মালদ্বীপে গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে চীন পন্থী এবং ভারত বিরোধী মোহাম্মদ মুইজ্জু প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
মালদ্বীপে ভারতের ৮৭ জন সেনা মোতায়েন রয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে মালদ্বীপ থেকে সব ভারতীয় সেনা সরানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুইজ্জু। মালদ্বীপের ‘ভারত প্রথম’ (ইন্ডিয়া ফার্স্ট) নীতি পরিবর্তনের জন্য নির্বাচনে প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি।
পার্লামেন্টে প্রথম ভাষনে মুইজ্জু বলেন, ১০ মে-এর মধ্যে মালদ্বীপ ছাড়বেন ভারতীয় সেনারা।
প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু আরও বলেন, ‘কোনো দেশকে আমাদের সার্বভৌমত্বের ওপর হস্তক্ষেপ করতে কিংবা সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করতে দেব না।’
উপরে মালদ্বীপের সাম্প্রতিক বিষয়গুলির একটি চৌম্বক চিত্র দেওয়া হলো।
বাংলাদেশেও কিছু কিছু রাজনৈতিক দল মালদ্বীপের মডেল অনুসরণ করতে চাচ্ছে।
তাদের ধারণা বাংলাদেশের জনগনের বিরাট অংশের মনোভাব তীব্রভাবেই ভারত বিরোধী। তাই জনগনের এই মনোভাবকে যদি কাজে লাগানো যায় তবে বর্তমানের আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব হবে।
আর যেহেতু আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের আনুকূল্য নিয়ে টিকে আছে সেহেতু ভারত বিরোধী অবস্থান নেওয়া ছাড়া তাদের আর কোন বিকল্প নেই। তাদের ধারণা যতদিন আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এই আনুকুল্য থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না।
প্রধান বিরোধী দলও বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর ভারতের এই অবস্থানকে নানাভাবে দায়ী করছে। প্রায় ১১ বছর প্রধান বিরোধী দল( অফিসিয়ালি নয়) সরাসরি ভারত বিরোধীতা থেকে বিরত ছিল এবং তারা নানা রকম লবিং করেছে ভারকে তার এই অবস্থান থেকে সরিয়ে আনার জন্য কিন্তু এক্ষেত্রে তারা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।ভারতকে তারা নিজেদের পক্ষে আনতে সক্ষম হয়নি।
এখন তারা মালদ্বীপ মডেলে ” ইন্ডিয়া আউট”, “ভারতীয় পন্য বর্জন” ইত্যাদি তাদের চলমান আন্দলনের সাথে যুক্ত করতে চাচ্ছে।
কথা হচ্ছে, মালদ্বীপ মডেল শুধুমাত্র মালদ্বীপের জন্যই প্রযোজ্য। সেখানে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। তাই মুইজ্জু ভারত বিরোধী স্ট্যান্ড নিয়ে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। আর ভারত এই ম্যান্ডেটকে সম্মান দেখিয়ে মার্চের মধ্যে তাদের সৈন্য সরিয়ে নিতেও সম্মত হয়েছে।
কিন্ত বাংলাদেশের চিত্র মালদ্বীপ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যের কোন সামরিক ঘাঁটি নেই। বাংলাদেশের চর্তুদিকে ভারত থাকায় বাংলাদেশ অনেকাংশেই ভারতের উপর নির্ভরশীল। ভারত বাংলাদেশে কোন পন্যের সরবরাহ বন্ধ করে দিলে যেখানে বাংলাদেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় সেখানে ইন্ডিয়া আউট বা ভারতীয় পন্য বয়কট করার চিন্তা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। নদীর পানি প্রবাহেও বাংলাদেশকে ভরতের উপর নির্ভর থাকতে হয়। তানাহলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশের সেচ ব্যবস্থা আচল হয়ে যায়। ফলন ঠিকমত হয় না। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক এবং ভৌগোলিক অবস্থান বাংলাদেশকে ভারত বিরোধীতায় সমর্থন করে না।
এই সব হচ্ছে বাস্তবতা।
তাই বিরোধী দল ভারত বিরোধী আন্দোলনের ডাক দিলে তা হবে আরেক হঠকারী সিদ্ধান্ত।এতে করে ভারত এই সরকারকে আরও বেশি আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইবে। কারন, বাংলাদেশে ভারত বিরোধী একটি সরকার ক্ষমতায় আসলে তাদের পক্ষে সেভেন সিস্টারকে নিয়ন্ত্রন করা কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে উগ্র মৌবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এখানে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত। এক্ষেত্রে ভারত কোন ক্রমেই ছাড় দিবে না।
বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, বিরোধী দল যাই কিছু করুক না কেন তা ভারতকে রেখেই করতে হবে,ভারতকে বাদ দিয়ে বা ভারতকে অসন্তুষ্ট করে কিছুই আদায় হবে না ।
তাই বিরোধী দলের যে মূল আন্দলোন ” নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার” সেই দাবীতেই অটল থেকে তাদের আন্দোলন আরও বেগবান করাই বাস্তবসম্মত ছিল।
স্কারবোরো, কানাডা