ডা. ইজ্জাত গাওদার শরনার্থী আবেদন কানাডা প্রত্যাখ্যান করার খবর স্ত্রীকে জানানোর পর কীভাবে তার স্ত্রী সেটা বিশ্বাস করতে চাননি সেই কথা স্মরণ করছিলেন তিনি। এখন তাকে মিশরে ফেরত পাঠানো হতে পারে। সেখানে তিনি মৃত্যুদন্ডের মুখে রয়েছেন।
সোমবার তিনি বলেন, এই কথা শুনে তার স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ছিল কানাডার মতো একটি দেশে এটা কীভাবে সম্ভব?
মিশরের উদ্দেশে কানাডা ছাড়ার যখন দুইদিন বাকি ঠিক সেই সময় এসব কথা বলেন ইজ্জাত। সেখানে আদালত তাকে মৃত্যুদন্ডের সাজা দিয়েছে।
২০১৪ সাল থেকে এই দম্পতিতে আলাদাভাবে থাকতে হচ্ছে। তবে কানাডায় একদিন তার স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন এই আশা তাদের সব সময়ই ছিল। এখন তাদের ভয়াবহ সন্ত্রাস সহ্য করতে হবে বলে ভয় পাচ্ছেন তারা।
অবসরপ্রাপ্ত শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ গাওদাকে ১ নভেম্বরের মধ্যে মিশরে ফেরার আদেশ দেওয়া হয়েছে। যদিও দেশে ফিরলে তাকে যেকোনো ধরনের নিপীড়নের মুখে পড়তে হতে পারে বলে তিনি দাবি করেছেন। আরব বসন্তের পর তার রাজনৈতিক ভূমিকার কারণেই এই নিপীড়নের আশঙ্কা।
গাওদা বলেন, আমি হতবাক। কারণ, আমি আমার যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ ও মৃত্যুদন্ডাদেশের সঠিক নথিপত্র জমা দিয়েছিলাম। ২০১৩ সালে সহিংসতায় রূপ নেওয়া দুটি বিক্ষোভের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার অনুপস্থিতিতেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
মিশরে তার বিরুদ্ধে যে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে সেই নথিপত্র তিনি কানাডিয়ান কর্মকর্তাদের দেখান। কিন্তু জ্যেষ্ঠ অভিবাসন কর্মকর্তার কাছে শরনার্থীর আবেদন বিবেচনায় নেওয়ার জন্য তা অপর্যাপ্ত ও অস্পষ্ট মনে হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত লিখিতভাবেই তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিবাসন কমকর্তা তার সিদ্ধান্তে লিখেছেন, দুটি কোর্ট আদেশই আট বছর আগের। এ ছাড়া অভিযোগ ও তাকে গ্রেপ্তারের সুনির্দিষ্ট কারণ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে লাখ লাখ মিশরীয় যখন বিক্ষোভ করতে থাকেন সে সময় অর্থাৎ ২০১১ সালের মধ্যে গাওদাকে কয়েকবার গ্রেপ্তার করা হয়। আরব বসন্ত নামে সেই সময় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ চলছিল এটা তার একটি।
গাওদা বলেন, ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টি গঠনে তিনি ভূমিকা রাখেন। দলটি মুসলিম ব্রাদারহুড গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ২০১২ সালের নির্বাচনের পর মিশরের ক্ষমতায় আসে।
২০১৩ সালে মিশরের সেনাপ্রধান অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত দলীয় সরকারকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখল করেন। এরপর থেকে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির সদস্য এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের হাজার হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করতে থাকে। তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে এই গ্রেপ্তার চালাতে থাকে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একে ভিন্নমত দমনের নিষ্ঠুর পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছে।