রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

আমার বন্ধু রাহাত খান

রাহাত খান

কথাশিল্পী রাহাত খানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান হচ্ছিলো বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইস্ফেন্দিয়ার জাহেদ হাসান মিলনায়তনে। উদ্যোগটা রেজাউদ্দিন স্ট্যালিনের। নব্বুইয়ের সুচনালগ্নে সম্ভবত ৯২/৯৩ সালের ঘটনা। মিলনায়তন উপচে পড়া ভিড়। রাহাত ভাই বলে কথা। সমাজের নামিদামি মানুষের বিপুল সমাহার ঘটেছে ছোট্ট মিলনায়তনে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে মঞ্চ। শ্রদ্ধেয় প্রবীনরা একের পর এক বক্তৃতা করে যাচ্ছেন। মঞ্চে বসে হাস্যোজ্জ্বল রাহাত খান কিছুটা আনন্দিত কিছুটা বিব্রত ভঙ্গিতে উপভোগ করছেন শুভেচ্ছা বক্তৃতা। দর্শক সারিতে বন্ধুদের সঙ্গে বসে আছি আমিও। হঠাৎ স্ট্যালিন শুভেচ্ছা বক্তব্য দেয়ার জন্যে আমার নামটি ঘোষণা করে বসলো। আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আসন ছেড়ে স্টেজে উঠে যেতে যেতে কয়েক সেকেন্ডে খুবই ক্ষিপ্র গতিতে দুয়েকটা পয়েন্ট ভেবে রোস্টামের সামনে দাঁড়িয়ে আমি বললাম—সমবেত সুধীমন্ডলী এবং বন্ধু রাহাত খান।

আমার কন্ঠে উচ্চারিত ‘বন্ধু রাহাত খান’ শব্দটা পুরো মিলনায়তনকে যেনো বা আচমকা হতবাক করে দিলো। একটু পজ দিয়ে আমি বললাম—আজ আমি খুবই আনন্দিত যে আমার বন্ধু রাহাত খানের …তম জন্মদিনের চমৎকার একটা আয়োজনে আমি শামিল হতে পেরেছি। প্রথমবার স্লিপ অব টাঙ ভেবে যাঁরা স্বস্তিতে ছিলেন তাঁরা এবার দিগুণ অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসলেন, আমার দিকে ভ্রুকুঞ্চিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতে। দর্কদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আমি খুব দ্রুত একবার রাহাত খানের দিকে তাকিয়ে নিলাম। রাহাত ভাই হাসছেন মিটিমিটি।

- Advertisement -

আমি বলে চললাম—রাহাত খানকে আমি বন্ধু সম্বোধন করায় আপনারা অনেকেই বিস্মিত দেখছি। সত্যি সত্যি রাহাত খান আমার বন্ধু। এই বাংলাদেশের যে ক’জন খ্যাতিমান পুরুষ বার্ধক্যকে পরাজিত করে তারুণ্যের প্রতীক হয়ে আছেন রাহাত খান তো তাঁদেরই অগ্রগণ্য একজন। আধমরা বুড়োদের চাইতে চনমনে তরুণদের সঙ্গেই বন্ধুত্বে গড়তে আগ্রহী এবং পারংগম তিনি। বয়েসকে হিশেবে ধরেন না বলেই এই প্রজন্মের আমি লুৎফর রহমান রিটনও রাহাত খানকে প্রকাশ্য সভায় বন্ধু বলে সম্বোধন করতে পারি। ……বন্ধু রাহাত খান আপনি বেঁচে থাকুন ঈর্ষণীয় তারুণ্যের সবুজ দীপ্তিতে।

আমার বক্তৃতা শেষ কিন্তু শ্রোতা-দর্শকদের করতালি যেনো থামতেই চায় না। আর করতালিটা শুরু হয়েছে রাহাত খানের হাত থেকেই।

