শনিবার - জুলাই ২৭ - ২০২৪

মানেটা দাড়াচ্ছে কি?

অপ্রদর্শিত অর্থ বা আয়কেই কালো টাকা বলে অবহিত করা হয়

বাংলাদেশে দুইভাবে অর্থ অপ্রদর্শিত থেকে যেতে পারে।

১) অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থের ট্যাক্স না দেওয়া হলে সেই অর্থ অপ্রদর্শিত থেকে যাবে।

- Advertisement -

২) বৈধ উপায়ে উপার্জিত আয়ের ট্যাক্স না দেওয়া হলে এই আয়ও অপ্রদর্শিত থেকে যাবে।

আমি যতটুকু বুঝি,বাংলাদেশে এই অপ্রদর্শিত অর্থ বা আয়কেই কালো টাকা বলে অবহিত করা হয়। যখনই এই অপ্রদর্শিত আয় বা অর্থের ট্যাক্স দেওয়া হয় তখন তা রাষ্ট্রীয় খাতে প্রদর্শিত হয়েছে বলে গন্য হয়। ট্যাক্স না দেওয়া পর্যন্ত সেই উপার্জিত আয় বা অর্থ অপ্রদর্শিত বিধায় তা কালো টাকা বলে গন্য হয়।

তা হলে মানেটা দাড়াচ্ছে কি?

সব বৈধ উপায়ে উপার্জিত আয় বা অর্থ সাদা টাকা নয় যতক্ষন না নির্ধারিত ট্যাক্স দিয়ে রাষ্ট্রীয় খাতে সেই আয় বা অর্থ প্রদর্শিত না হয়।

রাষ্ট্রীয় খাতে প্রদর্শিত অর্থ মাত্রই সাদা টাকা তা সেটি বৈধ উপায়ে উপার্জিত আয় হোক কিংবা অবৈধ উপায়ে উপার্জিত আয় হোক।

বৈধ উপায়ে উপার্জিত আয়ের উপর ৩০% ট্যাক্স দিলে তা রাষ্ট্রীয় খাতে প্রদর্শিত হবে। আর অবৈধ পথে উপার্জিত আয় বা অর্থের উপর ১৫% ট্যাক্স দিলে তা রাষ্ট্রীয় খাতে প্রদর্শিত হবে। আর রাষ্ট্রীয় খাতে আয় প্রদর্শনের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় ট্যাক্স দেওয়ার মাধ্যমে। আর প্রদর্শিত হওয়া মাত্রই তা সাদা টাকায় পরিনত হয়।

অনেকে এটি নিয়ে হাসাহাসি করেছেন।বিষয়টি নিয়ে অনেক ট্রোলও বানানো হয়েছে।

ব্যাপারটা আমারও বুঝতে অনেক সময় লেগেছে।

আসলে অবৈধভাবে যারা আয় বা অর্থ উপার্জন করে তারা সাধারণত ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েই থাকতে চায়। অবৈধ অর্থের মালিকরা ট্যাক্স দিতে চায় না। তাই তাদের জন্য কম ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে তারা ট্যাক্স দেয়,ট্যাক্স দিতে অনুপ্রাণিত হয়। আর অবৈধ অর্থের মালিকরা ট্যাক্স দিলে সরকারের একটি ভালো রেভিনিউ আসবে। আর এই রেভিনিউ দিয়ে অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা যাবে।

বৈধ উপায়ে উপার্জিত আয়ের ট্যাক্স বেশি কেন?

এর কারন হচ্ছে, বৈধ উপায়ে উপার্জিত আয়ের মালিকরা সাধারণ ট্যাক্স দিয়ে দেয়। যিনি চাকরিজীবি তিনি তার বৈধ আয়ের উপর নির্ধারিত ট্যাক্স সাধারণত দিতে দ্বিধা করেন না। অনেক সময় যে প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত আছেন সেই প্রতিষ্ঠানই তার আয় থেকে ট্যাক্সের অর্থ কেটে সরকারকে দিয়ে দেয়। বৈধ উপার্জকারীরা সাধারণত ঝুটঝামেলা এড়ানোর জন্য যত বেশি ট্যাক্সই হোক না কেন দিয়ে দেন।আর বেশীর ভাগ বৈধ আয়ই প্রদর্শিতই থাকে। তাই যেটা দেখা যায় তার ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া সহজ নয়।
কথা হচ্ছে একজন দুর্নীতিবাজ তার সমুদয় অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স দিয়ে যদি তার সকল কালো টাকাকে সাদা করে ফেলেন তবে কি তিনি আর দুর্নীতিবাজ বলে বিবেচিত হবেন না?

ধরুন, পুলিশের সাবেক আইজিপি তার ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর -অস্থাবর সম্পত্তি লিকুইড মানি করে সরকারের নির্ধারিত ১৫% ট্যাক্স দিয়ে সকল কালো টাকাকে সাদা করে ফেললেন তবে কি তিনি আর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন না? কিংবা তিনি কি আর দুর্নীতিবাজ হিসাবে গন্য হবেন না? তার নাম কি দুর্নীতির অভিযোগ থেকে ছেঁটে ফেলা হবে? কারন, ১৫% ট্যাক্স দেওয়ার পর তো তিনি সাদা টাকার মালিক হয়ে যাবেন!
এইসব প্রশ্নের উত্তর আসলে জানা নেই।

তবে সরকার দুর্নীতিবাজ আর ঋন খেলাপীদের প্রচ্ছন্নভাবে পশ্রয় দেন।

তানাহলে দুর্নীতিবাজদের জন্য কালো টাকা সাদা করার পথ খোলা রাখতেন না এবং ঋন খেলাপীদের জন্য ঋন reschedule করা পথ খোলা রাখতেন না।

এই পথ খোলা রাখার কিছু বাস্তব কারন আছে। বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিল্প-কারখানা, বড় বড় সুপার মার্কেট, ফিউচার পার্ক ইত্যাদি হয়েছে বড় বড় দুর্নীতিবাজ আর ব্যাংক ঋনগ্রহীতার অর্থ দিয়েই।

বাংলাদেশে কয়জনের পক্ষে তার সৎ পথের আয় দিয়ে কিংবা বৈধ উপার্জনের আয় দিয়ে শিল্প-কারখানা, বড় বড় সুপার মার্কেট কিংবা ফিউচার পার্ক, এমিউজমেন্ট পার্ক করা সম্ভব?

তাই তিক্ত হলেও সত্য,অসংখ্যবার ঋনখেলাপী হওয়া স্বত্তেও সরকার ব্যাংক ঋন দেওয়া বন্ধ করেন না। একই কারনে প্রতি বাজেটে কালো টাকা সাদা করার পথ খোলা রাখেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক কারনও আছে। খুজলে দেখা যাবে এই সব ব্যাংক ঋনগ্রহীতারা আর কালো টাকার মালিকরা বেশির ভাগ ক্ষমতাসীন দলের লোকজন কিংবা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় পালিত এবং লালিত।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent