রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

আমার ইউরোপ ভ্রমণ : এডিনবার্গ থেকে ভেনিস : পর্ব ৪

এডিনবার্গ থেকে ভেনিস

খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে ব্যাগ গুছিয়ে হোটেলের রিসিপশনে আসলাম, দেখলাম রিসিপশনে কেউ নেই, আমরা নিজ দায়িত্বে চাবি কাউন্টারের ওপর রেখে উবারে ওঠলাম। এডিনবার্গ ওয়েভারলি রেল স্টেশনে পৌঁছলাম, গন্তব্য ইংল্যান্ডের একটি শহর লিডস্। লিডসে যেতে মাঝখানে ইয়র্কে ট্রেন বদলাতে হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে লিডসে পৌঁছলাম, আগে থেকেই স্টেশনের বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন কবি শাহনূর ইসলাম।

শাহনূর ভাই সজল ভাইয়ের পূর্ব পরিচিত । খুবই অমায়িক ভদ্রলোক, তিনি নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে আমাদেরকে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের সাথে আমাদের পরিচয় করে দিলেন। ভাবী ছাড়াও উনার ২ ছেলে এক মেয়ে। শাহনূর পূরোদস্তোর একজন বাঙালি কবি হলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বাংলা জানা থাকলেও ইংজেতেই উনারা কথা বলতে সাচ্ছন্দবোধ করেন। ছেলেমেয়েদের জন্ম ওখানেই। এমনকি ভাবীও বাঙালি বংশদ্ভোত হলেও উনার শিশুকাল, বেড়ে ওঠা সবই ওখানে। শাহনূর ভাইয়ের পরিবারে উনার ছেলের ঘরের নাতি-নাতনিও আছে। সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে শাহনূর ভাই খুব আরাম আয়েশেই আছেন।

- Advertisement -

হালকা নাস্তা করে শাহনূর ভাই আমাদেরকে নিয়ে গেলেন পাশেই একটা লেকের ধারে। লেক পযর্ন্ত পৌঁছাতে এক বিশাল মাঠ অতিক্রম করতে হয়, অনেক সুন্দর মাঠ চারিদিকে বড় বড় গাছ ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে, মাঝখানে সবুজ ঘাস, হালকা রোদে ঘাসগুলো খুব চমৎকার লাগছে। সজল ভাই তো লাফ দিয়ে বলে উঠলেন এমন সুন্দর যায়গায় বসে কবিতা লেখা শুরু করলে কবিতা তো মাথায় এমনিতেই আসবে। লেকের পানি খুবই স্বচ্ছ, অনেক রাজা হাঁস আছে, হাতে ধরা যায়, আমরা বেশ কিছুক্ষণ লেকের আসপাশ ঘুরে শাহনুর ভাইয়ের বাসায় ফিরলাম। দুপুরে আমাদের জন্য ভাবী বাঙালিয়ানা বাহারী খাবার নিজেই রান্না করেছেন, উনাদের মেয়ে তাতে সহযোগিতা করেছেন। ৬ তারিখ রাতে ঢাকা থেকে নিজের বাসায় দেশি খাবার খাওয়ার পর এই প্রথম আবার দেশি খাবার খাওয়ার সুযোগ হলো।

সেখানে উনার পরিবারের সদস্য ছাড়াও আনোয়ার হোসেন রেজা ভাইয়ের সাথে পরিচিত হলাম। দুপুরের খাবারের পর আসলেন লিডস্ সিটি কাউন্সিলর জনাব আবদুল হান্নান ভাই। তিনিসহ আমরা লিডস্ শহর ঘুরতে বের হলাম, হান্নান ভাই শহরের বিভিন্ন স্থান ও স্থাপনা সম্পর্কে আমাদেরকে ব্রিফ করছেন। আমাদেরকে নিয়ে গেলেন ইয়র্কশায়ার স্কুল ও ইউনিভার্সিটি অব লিডস্-এ। ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এর বিভিন্ন একাডেমিক ভবন ও হলরুম ঘুরে দেখলাম। সেখানের ছাত্রসংসদ ভবনেও গেলাম, এ ইউনিভার্সিটির ছাত্রসংসদের কাজ সম্পর্কে জানলাম। উনারা জানালেন যে, ছাত্রসংসদের প্রধান কাজ হলো গরিব ও অস্বচ্ছল ছাত্রদের থাকা এবং টিউশন ফি জোগান দেওয়ার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা, শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করা। লিডস্ ইউনিভার্সিটি ঘুরে দেখতে দেখতে সন্ধ্যা নেমে এলো সিটি কাউন্সিলির জনাব হান্নান ভাই তার জরুরি কাজ থাকায় চলে গেলেন। আমরা এবার রাতের লিডস্ শহর ঘুরে দেখলাম। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক স্মৃতি আছে, শাহনুর ভাই ও আনোয়ার ভাই আমাদেরকে লিডস্ শহরের আদ্যপান্ত যতটুকু সম্ভব ঘুরে দেখালেন ও নানা বিষয়ে ব্রিফ করলেন।

রাতে শাহনূর ভাইয়ের বাসায় রাত্রি যাপন করলাম। বাড়িটি শাহনূর ভাইয়ের নিজস্ব, ডুপ্লেক্স বাড়ি, যায়গার তেমন কোনো অভাব নেই। আমাদের দুইজনের জন্য দুটো আলাদা রুম দিলেন রাতে থাকার জন্য। আমরা অবশ্য গল্প করেই রাতের বেশির ভাগ অংশ কাটিয়ে দিয়ছি। যাক, পরদিন সকালে আবার ট্রেনে করে লন্ডন উদ্দেশে যাত্রা। মোবাইলে এলার্ম দেওয়া ছিল, সময়মত ওঠে গেলাম। ওঠে দেখি আমাদের আগে ওঠে গেছেন শাহনূর ভাই ও ভাবী। এত সকালে ভাবী আমাদের জন্য নাস্তা রেডি করলেন। আমরা সামান্য নাস্তা করলাম। শাহনূর ভাই ও ভাবী দুজনেই আমাদেরকে লিডস্ রেল স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে গেলেন। অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞাতা এই পবিারের প্রতি। (চলবে)

- Advertisement -

Read More

Recent