রাহাত খানের বন্ধুত্ব এবং সাহচর্য যাঁরা পেয়েছেন তাঁরা সবাই জানেন কী অসাধারণ কথক তিনি। প্রচন্ড উইটি। তাঁর স্মার্টনেসের কোনো তুলনা নেই। তাঁর সঙ্গে আড্ডা দেয়ার মজাটাই আলাদা। একজন কথাসাহিত্যিক হিশেবে রাহাত খান বিপুল শক্তিমান। তাঁর রচিত উপন্যাস ‘সংঘর্ষ’ এবং ছোটগল্প ‘ভালোমন্দের টাকা’ আমার প্রিয় দুটি বই। তবে ছেলেবেলায় পড়া প্রিয় বইটি হচ্ছে—দিলুর গল্প। এই একটি বই-ই আমাদের শিশুসাহিত্যে রাহাত খানকে স্থায়ী আসন করে দিয়েছে।

আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ছোটদের জন্যে একটি সিরিজ নাটক করেছিলাম ‘হইচই’ নামে। এই সিরিজে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ গল্প উপন্যাসের নাট্যরূপ প্রচারিত হতো। আমার চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় এই সিরিজে রাহাত খানের দিলুর গল্প, মুহম্মদ জাফর ইকবালের দীপু নাম্বার টু, আলী ইমামের বনকুসুমপুর রহস্য, মোহাম্মদ নাসির আলীর লেবু মামার সপ্তকান্ড, রাবেয়া খাতুনের লাল সবুজ পাথরের মানুষ সহ ফরিদুর রেজা সাগর, আবদুশ শাকুর প্রমুখ লেখকের গল্পের নাট্যরূপ প্রচারিত হয়েছিলো। নাটকের শুরুতেই আমি লেখক এবং তাঁর লেখালেখি বিষয়ে ঝটপট কিছু তথ্য উপস্থাপন করতাম। প্রচারিতব্য নাটকের গল্পটির বাইরেও লেখকের আর কি কি উল্লেখযোগ্য বই আছে, লেখক এখন কি করছেন কোথায় আছেন তার বর্ণনা থাকতো আমার কথায়। এসময় টিভি পর্দায় সেই লেখকের নানা ভঙ্গিমার কিছু স্থিরচিত্র এবং তাঁর লেখা বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ প্রদর্শিত হতো। কখনো লেখার টেবিলে বসে, কখনো পার্কের গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে, আবার কখনো কখনো কখনো নাটকের সেটে নাটকের কোনো একটি চরিত্রের গেটআপ নিয়ে আমি হাজির হতাম দর্শকদের সামনে।

রাহাত খানের দিলুর গল্পটি করার আগে আগে তাঁর শান্তিবাগ/মোমেনবাগের বাসায় গিয়েছিলাম এক সকালে। ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে পারিবারিক এলবাম থেকে ছবি বাছাই করছিলাম আমি আর ভাবী। মিসেস রাহাত খান ছিলেন এক অসাধারণ মহিলা। ভীষণ মায়াবতী এবং মাতৃরূপী ছিলেন তিনি। শুনেছি ক্ষুধার্ত তরুণ লেখকরা তাঁর কাছে গেলে পরম স্নেহে তাদের খাওয়াতেন তিনি। তরুণ লেখকের ছিন্ন মলিন জামাটি তিনি বদলে দিতেন। রাহাত খানের নতুন একটি শার্ট ক্লোজেট থেকে বের করে পরিয়ে দিতেন পরম মমতায়। থ্যাবড়ানো কিংবা ছিঁড়ে যাওয়া জুতোর ক্ষেত্রে পরিয়ে দিতেন রাহাত খানের নতুন চকচকে একজোড়া জুতো। রাহাত খান অনেকবার তাঁর শার্ট, সোয়েটার কিংবা জুতো আবিস্কার করেছেন কবি আবুল হাসান কিংবা আঁকিয়ে সৈয়দ ইকবালের পরনে। সেই অসাধারণ ভাবীর সঙ্গে সে-ই আমার প্রথম দেখা। আমাকে অনেকগুলো ছবি দিলেন তিনি। রাহাত খানের সঙ্গে তাঁর নিজের একটি ছবিও দিলেন। বললেন—‘তুমি তো লেখকের ছবির সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও দেখাও।’ জানলাম ‘হইচই’ সিরিজটির তিনিও নিয়মিত দর্শক। খুব মিষ্টি করে হেসে ভাবী বললেন, ‘আমি জানতাম তুমি একদিন রাহাত খানের গল্পকেও নাটক বানাবে। সত্যি বলতে কি আমি তোমার জন্যে মনে মনে অপেক্ষাও করছিলাম!’ ভাবীর সঙ্গে আমার কথাবার্তার সময় রাহাত ভাইকে কিছুটা বিচলিতও দেখলাম। (আমাকেও দরিদ্র ক্ষুধার্ত অসহায় লেখক ভেবে ভাবী আবার জামা-জুতো দানপর্ব শুরু করেন কিনা সেটা ভেবেই কি?)

