রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

এডিনবার্গ থেকে ভেনিস-৩

এডিনবার্গ থেকে ভেনিস

হোটেল থেকে সকাল ছয়টায় বের হয়ে সাউথ হ্যারো মেট্রো স্টেশন থেকে মেট্রো যোগে কিং ক্রস রেল স্টেশন পৌঁছি। বলা বাহল্য যে পুরো ইউরোপ জুরে নগদ টাকার ব্যবহার খুব বেশি নাই। লন্ডনে সামান্য কিছু চললেও ইউরোপের অন্যান্য দেশে খুবই কম, সবকিছুতে পেমেন্ট করতে হয় কার্ডে। সুতরাং মেট্রোতে উঠার জন্যও কার্ড ব্যবহার করতে হয়েছে। মোটামুটি সব যায়গাই আমার কার্ড কাজ করলেও কি কারণে জানি সাঊথ হ্যারো মেট্রো স্টেশনে আমার ক্রেডিট কার্ড কাজ করছে না। তাই সজল ভাইয়ের নিকট একাধিক কার্ড থাকায় কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি।

যাক, কিং ক্রস রেলস্টেশনে পৌঁছে আমরা নাস্তা সেরে নিলাম। টিকেট ঢাকা থেকে আগেই অনলাইনে কেটেছিলাম। ট্রেন ছাড়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল ৮:৪০, প্লাটফরমে ট্রেন আসল ঠিক পাঁচ মিনিট আগে। এ সময়ের মধ্যেই সকল যাত্রী ট্রেনে ওঠে গেলেন। যাত্রী খুব বেশি না। আমাদের কামরায় প্রায় অর্ধেক সিট খালি ছিল। যাক, স্কটল্যান্ডের সাবেক রাজধানী এডিনবার্গের উদ্দেশে যাত্রা করলাম। ট্রেন চলছে প্রায় ১৫০ কি.মি. প্রতি ঘণ্টা গতিতে। কোনো শব্দ নেই, ঝাঁকি নেই। বাইরে কি নয়নাভিরাম দৃশ্য! দু’পাশ দিয়ে ফসলের মাঠ। লন্ডন থেকে এডিনবার্গ যেতে মাঝে নর্দাম্পটন, লিচেস্টারম, নিটিংহাম, ইয়র্কসহ মাত্র পাঁচ স্থানে থেমেছে। খুবই আরামদায়ক ছিল এ ট্রেন ভ্রমণ। দেখতে দেখতে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর এডিনবার্গ পৌঁছালাম।

- Advertisement -

এডিনবার্গ ওয়েভারলি স্টেশন থেকে বের হয়ে উবার নিয়ে চলে গেলাম আমাদের বুকিংকৃত হোটেলে। স্টেশন থেকে হোটেলের দূরত্ব ছিল প্রায় ৩০ কি.মি.। ঢাকা থেকে বুকিং করায় স্টেশন থেকে হোটেলের দূরত্ব আমাদের ধারণায় ছিল না। (The Stair Arms Hotel, Midlothian, Edinburgh, Scotland) হোটেলটি দোতলা ভবন, রিসিপশনে মাত্র একজন মহিলা সবকিছু কন্ট্রোল করে, আলাদা কোনো বয় বা সহকারি কর্মী নেই। রিসিপশন থেকে চাবি নিয়ে নিজের লাগেজ নিজেই বহন করে রুমে যেতে হয়। আমরাও তাই করলাম। খুবই সুন্দর, মনোরম পরিবেশ, সামনের দিকে রাস্তা আর তিনদিকে শুধু নানান ধরনের ফুলের বাগান ।

আমরা গোসল সেরে দুপুরের খাবার খেয়ে সিটি সেন্টারে চলে গেলাম। দুপুরের খাবার মানে আমরা লন্ডন থেকে যেসব ফার্স্ট ফুড সাথে নিয়ে এসেছিলাম সেগুলো। পুরো ইউরোপ জুরে যদি কোনো বাঙালি পরিচিতজনের বাসায় না যাওয়া হয় তাহলে খাবার বলতে সাধারণত ম্যাগডোনালস, কেএফসি ইত্যাদি ফার্স্টফুড জাতীয় খাবারই ভরসা। যাক, সিটি সেন্টারে যাওয়ার জন্য হোটেল থেকে বের হয়ে আমরা টাউন সার্ভিসের বাসস্টপে আসলাম, এসে দেখলাম বাসস্টপেজে ইলেক্ট্রিক সাইনবোর্ডে বাস আসার সময় লেখা আছে, এই স্টপেজে বাস আসবে এক ঘণ্টা পর।

আমাদের হাতে খুব সময় নেই, এখন কি করা যায় ভাবতেছি, আসেপাশে কোনো জনমানব নেই যে কাউকে জিজ্ঞাসা করবো এমন সময় দেখলাম সামান্য দূরে ৩৫/৪০ বছর বয়সের একজন লোক প্রাইভেট কারের ভিতরে বসে আছেন, তার কাছ গিয়ে আমাদের পরিচয় দিলাম এবং তাকে আমাদের সমস্য বুঝিয়ে বললাম। সে একজন কবি আর আমরা বাংলাদেশের দু’জন প্রকাশক শুনে সে খুবই খুশি হলো এবং বললো আমার গাড়িতে উঠো আমি সিটি সেন্টারের কাছাকাছি যাবো, সেখান থেকে খুব কাছেই সিটি সেন্টার। যেহেতু তিনি একজন কবি আমরাও সাহস করে তার গাড়িতে উঠে পড়লাম। স্কটিস কবি নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে আমাদের সিটি সেন্টারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর এডিনবার্গ তথা স্কটল্যান্ড সম্পর্কে অনেক তথ্য দিলেন এবং বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কেও জানতে চাইলেন। শহরের কাছে তিনি আমাদেরকে একটি দ্বিতল দেখিয়ে বললেন তোমরা ঐ বাসে স্টশনে চলে যেতে পার বলে আমাদের নামিয়ে দিয়ে নিজে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আমরা দ্বিতল বাসে উঠে ‍সিটি সেন্টারে আসলাম।

বাসে এবং পায়ে হেটে যথাসম্ভব এডিনবার্গ সিটি ঘুরে দেখলাম। রাজার বাড়ি, টিউলিপ ফুলসহ নানা ধরনের ফুলবাগান, সাগর তীর, বিভিন্ন মার্কেট, শহরের আধুনিক ও ঐতিহ্যবাহী পুরতান স্থাপনা ইত্যাদি। রাতের খাবার সিটি সেন্টার থেকেই সেরে হোটেলে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখানে পানির খুব দাম। আধা লিটার পানির বোতল ২ পাউন্ড যা বাংলা টাকায় ৩০০ টাকা। একবার ওয়াসরুম ব্যবহার করলেও ২ পাউন্ড। এ অবস্থা পুরো ইউরোপ জুরে, শুধুমাত্র এয়ারপোর্টে ওয়াসরুম ব্যবহার ফ্রি, আর কোথাও নয়।

(চলবে)

- Advertisement -

Read More

Recent