হাসপাতালের আইসিইউর বেড-এ অজ্ঞান এক পেসেন্টের নিথর একটা হাতকে ধরে রেখেছে ব্রেসলেট পরা আরেকটা হাত। ব্রেসলেট পরা হাতটা আমার। নিথর হাতটা শার্লির।
বলতে গেলে এখানেই পাঁচটা দিবস আর পাঁচটা রজনী নদী আর আমার কেটেছে ভয়ঙ্কর একটা দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে। সময় কোন কোন দিক দিয়ে বয়ে গেছে আমরা টেরই পাইনি।
কিংবা আমরাই হয়তো টের পেয়েছি সবচে বেশি।
হিউস্টন থেকে অপূর্ব এক বেড়ালছানা মিমিকে অটোয়ায় নিয়ে এসেছিলো নদী। অনেক বছর পর ওর অটোয়ায় আসা। আসতেই পারছিলো না চাকরি-বেড়ালছানা ইত্যাদি কারণে। আমরাই বরং যেতাম হিউস্টনে। এবারে আসার কারণ একটা বেড়ালছানা–মিমি।
ছোট্ট বেড়াল বাচ্চাটা আমেরিকা থেকে মাইগ্রেট করেছে কানাডায়। মা-বাবার কাছ থেকে নানুবাড়িতে। নদীর মায়াবতী মনটা এমনিতেই খুব বিষণ্ণ ছিলো মিমিকে রেখে যেতে হবে বলে। এখানে আসবার আগে নদীকে আমি বলেছিলাম–বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে আগে, পরিবারের সবচে দুষ্টু বাচ্চাটাকে মামাবাড়ি কিংবা নানুবাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হতো মানুষ করার জন্যে।
জবাবে নদী বলেছিলো–কিন্তু মিমি তো শান্ত একটা বাচ্চা। মিমি তো দুষ্টু না। মিমি একটা লক্ষ্মী বাচ্চা। তাকে কেনো পাঠিয়ে দিতে হচ্ছে অন্য বাড়িতে!!
আইসিইউতে শার্লির শ্বাসপ্রশ্বাস-হার্টবিট-ব্লাডপ্রেসার সবকিছু স্বাভাবিক রাখতে মনিটরে প্রতিমুহূর্তের সতর্ক দৃষ্টি ছিলো কর্তব্যরত নার্স-ডক্টরদের। বাড়তি অক্সিজেনের সাহায্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস চালু ছিলো শার্লির। সিপএপ মেশিনের মাধ্যমে চলছিলো ওর নিঃশ্বাস নেয়া। বারবার নেমে যাচ্ছিলো ওর ব্লাড সুগার। নেমে যাচ্ছিলো থ্রি পয়েন্ট ফোর-এ। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে সুগার লেভেলকে সঠিক মাত্রায় নিয়ে আসছিলো নার্স, বারবার।
সুগার লো হয়ে যাওয়া খুব বিপজ্জনক।
শার্লি অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় পড়েছিলো। অনেকক্ষণ অক্সিজেন পায়নি ওর ব্রেইন। কোনো এক দয়ালু পথচারীর কৃপায় শার্লিকে হাসপাতালে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছিলো। আরেকটু দেরি হলে নাকি ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারতো।
পাঁচ পাঁচটা দিন আইসিইউতে থাকার পর অবশেষে নার্স-ডক্টরদের বিরামহীন প্রচেষ্টায় শঙ্কামুক্ত হয়ে পরশু রাতে হাসপাতাল থেকে রিলিজড হয়ে বাড়ি ফিরেছে শার্লি।
এই চরম দুঃসময়ে নদী ছিলো আমার সঙ্গে, সার্বক্ষণিক।
আর ওদিকে হিউস্টনে থাকা ডেভিড ছিলো অনলাইনে জাগরুক, সার্বক্ষণিক। ওর দেয়া শক্তি-সাহস আর পরামর্শ আমাদের প্রত্যয়ী করে তুলছিলো প্রতিটা মুহূর্তে।
নইলে আমার একার পক্ষে এরকম ভয়ঙ্কর একটা দুঃসময়কে অতিক্রম করা অসম্ভব ছিলো।
সে এক ভয়ঙ্কর উৎকণ্ঠার সময় ছিলো।
ওই সময়টায় আমি কোনো ফোনকলে এটেন্ড করিনি।
কাউকে ফোনও করিনি।
ফেসবুকেও ছিলাম অনুপস্থিত।
আশা করছি শিগগিরই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
যথা চিকিৎসা-পর্যাপ্ত বিশ্রাম-মিমির সাহচর্য এবং আমাদের সম্মিলিত শুভকামনা আর ভালোবাসায় দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছে শার্লি।
ডক্টরের সিদ্ধান্তে ওকে সেলফোন থেকে সম্পূর্ণ বিযুক্ত রাখা হয়েছে।
মিমি ভালো আছে।
সে তার গ্র্যাম্মার সমস্ত ডিপ্রেশন মুছে দিচ্ছে অলৌকিক ক্ষমতাবলে।
বেড়ালদের অদ্ভুত একটা ক্ষমতা থাকে। ডিপ্রেশনের পেসেন্টদের বেড়াল নিতে পরামর্শ দেন এখানকার ডক্টররা। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় Pet Therapy পেট থেরাপি।
মিমি একটা দুর্দান্ত নবীন ডক্টর শার্লির জীবনে।
তোকে অনেক ধন্যবাদ মিমি……