আমার এক ধনাঢ্য বন্ধু কবীর ভাইয়ের সঙ্গে আমাকে এক সপ্তাহের জন্যে সিঙ্গাপুর যেতে হবে। পরিকল্পনাটা আকস্মিক। নিখর্চায় সাতদিনের সিঙ্গাপুর ভ্রমণের অভাবিত এবং লোভনীয় প্রস্তাব! এদিকে দুদিন পরেই বিকেলে হইচই নাটকের রিহার্সাল। স্ক্রিপ্ট লিখিনি তখনো। এখন কি করি, কি করি? কবীর ভাইই সমাধান দিলেন, ব্যাটা তুই সিঙ্গাপুরে বসেই লিখবি তোর নাটক। সিঙ্গাপুর মিস করিসনা রে বোকা…।

অতঃপর বিমানে বসে বসেই পুনঃপাঠ নিতে হলো দিলুর গল্পের। সন্ধ্যার আলো ঝলমল ছবির মতো পরিপাটি শহর সিঙ্গাপুরের রূপ লাবণ্য দেখেটেখে গভীর রাতে লিখতে বসলাম চিত্রনাট্য আর সংলাপ। কবীর ভাই নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন। ভোরের দিকে লেখা শেষ হলো। পরদিন সকালেই প্যাকেটবন্দি দিলুর গল্পকে এক্সপ্রেস কুরিয়ারে হাওলা করে দিলেন কবীর ভাই। আগামীকাল বিকেলের মধ্যেই দিলুর গল্পের স্ক্রিপ্ট রামপুরা টিভি ভবনে প্রযোজক কাজী কাইয়ুমের কাছে পৌঁছে যাবে। (আহারে রাহাত ভাই আপনি কোনোদিন জানতেই পারবেন না আমার প্রথম সিঙ্গাপুর ভ্রমণের প্রথম মূল্যবান রাতটি আপনি আমাকে জাগিয়ে রেখেছিলেন, নির্ঘুম!)

বন্ধু রাহাত খানের সঙ্গে কতো যে মজার স্মৃতি আমার।

দূর্ভাগ্যজনিত কারণে আমি দেশছাড়া হলাম ২০০১ থেকে। জাপান আমেরিকা হয়ে কানাডা এসে ডেরা বাধলাম ২০০২ এর ২৮ মার্চ। দেশান্তরি হবার বেদনায় আমি তখন কাতর। দেহটা কানাডায় থাকলেও মনটা পড়ে থাকে বাংলাদেশে। লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি। অটোয়া নদীর পাড়ে এলোমেলো কিন্তু সাজানো গোছানো পাথরের ওপর বসে থাকি। আমার পায়ের পাতা ডুবে থাকে অটোয়া নদীর জলে। আমার কেবলই দেশের কথা মনে হয়। আহারে বাংলাদেশ কবে আমি ফিরে যাবো তোর কাছে? নদীর জলে আমার ছায়াটি কেঁপে কেঁপে ওঠে। অজান্তেই গুণগুণ করে গেয়ে উঠি আমি– কবে হবে দেখা তোমার সনে প্রাণের রাজা, আমার ধুপের বাতি যায় রে নিভে যায়, প্রাণের রাজা, যদি দয়া হয়, একবার তুমি দেখা দাও আমায়…… সারেং বউ ছবিতে বৈষ্ণব বৈষ্ণবীর গাওয়া প্রতীক্ষা ও মানব প্রেমের অসাধারণ এই গানটি কি রকম বদলে ফেলে প্রেক্ষাপট! ওখানে ভিন্ন আঙ্গিকে নারী পুরুষের জায়গায় প্রতিস্থাপিত হয় দেশ। প্রিয় বাংলাদেশ। আমি গেয়ে চলি—কবে হবে দেখা তোমার সনে……। আমার চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুকণাগুলো অটোয়া নদীর জলে মিশে যায়। দূর থেকে ভেসে ভেসে ছোট ছোট ঢেউগুলো আমার পায়ে এসে আছড়ে পড়ে—হবে হবে দেখা হবে। দেখা হবে দেখা হবে…।

আমি পাগলেরে মতো বাংলাদেশে ফোন করি। আমার প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলি। তালিকাটা দীর্ঘ। আমার বহু কষ্টে উপার্জিত টাকাগুলো ফোনকার্ড কিনতে কিনতেই বুঝি শেষ হয়ে যায়। শার্লি আর নদী ব্যাপারটা টের পেলেও আমাকে ছাড় দেয়—কর টেলিফোন। যাক টাকা। তবু তুই ভালো থাক।

আমার এমন উথালপাথাল সময়ে ফোন করি রাহাত খানকেও। ২০০৬ সালের এক রাতে রাহাত ভাইকে বলি—ছেলেবেলায় আপনি যে ঘাসের আঙটি পড়তেন তা তো জানতাম না!

–তুমি এইটাও পড়ে ফেলেছো কানাডায় বসে?

–জ্বি রাহাত ভাই। আপনার একটা সাক্ষাৎকার পড়লাম কোন পত্রিকায় যেনো।

–ইন্টারনেটের কল্যাণে তো দেখছি কোনো কিছুই আর কারো অজানা থাকছে না! মাত্র গতপরশুই না বেরুলো ওটা!

রাহাত ভাই খুবই খুশি হলেন আটলান্টিকের ওপারে বসেও কেউ একজন তাঁর সাম্প্রতিকতম ব্যাপারটির প্রতিও নজর রাখছে জেনে।

দুতিনদিন পর একটা ফোন এলো। দৈনিক ইত্তেফাক থেকে। ইত্তেফাকের টেলিফোন অপারেটর আমাকে বললেন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাহাত খান জরুরি ভিত্তিতে আমাকে একটি ছড়া পাঠাতে বলেছেন। খালেক বিন জয়েন উদ্দীন সাহেবের ইমেইল এড্ড্রেস দিয়ে ভদ্রলোক বললেন—স্যার লেখাটা স্বাধীনতা দিবস বিশেষ সংখ্যায় ছাপা হবে কাইন্ডলি আগামীকাল একটি ছড়া পাঠিয়ে দেবেন প্লিজ!

আমি খুবই মজা পেলাম। ইত্তেফাকের টেলিফোন অপারেটর ভদ্রলোককে রাহাত ভাই দায়িত্ব দিলেন কেনো! তাহলে কি আমাকে ফোন করে পাননি রাহাত ভাই? মে বি।

যাক। আমি একটু চিন্তা করে ছড়ার একটি বিষয় এবং সিকোয়েন্স তৈরি করলাম। সেই রাতে খুব দ্রুতই লেখা হয়ে গেলো একটি নতুন ছড়া। পরদিন ছড়াটা পাঠিয়ে দিলাম খালেক ভাইকে। কচি-কাঁচার আসরটা তিনিই দেখভাল করেন। ছড়াটা এখানে তুলে দিচ্ছি—

মিনিস্টারের মেয়ে

লুৎফর রহমান রিটন

‘—বাবা তুমি হাঁটতে হাঁটতে বাঁধছ টাই-এর নট!’

‘—মা রে আমার ভীষণ তাড়া, বেরুচ্ছি ঝটপট।’

আয়না দেখার পায় না সময় ব্যস্ত আমার বাবা

বাবার ছবি টিভিতে আর পত্রিকাতে পাবা।

রোজ ছাপা হয় বাবার ছবি, রোজ দেখা যায় তাকে—

বক্তৃতা দেয়, মিনিস্টার তো! এমন হয়েই থাকে।

আমি হচ্ছি মন্ত্রীকন্যা, দাপট কি আর কম?

যেখানে যাই স্যালুট এবং সুবিধা হরদম।

তোমরা বুঝি ভাবছো আমি অহংকারি মেয়ে?

আমি জানি কেউ দুখী নও তোমরা আমার চেয়ে।

টাকার পাহাড় বিলাস বাহার মজার আহার ছাড়া

মর্যাদাহীন মানুষ আমি, নিঃস্ব সর্বহারা।

রাজনীতিবিদ বাবার জীবন মিথ্যে দিয়ে ঠাসা

আমার বাবা পায় না আমার শ্রদ্ধা-ভালোবাসা।

খুব গোপনে কাঁদি এবং ঘৃণাই করি তাকে

ঘৃণাই করি জ্ঞানপাপী এই জটিল মানুষটাকে।

কারণ, লোকটা মিথ্যে বলে বক্তৃতা আর লেখায়

কারণ, লোকটা শিশুদেরকে মিথ্যে কথা শেখায়।

‘স্বাধীনতার ঘোষক মুজিব’ বলত বাবা আগে

কিন্তু এখন বাবার কথা শুনলে অবাক লাগে!

বাবার দাবি ‘মেজর জিয়াই স্বাধীনতার ঘোষক’

বাবা এখন রাজাকারদের খাদেম, পৃষ্ঠপোষক!

মিনিস্টারের মেয়ে আমি মিনিস্টারের মেয়ে

কিন্তু আমি নই খুশি নই এমন বাবা পেয়ে।

মিথ্যেবাদী মন্ত্রীবাবা তোমরা নিয়ে নাও

তার বদলে আমায় একটা সত্যি বাবা দাও।

স্বাধীনতা দিবস সংখ্যা ইত্তেফাক বেরুলো। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে সংখ্যাটা পেলাম। কিন্তু কচি-কাঁচার আসরে লেখাটা নেই। তাহলে কি রাহাত ভাই লেখাটা অন্য কোনো বিভাগে মানে বড়দের পাতায় ছেপে দিয়েছেন?

তন্ন তন্ন করে প্রায় গরু খোঁজা করেও লেখাটার কোনো হদিস পাওয়া গেলো না। কচি-কাঁচার আসরে পুনঃরায় খোঁজ দ্যা সার্চ দিয়ে অবশেষে পাওয়া গেলো আমার নামটি। আমার দুতিনটে স্বাধীনতার ছড়া ওখানে মুদ্রিত হয়েছে বটে। কিন্তু ছড়াগুলো পুরনো,আমার কোনো একটা বই থেকে নেয়া। ঘটনা কি?

একটা ছড়া ছাপা হওয়া না হওয়া নিয়ে আমার বিচলিত হওয়া মানায় না কিন্তু তারপরেও আমি খানিকটা সংকটে পড়ে গেলাম। আমার কাছ থেকে এরকম চেয়ে নিয়ে নতুন ছড়াটি না ছেপে রাহাত ভাই পুরনো ছড়া ছাপতে গেলেন কেনো?

ফোন দিলাম খালেক ভাইকে

–ভাইজান ঘটনা কি?আমার লেখাটা পান নাই?

–পাইছি তো সময় মতোই।

–তাইলে পুরান লেখা ছাপাইলেন যে!

–আরে মিয়া তোমার লেখা এই সংখ্যায় না ছাপাইলে রাহাত ভাই আমার চাকরি খাইয়া ফালাইতো। বাধ্য হইয়া পুরান লেখা ছাপছি।

–আমার নতুন লেখাটা কই?

–রাহাত ভাইয়ের কাছে। তুমি রাহাত ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলো।

রহস্যের আঁচ পেয়ে আমি ফোন দিলাম রাহাত ভাইকে। আমাকে টেলিফোনে পেয়ে রাহাত ভাই তো হইহই করে উঠলেন

–আরেকটু হলেই তো রিটন তুমি আমার চাকরিটা খেয়ে দিয়েছিলে।

–কিভাবে রাহাত ভাই?

–তুমি যে ছড়াটা পাঠিয়েছো ওটা তো আমাদের আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সাহেবের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। তিনিও তো মন্ত্রী ছিলেন! আর তাঁরও একটি কন্যা! এবার বোঝো। হাহ হাহ হাহ কানের পাশ দিয়ে গুলিটা গেছে এই যাত্রায়…

টেলিফোনের এই প্রান্তে হাসতে থাকি আমি। আরেক প্রান্তে হাসতে থাকেন রাহাত ভাইও।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent