রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

রোজার শুরু

ছবি জেন পি

আগেই যেমনটা বলেছি, অর্থাৎ জানুয়ারি মাসের ৯ তারিখ বৃহস্পতিবার থেকে রোজা রাখতে শুরু করলাম। ভোরে যৎসামান্য খেয়ে এবং সারাদিন না খেয়ে। ছোট দিন, সাড়েচারটায় মাগরিবের আজান, অসুবিধা হয় না। কাজেই, আধা কিংবা জলরোজা না, একেবারে খাঁটি ইসলামি রোজা রাখতে থাকলাম। অফিসে আমার কলাম্বিয়ান কলিগ হুয়ান কার্লোস গনজালেস একদিন জানতে চাইল, তোমাদের রোজার মাস কি শুরু হয়েছে?

বললাম, না, ওটার শুরু হবে এপ্রিলের শেষে।

- Advertisement -

: তাহলে?

: নতুন ডায়েট শুরু করেছি।

তারপর তাকে অধ্যাপক সিনক্লেয়ারের কথা বললাম। বললাম, ভদ্রলোক হার্ভার্ডের অধ্যাপক, দীর্ঘায়ু নিয়ে গবেষণা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, রোজা রাখলে শরীর রোগমুক্ত থাকে। তখন তাকে অটোফ্যাজির কথা বললাম। বললাম, জাপানের একজন বিজ্ঞানী এই অটোফ্যাজির জন্য ২০১৬ সালে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছে এবং রোজা রাখলে, বিশেষ করে ১৬ ঘণ্টার অধিক সময় ধরে রাখলে শরীরে অটোফ্যাজি শুরু হয়।

: সারাদিন কোনো কিছু না খেয়ে বিশেষ করে পানি না খেয়ে কীভাবে থাকো?

: আমাদের ইসলামি রোজায় পানি খাওয়া নিষেধ। তবে, এই বিজ্ঞানীদের রোজায় পানি খেলে রোজা নষ্ট হয় না। তারা একে ওয়াটার ফাস্টিং বলছে। তবে, এই রোজাতেও অটোফ্যাজি চলতে থাকে।

পাঁচদিন রোজা রাখার পরে তিনদিন বিরতি দিলাম। সকালবেলা কোনো কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। শরীর চর্বি গলিয়ে চলতে চলতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে, মগজের কোষে খাবারের কোনো বাড়তি চাহিদা তৈরিই হচ্ছে না। তা সত্তে¡ও, কোনো কোনো দিন সকালে একটা অ্যাভোকাডো খাই এবং দুপুরে টিফিনে সালাদ খাই―তাতে কখনো শশা-টমেটো (বিচি ফেলে দেওয়া, কেবল টমেটোর বিচিই কেবল না, সকল উদ্ভিদের বিচিতে লেকটিন নামক বদ-আমিষের সুরক্ষা দেয়াল থাকে, সেজন্য বিচি খেলে তার খোসা ছাড়িয়ে খেতে বলে ডাক্তার গ্রান্ডি), কখনো লাল-হুলুদ ক্যাপসিক্যাম, সাথে অলিভ অয়েল, বাদামও থাকে। তিনদিন পরে আবারও পাঁচদিনের রোজা। এভাবে তৃতীয়বার ৫ দিনের রোজা যখন তৃতীয় দিনে গড়ালো, তখন বুঝলাম শরীর আর রোজা নিতে চাচ্ছে না। তার মানে সঞ্চিত চর্বিতে টান পড়েছে। সেদিন দুপুর ২টার পরে পেট চনচন করতে থাকলে বাদাম খেয়ে কোনোমতে ক্ষুদা নিবারণ করলাম। কিন্তু, পেট কি তাতে ঠাÐা হয়? সেজন্য বাসায় ফিরে গোগ্রাসে খেয়ে ফেল্লাম। বউ জিজ্ঞেস করলো, কী ব্যাপার! আজকে রোজা রাখোনি?

বললাম, রেখেছিলাম। কিন্তু শেষতক থাকতে পারলাম না। টাইট অবস্থা।

: মানে কী?

: মানে, দুপুরের পরে পেট মোচর দিতে শুরু করেছে। কোনোভাবেই থামানো গেল না। বাদাম ছিল, সেটাই খেয়েছি।

: ভালো করেছ। এমসিটি অয়েল নিয়ে রাখতে পারো।

: তা আর লাগবে না। ভাবছি, এখন থেকে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করবো।

: শোনো, তোমাকে আর ফাস্টিং করতে হবে না। আয়নায় মুখ দেখ, একেবারে কাঠি কাঠি।

আসলে কেবল মুখই না, পেটের ভেতরেও কাঠি কাঠি দশা, মানে কোষ্ঠকাঠিন্য। রোজার দশদিন যেতে না যেতেই তার শুরু। প্রথম একদিন, পরে দুইদিন এবং আরও পরে তিনদিনের ব্যবধানে পায়ুপথের দরজা খোলে, তবে অতিকষ্টে। আমি একটু একটু করে ভয় পেতে শুরু করলাম। শাক-সবজি কি পেট নরম রাখার জন্য যথেষ্ট না? ইসবগুলের ভুষির জন্য মনটা আনচান করতে থাকলো। ইন্ডিয়ান গ্রোসারিতে ওটা পাওয়া যায়। আর ওয়ালমার্টে নানাব্রান্ডের যা পাওয়া যায়, তাতে অনেক চিনি মেশানো। কেন যে এত চিনি মেশায়, আল্লাই জানেন। পরদিন ওয়ালমার্ট থেকে তেমন এক বোয়াম ইসবগুলের ভুষি কিনে আনলাম। সকাল বিকাল ২বার করে কয়েকদিন খাওয়ার পরে কোষ্ঠকাঠিন্য মশাইয়ের মনে বোধহয় একটু দয়া হল। আমিও ক্ষণিকের স্বস্তি পেলাম। আসলে এটা ছিল ভাসমান বরফের উপরের অংশ দেখার মতো ঘটনা। তখন পর্যন্ত খাদ্যনালিতে বসবাসরত ব্যাকটেরিয়াদের সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ, ফলে খাবার নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলাম না। ডাক্তার জাহাঙ্গীর কিংবা অন্যান্যদের বয়ানে প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিক শব্দগুলো কানে ভেসে এলেও তা মনের ওপর জোর খাটাতে সক্ষম হয়নি। আমিও ওজন কমানোর আনন্দে সকলকে উপেক্ষা করে গেছি। এবার হাতে নাতে তার ফল পেতে শুরু করলাম। রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে শুরু করলো। রক্তের চাপও বাড়তির দিকে। রক্তে ইলেকট্রলাইটের ভারসাম্য ধরে রাখার জন্য সমানে ডাবের জল খেয়ে গেছি। ক্যারিবিয়ান দেশগুলো থেকে আসা তাজা ডাব পাওয়া যায় বটে, তবে আমাদের নজর থাইল্যান্ড থেকে আসা প্যাকেটজাত জল। প্যাকেজের গায়ে পরিষ্কার লেখা: কোনো প্রিজার্ভেটিভ নেই। মনে সন্দেহ! সুদূর থাইল্যান্ড থেকে কতমাস ধরে হাজার হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে এখানে বিক্রি হচ্ছে, তা কি কেবল প্রাকৃতিক শক্তির ওপর ভরসা করে? একদিন ডাবের জল খাওয়া বন্ধ করে দিলাম। তিনদিনের মধ্যেই রক্তের চাপ নেমে গেল।

ততদিনে ওজম ৮-৯ কেজির মতো কমে গেছে, বেশ হালকা লাগছে এবং সবচেয়ে বড় কথা, দীর্ঘদিন ধরে শরীরে স্থায়ীভাবে গেড়ে বসা ভূরি মশাই বিদায় হয়েছে।

ক্যালগেরি, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent