শনিবার - এপ্রিল ২৭ - ২০২৪

তৃতীয় সংস্করণ: একটি উপলব্ধি

মার্গারেট অ্যাটউডের ভাবনায় Writers and readers are joined at the hip তিনি joined at the hip বলতে প্রকৃতপক্ষে লেখক ও পাঠকের মধ্যকার সম্পর্কের পরিপূরকতাকেই বুঝিয়েছেন

মার্গারেট অ্যাটউডের ভাবনায় ‘Writers and readers are joined at the hip. … ’। তিনি ‘joined at the hip’ বলতে প্রকৃতপক্ষে লেখক ও পাঠকের মধ্যকার সম্পর্কের পরিপূরকতাকেই বুঝিয়েছেন। মানব দেহ নিতম্ব (hip) প্রদেশে প্রায় সমভাগে বিভাজিত হলেও ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গ নিয়েই অর্জিত হয় শরীরী পূর্ণতা ও সার্বভৌমত্ব। একটি সার্থক গ্রন্থ তার পাঠক ও লেখকের মধ্যে নির্মাণ করে অবিচ্ছেদ্য বন্ধন ও নিবিড় সংযোগ-সেতু। যে কোনো একটি লেখা চলমানথাকাকালে লেখক তাঁর কল্পনায় দেখে নেন একজন পাঠককে। একজন কল্পিত পাঠককে সামনে বসিয়ে রেখে তিনি তাঁর কর্ম সম্পাদন করেন। অনুরূপভাবে, একজন পাঠক একটি লেখা পাঠরত অবস্থায় অবলোকন করতে পারেন তাঁর কল্পজগতের লেখককে। অজানা পাঠক ও অচেনা লেখক ক্রমশ অদৃশ্যভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন একটি দৃশ্যমান ক্যানভাসে। একটি কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ কিংবা যে কোনো একটি লেখা হয়ে ওঠে সাহিত্য-গ্রন্থি (Literary hip)। এইভাবে লেখকসত্ত্বার পূর্ণতাপ্রাপ্তিতে পাঠকের মূল্যায়ন অর্জন করে অনিবার্যতার উচ্চতা। এই ক্ষেত্রে, একটি গ্রন্থের মূল্যায়নকারী হিসেবে পাঠকের ভূমিকা হয়ে ওঠে অনেকটা সুরকারের মতোই। বিশেষ একটি সংগীত যেভাবে ভিন্ন ভিন্ন সুরকারের বিবেচনায় ভিন্নভাবে স্বকীয়তার উদ্ভাস ছড়ায়, বিভিন্ন মূল্যনিরূপকের রিভিউতে একটি গ্রন্থও আলোচিত হয় ভিন্ন ভিন্ন মান, মাত্রা, দৃষ্টি ও উচ্চতায়।

পাঠকের ব্যাখ্যান ও মূল্যায়নের নির্দিষ্ট স্তর অতিক্রম করে প্রকাশিত হলো ‘ইয়েটসের কবিতায় নারী ও নিকুঞ্জ’ গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণ: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৪। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে। প্রায় সাড়ে ছয় বছর পর গ্রন্থটির পরিমার্জিত দ্বিতীয় সংস্করণ পাঠকের হাতে তুলে দেয়া হয় ২০২৩ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। দ্বিতীয় সংস্করণ বাজারে আসার ঠিক এক বছরের মাথায় তৃতীয় সংস্করণের তাগিদ আসে গ্রন্থটির বাংলাদেশ পরিবেশক জনপ্রিয় প্রকাশনা সংস্থা ‘মূর্ধন্য গ্রাফিক্স’-এর কর্ণধার সঞ্জয় মজুমদারের কাছ থেকে। সঞ্জয় মজুমদারের এমন অপ্রত্যাশিত পেশাদার তাগিদ শিহরণ জাগিয়েছে গ্রন্থকারের কল্পনার ডানায়। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সুচিন্তিত পরিবেশকসুলভ নীতিমালার কারণে গ্রন্থটি প্রদর্শিত হয় ঢাকার বাইরে বিভিন্ন গ্রন্থমেলায়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার বইমেলায় ‘ইয়েটসের কবিতায় নারী ও নিকুঞ্জ’ প্রবেশাধিকার পেয়েছে বোদ্ধা পাঠকের নিলয় ও নিকুঞ্জে; সমাদৃত হয়েছে তাঁদের বৌদ্ধিক অনুষদে। প্রকাশক, পরিবেশক ও পাঠকের জন্যে গ্রন্থকারের চিরকালিন কৃতজ্ঞতা।

- Advertisement -

পুনশ্চ: গ্রন্থ-রচয়িতার হৃদয় থেকে উৎসারিত হচ্ছে আনন্দ-অভিবাদন, ইয়েটস-অনুরাগী পাঠকমণ্ডলীর জন্যে। বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাই মাস্টার্স চূড়ান্ত পর্বের ছাত্র-ছাত্রিদের, যাঁরা ইতোমধ্যে সংগ্রহ করে গ্রন্থটিকে নিজেদের করে নিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা জানাই ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স পর্বের শিক্ষকদের, যাঁদের প্রচেষ্টায় এই কাব্যপ্রাণ গ্রন্থটি সংগৃহীত হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের লাইব্রেরিতে। পরিকর্তন ও পরিবর্ধন প্রক্রিয়ায় পরিমার্জন শেষে বর্ধিত কলেবরে প্রকাশিত হয়েছে এই সংস্করণটি। সংযোজিত হয়েছে একটি তেইশ পর্বের সূচি, যার খণ্ড খণ্ড দর্পণ অনায়াসে ছড়িয়ে দেবে একজন অখণ্ড ইয়েটসের প্রাসঙ্গিক উদ্ভাস। যাঁর কবিতায় বৃত্তাকার কক্ষপথে নারীত্ব, যৌনতা আর আধ্যাত্মিকতা নিরন্তর প্রদক্ষিণ করলেও নেই কোন ছাপ-ছোপ ইন্দ্রিয় লালসার। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয় তাঁদের কথা যাঁরা শ্রম, মেধা ও সময় ব্যয় করে গ্রন্থটি রিভিউ করেছেন। বাছাইকৃত, বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত, তিনটি রিভিউ সংযোজিত হয়েছে তৃতীয় সংস্করণে। প্রত্যয়ের সাথে বলা যায়, রিভিউগুলো পাঠকের দরবারে ইয়েটসীয় নির্যাস ছড়াতে গিয়ে কোনো রকম কার্পণ্যের আশ্রয় নেবে না।

গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ‘ইয়েটসের কবিতায় নারী ও নিকুঞ্জ’ নিয়ে প্রাণজ বাক্যসৌরভ ছড়িয়ে যাঁরা লেখকের অ্যাকাউন্টে ঋণের দায় চাপিয়েছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন গবেষক, সাহিত্য-সমালোচক ও টেলিভিশন-সঞ্চালক সুব্রত কুমার দাস (Subrata Kumar Das), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি’র ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক, কবি ও অনুবাদক ড. গৌরাঙ্গ মোহান্ত (Gauranga Mohanta), মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ রিজভী জামান (Rezvi Zaman), মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, চট্টগ্রাম-এর কন্ট্রোলার অফ এক্সামস প্রফেসর মুজিব রহমান (Mujib Rahman), বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার চীফ নিউজ এডিটর সমীর বড়ুয়া (Samir Barua), শিল্প উদ্যোক্তা শরীফুল আরেফিন খান (Shariful Arefin Khan), লেখক ও চিন্তক আকবর হোসেন (Akbar Hussain), বন্ধুবর আব্দুল হাফিজ দেওয়ান (Abdul Hafiz Dewan), প্রিয়জন সায়ীদ যাদিদ Saeed Jadid (প্রয়াত) এবং আরও অনেক বোদ্ধা পাঠক যাঁদের নাম পরিসরগত সীমাবদ্ধতার কারণে অনুল্লেখিত রয়ে গেলো।

এই গ্রন্থের মাধ্যমে অজানা অচেনা প্রিয় পাঠকরা সম্পৃক্ত হয়ে গেলেন গ্রন্থকারের সাথে, কিন্তু তাঁরা চিরকালের জন্যে অ-দৃশ্যমান থেকে গেলেন একটি মহাকালিন ক্যানভাসে। ঘটনাটি বিষাদের; বিষয়টি বেদনার।

- Advertisement -

Read More

Recent