সোমবার - মে ২০ - ২০২৪

আম্মার গয়নার বাকশো

ছবিক্লেম অনুজাগু

আম্মার মৃত্যুর কথা জেনে আমার প্রাণের বন্ধুরা আন্তরিক শোক এবং আম্মার প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন। প্রার্থনা করেছেন তাঁর অনন্ত শান্তির। কামনা করেছেন বেহেশত। আমার প্রতিও তাঁদের সান্ত্বনা ও মমতার প্রকাশ ভঙ্গিটি ছিলো অনন্য।

অশেষ কৃতজ্ঞতা আমার সহৃদয় বন্ধুদের প্রতি।

- Advertisement -

আমার আম্মা খুব গয়না ভালোবাসতেন। সোনার গয়না। সোনার গয়না নিয়ে তাঁর একটা অবসেসন ছিলো। গয়না জমাতেন তিনি। একটা বাটি ছিলো তাঁর। স্টেইনলেস স্টিলের বাটি। এলুমুনিয়ামের বাটির থেকে খানিকটা উন্নত জাতের। সেই বাটির মুখটা বন্ধ রাখার জন্যে মোটামুটি এয়ারটাইট ধরণের একটা ঢাকনাও ছিলো। বাটির ভেতরটায়, একেবারে নিচের দিকে কিছু তুলো রেখে তারপর সেখানে আম্মা রেখে দিতেন গয়নাগুলো। ওপর দিকেও থাকতো আরো কিছু তুলো। তারপর ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে রাখতেন গয়নার বাটিটা। সোনার হার, আংটি, চেইন, বালা, টিকলি, নথ, চুড়ি ইত্যাদিতে ঠাঁসা থাকতো বাটিটা। গ্রাম থেকে গরিব আত্মীয়রা বেড়াতে এলে এক পর্যায়ে তিনি বাটিটা বের করতেন তাঁর আলমিরা থেকে। বিশেষ করে মহিলা অতিথিদের সঙ্গে খাটের ওপর বসে সেই বাটিটা খুলে একটার পর একটা গয়না তিনি দেখাতেন। অতিথিরা খুব আগ্রহ নিয়ে অবাক বিস্ময়ে অবলোকন করতেন আম্মার গয়না সম্ভার। গয়নার সেই বাটি আম্মা আগলে রাখতেন যক্ষের ধনের মতো।

২০০০ সালে আম্মা স্ট্রোক-এ আক্রান্ত হবার পর বাটির ভেতরে থাকা তাঁর সেই যজ্ঞের ধনের পরিমাণ কমতে থাকে একটি দু’টি করে। আমার ছোটবোনটার কুনজর ছিলো সেই গয়নার বাটিতে, আগে থেকেই। আব্বা-আম্মাকে পটিয়ে কিংবা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে জোর খাটিয়ে একটা দুইটা গয়না সে হাতিয়ে নিতো।

আব্বার মৃত্যুর পর, আম্মা যখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত, চব্বিশ ঘন্টার হুইলচেয়ার আর বিছানায় শয্যাশায়ী জীবন আম্মার, তখন তাঁর জীবনের সবচে কাঙ্খিত গয়নার বাটির স্বর্ণালংকারসমূহের একটা বড় অংশ হাতিয়ে নিয়েছে ছোটবোনটি।

আমি জানি না আম্মার সেই গয়নার বাকশোর স্বর্ণ সম্ভারের সমান অংশ তাঁর অন্য ছেলেমেয়েরা (আমি যেহেতু বহুবছর আগেই বিতাড়িত,আমাকে তালিকা থেকে বাদ রেখেই বলছি) সবাই পেয়েছিলো কী না। নাকি পুরোটাই লুটে নিয়েছিলো ধন-সম্পদ লোভী কোনো সন্তান? বিশেষ করে ছোট মেয়েটা? আমি জানি না।

টিভি পর্দায় অপর্ণা সেনের ‘গয়নার বাকশো’ সিনেমার প্রমোশনালটা দেখে আমার আম্মার গয়নার বাকশোর(বাটির) কথাটা মনে পড়লো।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent