রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

হ্যালো ডাবলিন!

হ্যালো ডাবলিন

আইরিশ সাগর বেশ শান্ত। আকাশ থেকে জলের চরিত্র দেখে তাইই মনে হলো। বিশাল কোনো ঢেউ নেই। আবার বাতাসের উড়ু উড়ু ভাব নেই এমন নয়। আবহাওয়া বার্তায় বলা হয়েছিলো এসময় হাওয়ার সর্বোচ্চ গতি হবে ৫৯ কিলো। তবু ঢেউ স্বল্পতার কারণ জানিনা।

মজার ব্যাপার হলো উড়োজাহাজে আইরিশ সাগর পাড়ি দেয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিলোনা আমার। সামান্য একটা ফ্লাইট ক্যানসেল সুযোগটা করে দিলো। গল্পটায় ক্লান্তি আছে, বিড়ম্বনা আছে। তবু বলা যাক।

- Advertisement -

টরন্টো থেকে ডাবলিন যেতে আটলাণ্টিক পেরুলেই চলে। আইরিশ সাগরের কোনাকাঞ্চি দেখা গেলেও পাড়ি দেবার প্রয়োজন পড়েনা। কিন্তু বাধ সাধলো টরন্টোর আবহাওয়া। প্রবল বৃষ্টি সাথে তুষারপাতে ক্যানসেল হলো এয়ার লিঙ্গাসের বিকেলের ফ্লাইট। পিয়ারসন এয়ারপোর্টে এসে প্রথম তা জানতে পারি।

লিঙ্গাস কর্তৃপক্ষ আমাকে এয়ার কানাডার সন্ধ্যার ফ্লাইট ধরিয়ে দিলেন। কিন্তু এটি সরাসরি ডাবলিন যাবেনা। এয়ার কানাডা আমাকে হিথ্রো নামিয়ে দিবে, অতপর সেখান থেকে ডাবলিন।

মনে মনে রাগ হলেও মেনে নিলাম। টার্মিনাল ৩ থেকে মনোরেইলে চেপে টার্মিনাল ১-এ পৌঁছলাম। এতো ঝক্কি ঝামেলার পর কাউন্টার আমাকে অন্য কেচ্ছা শোনালো। এয়ার কানাডার মধ্য বয়সি সুন্দরী ভদ্র মহিলা বললেন, তোমাকে আমরা লন্ডন হিথ্রো পর্যন্ত নিতে পারবো। সেখান থেকে লাগেজ সংগ্রহ করে নিজ দায়িত্ত্বে এয়ার লিঙ্গাসের বোর্ডিং কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সিস্টেম আমাকে ডাবলিন পর্যন্ত বোর্ডিং ইস্যু করতে দিচ্ছেনা। লাগেজ ট্যাগ দিচ্ছেনা।

আমি মানলাম না। কেনোনা, হিথ্রোতে লাগেজ নিতে সময় লাগে। লাগেজ ক্লেইম করতে পূর্ণাঙ্গ ইমিগ্রেশন চেক আউট করতে হয়। অর্থাৎ আমি লন্ডন শহরে বের হবো এবং নতুন করে সেখান থেকে ডাবলিন যাবো!!
এয়ার কানাডার কাউন্টার থেকে বের হয়ে এয়ার লিঙ্গাসকে ফোন দিলাম। কল ওয়েটিংএ পাক্কা তেত্রিশ মিনিট! অবশেষে এক মহিলা ফোন ধরলেন। তাঁকে খুলে বললাম এয়ার কানাডার হিস্ট্রি। স্বীকার করলেন, লাগেজ সরাসরি ডাবলিন নেয়া যাবেনা। সমাধান হিসাবে আমাকে পরের দিনের ফ্লাইট অফার করলেন।

রাজি হতে পারলাম না। মিটিং আছে ২৫ জানুয়ারি। রাতের হোটেল বুকিং ফুললি পেইড অফ!! পেনাল্টি কে দেবে? ট্রাভেল ইন্স্যুরেন্স কিনিনি এ যাত্রায়।

পেনাল্টি দাবিতে মহিলা থতমত খেয়ে গেলেন। বললেন, আধা ঘন্টা পর তিনি আমাকে ফোন দেবেন।

ফোন এলো এয়ার লিঙ্গাস থেকে। “মিস্টার খান, আপনাকে আমরা রাত ১০টায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে হিথ্রো আনতে পারি। সেখান থেকে ঘন্টা খানেক ট্রানজিট শেষে আমাদের এয়ারলাইন্সে ডাবলিন। দুপুর ১টায় ডাবলিন থাকবেন আপনি।“

ঠিক আছে। অন্যকোনো ডিলে না হলে সময় ম্যানেজ করা যাবে।

সন্ধ্যা সাতটার আগেই ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ কাউন্টার থেকে বোর্ডিং কার্ড নিয়ে নিলাম। দুটো বোর্ডিং কার্ড। টরন্টো—লন্ডন এবং লন্ডন—ডাবলিন। লাগেজ ট্যাগ ডাবলিন পর্যন্ত।

লন্ডন আসতে সরাসরি আটলাণ্টিক পেরিয়েছি। আয়ারল্যান্ড আটলাণ্টিকের মাঝে দ্বীপ রাষ্ট্র। কিন্তু এর পূর্ব অংশ ইংল্যান্ড থেকে আলাদা হয়েছে আইরিশ সাগর দিয়ে। তাই লন্ডন থেকে ডাবলিন আসতে পেরোতে হয় গোটা ‘আইরিশ সি’। ভ্রমন বিড়ম্বনায় একমাত্র প্রাপ্তি আকাশ পথে এ সাগর পাড়ি দেয়া!

ডাবলিন এয়ারপোর্ট ছোটো হলেও খুব সুন্দর। নিয়মিত আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করলেও এয়ারপোর্টের নামের সাথে ইন্টারন্যাশনাল শব্দটি যুক্ত করা হয় নাই। গ্রীনফিল্ড এয়ারপোর্ট এটি। ট্যাক্সিওয়ে ও রানওয়ে বাদে এয়ারপোর্টের বাকী ভূমি সবুজ ঘাসে ঢাকা। দেখতে বেশ ভালো লাগে।

- Advertisement -

Read More

Recent