রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

ওমিক্রন আতঙ্ক!

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নাগরিকদের কোভিড পরিস্থিতি ধৈর্য সহকারে মোকাবিলা করার পরামর্শ দিয়েছেন

করোনা মহামারীটা এমন, যখনই ভাবছি এই বুঝি এর থেকে মুক্তি পেয়ে যাচ্ছি ঠিক তখনই নতুন একটা ভ্যারিয়েন্ট এসে আবার নতুন করে আমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে। সব সেট-আপ লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে।
কিছু দিন আগেও অন্টারিওতে নতুন সংক্রমণ এত নিচে নেমে গিয়েছিল যে, অনেকটাই সুস্থ অনুভব করছিলাম, মনে হচ্ছিল, অল্প কিছুদিন পরেই আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবো।
সেই সময় অন্টারিওতে নতুন সংক্রমণ ছিল মাত্র ৩০০। আর আজ সংক্রমণ ১১০০০ জন। এই সংখ্যা রিপোর্টেড। রিপোর্টেড ব্যাতিত এই সংখ্যা দ্বিগুণ তিনগুনও হতে পারে।
ওমিক্রন ফিউশনের গতিতে বেড়ে চলেছে। একেবারেই অপ্রতিরোধ্য!!হাসপাতালগুলি করোনা রোগী সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে। অনেক ডাক্তার, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ছুটি নিয়েছে অথবা নিজদেরকে আইসোলেট করে ফেলেছে। হাসপাতালগুলিতে স্টাফ সংকট তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। এমনকি টিটিসি থেকে আরম্ভ করে প্রয়োজনীয় সার্ভিস গুলিতে তীব্র স্টাফ সংকট দেখা দিচ্ছে। হাসপাতালগুলি সেবার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছে। কারটা বেশি জরুরী আর কারটা নয়। এ এক অবর্ননীয় ভয়াবহ অবস্থা!!
ব্যবসাগুলি কিছু দিন থেকেই একটা মুক্ত আবহ অনুভব করছিল। আর্থিক ক্ষতি থেকে বাঁচার আলো দেখছিল। ডাইনিং খোলা ছিল, প্যাটিও খোলা ছিল,জিম খোলা ছিল। লিমিট শিথিল ছিল। তারা দীর্ঘ দিনের ক্ষতি থেকে ধিরে ধিরে বেরিয়ে এসে একটা আশার আলো দেখছিল।
কিন্তু হঠাৎ করেই ভোজবাজির মত সব উবে গেলো। যেখানে অর্থনীতি ফিরছিল সেখানে আবার স্থবিরতা নেমে আসছে।
স্কুলগুলি ইন পার্সন থেকে অনলাইনে ট্রান্সফম করেছে। ছাত্রছাত্রীরা আবার গৃহবন্দী। দেশে দেশে ফ্লাইট ক্যাসেন হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিন নিত্যনতুন নিয়ম জারি হচ্ছে। এয়ারপোর্টগুলিতে যাত্রীদের দীর্ঘ দুর্ভোগ।
ভাবা হচ্ছিল, অন্টারিওর জনসংখ্যার ৯০% পুরোপুরি ভ্যাক্সিনেটেড হবার পর ২০২২ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ সব কিছু খুলে দেওয়া হবে। আমরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবো। আবার সব কিছু চাংগা হয়ে উঠবে।
কিন্তু সেই আশায় গুড়ে বালি!!
ভ্যাক্সিন যে নিশ্চয়তা দিচ্ছে, তা হলো, পুরোপুরি ভ্যাক্সিন নেওয়া থাকলে করোনা হলেও বেচে থাকা সম্ভব, মারাত্নক কিছু হবে না।
ভ্যাক্সিন করোনাকে প্রতিরোধ করতে পারে না কিন্তু অনেকটাই বাচিয়ে রাখার সুরক্ষা দেয়। হাসপাতালে বেশি ভাগ করোনা রোগী ভর্তি হচ্ছে যারা একেবারেই ভ্যাক্সিনেটেড নয় অথবা যাদের ভ্যাক্সিন স্ট্যাটাস অজ্ঞাত।
পুরোপুরি ভ্যাক্সিনেটেডরা কম হলেও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। হয়ত তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত দুর্বল।
সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে কেন? কারন, হাসপাতালগুলির উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে সব কিছু চলে যাচ্ছে। অনেক নন-এসেনসিয়াল সার্জারী বাতিল করতে হয়েছে। জরুরী জীবন রক্ষাকারী সার্জারীগুলিই শুধু করা হচ্ছে।
সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত হলে যাদের দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তারাও আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। তাদেরকে বাচানো সরকারের কর্তব্য এবং দায়িত্ব। এইজন্যই নিয়ন্ত্রনের প্রশ্ন আসে।
তবে যেটা উপলদ্ধি করা যায়, তা হলো,এই মহামারী থেকে সহজে মুক্তি নেই। অনেকেই ভাবছে এটাই হয়ত শেষ। অনেকে ভবিষ্যত বানীও করেছেন।
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, যেদিন শতভাগ নিশ্চিত হবো করোনা আর নেই, সেইদিনই শুধু ভাবা যাবে, আমরা মুক্ত। আমরা স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছি। এর আগে নয়।

স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent