাম প্লেন ওড়ার তো অনেক বাকী। উত্তরে আমাকে বললো-তোমার তো ৯০ মিনিট আগে এখানে আসার কথা তুমি লেট। স্বীকার করলাম লেট হয়েছে এবং কারণও দেখালাম। অনুরোধ করলাম চেষ্টা করে দেখার জন্য।এবার খোঁজ খবর নিয়ে জানালো এয়ার ক্রাফট পুরোটাই ভরা কোন সিট খালি নেই অর্থাৎ আমার দেরী দেখে আমার সিটটাও বেঁচে দিয়েছে। আমাকে অন্য একটা কাউন্টার দেখিয়ে দিয়ে বললো তুমি ওখানে গিয়ে আবার টিকেট করো।

আমার ছেলেকে মনে হলো আমার থেকে বেশী দুশ্চিন্তায় পড়েছে। তাকে বললাম কোন সমস্যা হবেনা। বিপদের সময় পথ খোঁজা উচিত ভেঙ্গে পড়া নয়।নতুন কা্উন্টারে এলাম।এখানে আমারই ছেলের বয়সী একজন কাজ করছে। তাকে সব বললাম ২ ঘন্টার পরের ফ্লাইটের টিকেট কনফার্ম করে দিলো সামান্য চেন্জ ফি’র বিনিময়ে। ক্ষতির চেয়ে আমার উপকার বেশী হলো কারন আগের ফ্লাইট টি সরাসরি ছিলো না আর এটা সরাসরি।

- Advertisement -

ছেলেকে বিদায় দিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা আগেই সিকিউরিটি চেক করে ভিতরে এসে নির্দিষ্ট গেটের কাছে চলে এসেছি। আশে পাশে কেউ নেই আমি একা। দেখেশুনে একটা কোনায় বসলাম।ফোনের চার্জারটা বের করে ফোনে চার্জ দিতে শুরু করলাম।একজন মহিলা তার ৩ বছরের ছেলেকে নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে আমার সামনের চেয়ারে এসে বসে পড়লো। একবার ভাবলাম উঠে অন্য কোথাও গিয়ে বসি।খেয়াল করলাম ছেলেটি ঘুমে অস্থির কোথায় শুয়ে পড়বে সে জায়গা খুঁজছে। চেয়ারের হাতলের কারনে সেখানে নিজের দেহটা রাখতে পারছেনা। মনে হলো কার্পেটের উপর লুটিয়ে পড়বে।চেয়ারের পাশেই উপুড় হয়ে সে শুয়ে পড়লো। রাজ্যের ঘুম তার চোখে। তার কোন সাড়া শব্দ নেই।দুএকজন যাত্রী এসে আসেপাশে বসতে শুরু করেছে।সিট ছেড়ে উঠে হাঁটতে শুরু করলাম। ঘড়িতে সময় দেখছি।আমার সিটের কাছে এসে দেখি ছেলেটির মাও ঘুমিয়ে পড়েছে।এরা মা-ছেলে ঘুম চোখে পথে বেরিয়েছে মনে হলো।এবার অন্য সিটে বসলাম।

প্লেনে আরোহনের ঘোষনা দিচ্ছে। প্রথমে বৃদ্ধ, তারপর শিশু ও অভিভাবক এর পর আমরা।লক্ষ করে দেখলাম মহিলা ও তার ছেলে ঘুমে অচেতন।কোন ঘোষনাই তাদেরকে নড়াতে পারছেনা।এভাবে ঘুমুতে থাকলে ওরা প্লেন ফেল করবে।ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।হালকা স্বরে ডাকলাম।আমার নিজের স্বর আমিই শুনতে পাইনা, ওরা শুনবে কি? চলে এলাম।চেকিং এর লাইনে দাঁড়িয়ে আছি দেখলাম কেউই তাদেরকে ডাকলো না।প্লেন এর ফাইনাল কলের পর ওরা ওই যাত্রীকে বলবে তোমাকেতো আমরা ডেকেছি তুমি আসনি।দু:খিত।

আরোহনের সময় ওদেরকে দেখিয়ে বললাম ওখানে মা ও ছেলে ঘুমাচ্ছে, যদি পার একটু ডেকো ওরা এই ফ্লাইটেরই যাত্রী মনে হয়।প্লেনের সিটে বসে সেল ফোনটায় ফেসবুক দেখছিলাম। ঘোষনা আসছে ইলেকট্রনিক্স বন্ধ করার। আমার নজর পড়লো সর্বশেষ যাত্রীর দিকে। ছেলেটি তখনও ঘুমিয়ে অন্ধের মতো মা এর হাত ধরে আসছে আর ঢুলু ঢুলু চোখে মা তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট আসনের দিকে।একটু শান্তি পেলাম চেকিং ষ্টাফ তাহলে আমার অনুরোধ মনে রেখেছে।

মহিলা যখন আমার সামনে এসে বসেছিলো তখন মনে হয়েছিলো এতো আসন খালি থাকতে সে এখানে বসলো কেন। কথা বলারও চেষ্টা করেছে আমিই অন্য মনস্কতা দেখিয়েছি এবং এক পর্যায়ে উঠে গেছি।তারা ঘুম পড়লে কেউ যেন তাদেরকে জাগিয়ে দেয় এমন একজনকে খুঁজেই হযতো সে ঐ আসনে বসেছিলো।যদিও কোন অনুরোধ করেনি।আমিই দায়িত্ব মনে করেছি।

ইনুভিক রিজিউনাল হসপিটাল, কানাডা।

- Advertisement -

Read More

Recent