সোমবার - মে ২০ - ২০২৪

কানাডিয়ান থট ও ধর্মচিন্তা

ছবি কেসেনিয়া মাতাগোনোভা আনসপ্লাশ

আমি মনে করি, পুরোপুরি আস্তিক হওয়া যেমন কঠিন ঠিক তেমনিভাবে পুরোপুরি নাস্তিক হওয়াও কঠিন।
আস্তিক হতে হলে যে সৃষ্টিকর্তাকে আপনি বিশ্বাস করেন সেই সৃষ্টিকর্তার নিদর্শনগুলিও মানতে হবে। তানাহলে আপনি যে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন তার প্রমান কি? মনে মনে “আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, তুমি আছো”,বললে তো হবে না।
সৃষ্টিকর্তা মানুষের জন্য পালনীয় অনেকগুলি নির্দেশ দিয়ে গেছেন। সেই নির্দেশগুলি প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে।
প্রায় প্রতিটি ধর্মগ্রন্থে একজন কিংবা একাধিক সৃষ্টিকর্তার উল্লেখ রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড এবং মানুষসহ সকল প্রানী জগতকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি শুধু সৃষ্টি করে ক্ষান্ত হননি। তিনি মানুষের জন্য করনীয় বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছেন এবং তাকে বিশ্বাস করলে, তাকে পেতে চাইলে এই সব নির্দেশনা পালন করতে হবে। তবেই তার প্রতি বিশ্বাসের দৃঢ়তা প্রমাণিত হয়। শুধু তাকে বিশ্বাস করলাম কিন্তু তার নির্দেশ তেমন মানলাম না কিংবা আংশিক মানলাম কিংবা আমার মত করে সুবিধা মত মানলাম। তাহলে সেই আস্তিকতার মূল্য কি? তাকে কি পুরোপুরি আস্তিক বলা যায়? ঈশ্বরে বিশ্বাস করি অথচ তার নির্দেশ পুরোপুরি মানি না বা পালন করি না, এমন যিনি, তিনি কিভাবে পুরোপুরি আস্তিক হতে পারেন?
আর পুরোপুরি সৃষ্টিকর্তা বা ঈশ্বরের নির্দেশ পালন করেন, এমন মানুষ পৃথিবীতে কয়জন আছেন? কিংবা ঈশ্বরের নির্দেশ ৮০% পালন করেন এমন মানুষের সংখ্যাও কি খুজে পাওয়া সম্ভব?
তাই পুরোপুরি আস্তিক হওয়া একেবারেই অসম্ভব একটি কাজ।
অপর দিকে নাস্তিক হওয়াও খুব কঠিক ব্যাপার। ঈশ্বরে বিশ্বাসী বাবা মার সন্তানের মধ্যে বাবা মার বিশ্বাস, তাদের চর্চিত ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ছোট বেলা থেকেই প্রথিত হয়ে যায়। সেই ছোট শিশুটি বোধশক্তি হতে হতে তার বাবা মার অনেক কিছুই সে ধারন করে। সেগুলি থেকে বেরিয়ে এসে পুরোপুরি নাস্তিক হওয়া বিশাল সাধনার বিষয়। মুসলমানের ঘরে জন্ম নেওয়া আস্তিক অভিভাবকের সন্তান পরবর্তীতে যখন নাস্তিক হয় তখন সে অভ্যাসবশত “বিসমিল্লাহ”, ‘ইন্না-লিল্লাহে’, ‘খোদা হাফেজ’, ‘ইনশাআল্লাহ’ ইত্যাদি বলে ফেলে। সেটা সে এড়াতে পারে না। অনেকক্ষেত্রে সেই নাস্তিককে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকতে দেখা যাওয়াও বিচিত্র নয়। অথচ একজন নাস্তিকের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নির্মোহ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তা এড়াতে পারেননি । একজন হিন্দু কিংবা একজন খ্রিস্টান আস্তিক অভিভাবকের সন্তান পরবর্তীতে(বোধশক্তি হবার পর) নাস্তিক হলে তার মধ্যেও এই সমস্যাগুলি প্রকটভাবেই থেকে যায়। তাই নাস্তিক হওয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। জীবনে অনেক নাস্তিককে পরবর্তীতে হজ্ব, নামাজ রোজা রাখতেও দেখা গেছে। অনেক নাস্তিক জীবদ্দসায় তার মৃত্যুর পর তার দেহ কি হবে কিছুই বলে যান না। এর কারন, সেই নাস্তিক মনে মনে চান তার দেহ ধর্মীয় রীতিতে সৎকার কিংবা কবর হোক। একমাত্র নাস্তিক আহমেদ শরীফ মৃত্যুর পূর্বেই তার সমস্ত দেহ চিকিৎসা কাজে দান করে গিয়েছিলেন।
প্রকৃত নাস্তিদের উচিত মৃত্যুর পূর্বেই তাদের দেহের কি হবে তার ঘোষণা দিয়ে যাওয়া। কারন, একজন নাস্তিক কেন চাইবেন তার দেহ ধর্মীয় রীতিতে সৎকার বা কবর হোক। কাউকে কেন তার বলার সুযোগ করে দেওয়া উচিত হবে, ‘ওই দেখ হালায় নাস্তিক হইয়াও তার জানাজা হইছে, সূরা পইড়া কবর দেওয়া হইছে’।
আমি মনে করি একমাত্র নাস্তিক বাবা মার সন্তানই প্রকৃত নাস্তিক হতে পারে। এছাড়া, প্রকৃত নাস্তিক হওয়া কোন ছেলে খেলা বা মুখের কথা নয়। এই কারনেই খুব একটা ব্যাতিক্রম না হলে, মুসলমান অভিভাবকের ঘরে মুসলমানই হয়, হিন্দু অভিভাবকের ঘরে হিন্দু আর খ্রিস্টানের ঘরে খ্রিস্টানই হয়। এর ব্যাতিক্রম খুব বিরল ঘটনা।
আমার উপংহার হচ্ছে, কেউ-ই প্রকৃত আস্তিক কিংবা প্রকৃত নাস্তিক চাইলেও হতে পারেন না। তবে কেউ best try টা করে গেলে সেখানে আমার বলার কিছু নাই। সেটি তিনি বা তারা করতেই পারেন।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent