শুক্রবার - মে ৩ - ২০২৪

আসল মালিক আমরাই

সুখবর শেষ পর্যন্ত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই Geographical Indication বাংলাদেশের জন্যই নির্ধারণ করে দিয়েছেন

সুখবর শেষ পর্যন্ত টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই ( Geographical Indication) বাংলাদেশের জন্যই নির্ধারণ করে দিয়েছেন World Intellectual Property Organization. সোসাল মিডিয়ার লেখা দেখে শেষমেশ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের টনক নড়েছে,তারা কষ্ট করে হলেও বাংলাদেশের ইজ্জত রক্ষা করেছেন, তাছাড়া ঘরের বউ আরেকজন নিয়ে গিয়েছিল প্রায়। ঘরের শাড়ি তো ঘরে ফিরিয়ে আনলাম কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো এই শাড়ি ভবিষ্যতে ঘরের মহিলাদের কতজন আর পরিধান করবেন, তারা তো শাড়ি পড়া ইদানিং হিন্দুয়ানী বলা শুরু করেছেন। আমার ইতিপূর্বে লেখার পয়েন্টটা ছিল এখানেই।

টাঙ্গাইল শাড়ি’র জিআই নিয়ে আমার লেখার মুল থিমটা অনেকেই বুঝতে না পেরে শুধুমাত্র ভৌগলিক অরিজিনের যুক্তি থেকেই বোঝাতে চেষ্টা করছেন একসময় টাঙ্গাইল থেকেই যে শাড়ির উৎপত্তি সেটা টাঙ্গাইলে এখন না থাকলেও ওটার আসল মালিক আমরাই । আমার নিজেরও কোন দ্বিমত নেই এখানে। বাংলাদেশের ঢাকার মসলিন, পোড়াবাড়ির চমচম, নাটোরের কাঁচা গোল্লা, বগুড়ার দই সবই আমাদের সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। আপনি কাঁচা গোল্লা খাবেন অথচ মসলিন শাড়ি , বা শাড়ি দেখলেই ধর্ম গেল ধর্ম গেল বলে নাট সিঁটকাবেন সেটাতো হয় না। আমি মনে প্রানে চাই আমার দেশের যা কিছুই ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক, লৌকিক, ঐতিহাসিক বা শিল্পজাত সবটাই আমাদের,সবটাই থাক । কিন্তু আমাদের এই অর্জনগুলোকে কি আমরা ধরে রাখার জন্য খুবই উচ্চকিত ? যদি হতাম তাহলে মাত্র দু তিন দশকের মধ্যেই এগুলো হারাচ্ছে কেন? ইচ্ছাকৃত হারানো গৌরবের জন্য আমাদের এমন মরা কান্না কি বাঙালিদের অতি পরিচিত হিপোক্রেসী নয়?

- Advertisement -

আমার কথা স্পষ্ট যে, ভাষাভিক্তিক জাতিয়তাবাদি আন্দোলন থেকে রক্তের বিনিময়ে আমরাই যেমন আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার যেমন পেয়েছিলাম তেমনি ভাষাভিক্তিক পরিচয় থেকেই নিজেদের করে আপন সংস্কৃতির একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ পেয়েছিলাম। সেই অর্জনগুলো কেন এখন ধর্ম পরিচয়ের আড়ালে বিলুপ্তির দিকে। আমাদের গান বাজনা লোকজ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সবই মোল্লাদের হারাম ফতোয়ার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে। এগুলোর পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা কি কখনও প্রতিবাদ করেছি? মনে মনে বলেছি কিসের বাঙালি , আমরা সবাই এক উম্মাহ’র সদস্য, সবকিছুই চলবে মদিনা সনদে, মক্কার নিয়মে।

আমরা জেনে শুনেই সযত্নে আমাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয়ের নান্দনিক সৌন্দর্য্যের পোষাককে ছেড়ে ধর্ম পরিচয়ের পোষাক বরন করে নিয়েছি। বলেন বাংলাদেশের কতজন এখন নির্ভয়ে শাড়ি টিপ পড়ে রাস্তাঘাটে বেরোতে পারেন? এইতো মাত্র দশ বছর আগেও আমার স্ত্রীর শাড়ি টিপ পড়ে পাবলিক বাসে উঠে ‘মা*লাউনের বউ’ বলে গালি খেয়েছে! তাহলে তো বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের সব মালাউনের বউ কন্যা ভগ্নি ছাড়া কেউই আর শাড়ি পড়েন না, পরলেও হিজাবের ভেতরে ঢেকে ফেলেন! সংস্কারমুক্ত বহু মুসলমান মেয়েদের দেখেছি শাড়ি পড়েন তবে হিজাবের পক্ষে গলাবাজি করেন। এমন করে যে শাড়িকে আমরা পরিত্যাগ করেছি বা করার পথে সেটার জিআই এর জন্য এমন মরাকান্না কি আমাদের হিপোক্রেসী নয়? আপনারাই ওয়াজে আড্ডায় নসিহত করছেন শাড়ি অশালীন, শাড়ি হিন্দুদের সংস্কৃতি, তাহলে হিন্দুদের সংস্কৃতিকে কথিত হিন্দুত্ববাদী ভারত জিআই দিয়ে নিজেদের করে নিলে এত আফসোস কেন? যুক্তিপূর্ণভাবেই আমরা বরং হিজাবের জি আই প্যাটেন্টের জন্য আবেদন করতে পারি, কারন এই হিজাব শিল্প এখন সারা বাংলাদেশে লাভ জনক ও শৈল্পিক কারিগরি ব্যবসা । পৃথিবীর সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত হিজাবী দেশ এখন বাংলাদেশ। ভবিষ্যতে সৌদি আরব সহ বহু মুসলিম দেশেই হিজাবের ব্যবহার কমে যাবে কিন্তু বাংলাদেশে থাকবে, এটা আমি বাজী ধরে বলতে পারি।

এখন শাড়ির জন্য কাঁদছেন অথচ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ধুতি বা কৌপিন নিয়ে কি আপনাদের কোন আগ্রহ আছে? সেটাও তো বাঙালিদেরই ছিল। আত্মঘাতী বাঙালিদের সাংস্কৃতিক পরিচয় তবে কি? বোরকা, হিজাব, জোব্বা? হতে পারে সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল এই ফালতু যুক্তি দেখিয়ে আপনি বলে দেবেন হিজাব তো শাড়ির চেয়ে বেশী এডাব্টেবল !

টাঙ্গাইল শাড়ি শিল্পই শুধু নয় বাংলাদেশের আরো কিছু কুটির শিল্পের কারিগররা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা বিতারিত, নিগৃহীত। রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি, বরং অত্যাচারীদের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তবে শিল্পের প্রসার ঘটবে কি করে? ভারতেও এমন অনেক শিল্প আছে।অথচ তারা শিল্পের কদর করতে জানে, শিল্পীদের ধর্ম দিয়ে বিচার করে না। প্রতিবছর এমন বহু কারিগররা সেখানে পদ্মশ্রী পদক পাচ্ছেন। কাশ্মীরের শাল শিল্পের জন্য সেখানকার একাধিক শিল্পী পদ্মশ্রীতে পুরস্কৃত হয়েছেন।

এখন বাংলাদেশের বিলুপ্ত যেটা সেটা যদি প্যাটেন্ট নাম ( টাঙ্গাইল শাড়ি) নিয়ে অন্য দেশে বিশালভাবে পরিচালিত হয় তাতে আপনার আপত্তি কেন? কেন তাদেরকে টাঙ্গাইল এলাকাটি তুলে নিয়ে যেতে হবে ভারতে ? আপনি তো এদেশে শাড়ির ব্যবহারকে অস্বীকার করছেন আপনার দৈনন্দিন জীবন থেকে । আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম। আপনারা আমার মনের কষ্ট বোঝেননি।

পরিশেষে হেমন্তের এই গানটা স্বরণ করিয়ে দিই ভেতরের প্রচণ্ড কষ্ট থেকে …..যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারোনি কেন মনে রাখো তারে….ভুলে যাও প্রিয়া ভুলে যাও… ।

- Advertisement -

Read More

Recent