রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

পেশা থেকে নেশা

টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসি

বিশ্বমানের তাঁরকাদের সাক্ষাৎকার নেবার ঘটনা আমার তেমন একটা ঘটেনি। কারণ যে সময় আমি দেশে সাংবাদিকতা করেছি, সে সময় ক্রীড়া সাংবাদিকদের বিদেশ গিয়ে আন্তর্জাতিক ইভেন্ট কভার করার সুযোগ ছিলো না বললেই চলে। যদিও আজ সে দরজা খুলে গেছে সময়ের বিবর্তনে। মন্ট্রিয়ল আসার পর প্রথম বাংলাদেশী সাংবাদিক হিসেবে দ্যু মুরিয়ার কানাডা ওপেন টেনিস কভার করার সুযোগ হয়েছিলো আমার। আর সে সুযোগের বাড়তি পাওনা ছিলো এক সময়ের বিশ্বসেরা টেনিস তাঁরকা আন্দ্রে আগাসীর একান্ত এক সাক্ষাতকার গ্রহণ। সাক্ষাৎকারটি ১৯৯৫ সালের ৪ আগস্ট তারিখে দেশের জাতীয় দৈনিক বাংলার বাণীর শেষ পাতায় বক্স আকারে ছাপা হয়েছিলো। সাক্ষাৎকারটি একটু ভিন্নধর্মী হওয়ায় হুবহু তুলে ধরা হলো এখানে-
টেনিস বিশ্বের সুপার সেনসেশন আন্দ্রে আগাসী বলেছেন, বন্যা, খরা আর মহামারীর অভিশাপে অভিশপ্ত বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর যৎসামান্য হলেও ধারণা রয়েছে। কানাডার মন্ট্রিয়ল শহরে অনুষ্ঠিত দ্যু মুরিয়ার কানাডা ওপেন শিরোপা জয়ের পর গত বুধবার বাংলার বাণী প্রতিনিধিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিশ্ব টেনিসের এই এক নম্বর তাঁরকা বলেন, আজ থেকে প্রায় এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বাঙালী তরুণীর সাথে বন্ধুত্বের পথ ধরেই তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে খানিকটা হলেও জেনেছেন।
হোটেল শেরাটনের সুইমিং পুলে আগাসীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী, গার্লফ্রেন্ড হলিউড কাঁপানো অভিনেত্রী ও মডেল ব্র“কশীল্ডের উপস্থিতিতে বিশ্বের এই সেরা টেনিস তাঁরকা বাংলাদেশ সম্পর্কে তাঁর ধারণা জানাতে গিয়ে বলেন, গত বছর ওয়াশিংটন ডিসি হার্ডকোর্টে টেনিস টুর্ণামেন্ট চলাকালীন ২৪ বছর বয়সী ফারিয়া নামের বাংলাদেশী এক তরুণীর সাথে সাক্ষাত ঘটে। আগাসীর ভাষায়: অটোগ্রাফ শিকারীদের অন্যতম ফারিয়ার ব্রাউন কালার ও নীল চোখের আঁধারে আমি এতোই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, এক সপ্তাহের মধ্যেই দুজনার মাঝে গড়ে উঠেছিলো চমৎকার এক বন্ধুত্ব। বন্ধুত্বের সুবাদেই আগাসীর মনে জন্ম নিয়েছিলো বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানা। জেনেছেনও কিছুটা। বললেন, ‘পাকিস্তানের সাবেক পূর্ব অঞ্চল এখন স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। বন্যা, খরা আর মহামারীর প্রাকৃতিক অভিশাপ স্বাধীন বাংলাদেশকে আজ বিশ্বের অন্যতম সেরা দরিদ্র দেশে পরিণত করেছে।’ একটু থেমে আগাসী আবার শুরু করলেন, ‘বাংলাদেশী মেয়েরা সুন্দরী তবে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল। ফারিয়া টেনিস বোঝে না, বোঝে না-এর মহত্ব। এমনকি একজন টেনিস খেলোয়াড়ের ক্ষুধা। তাই বন্ধুত্বের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র চার মাস।’ আগাসীর কথা শেষ হতে না হতেই আলাপের টেবিলে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন, হলিউডের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী ব্র“কশীল্ড। গলার স্বরে খানিকটা ভারিক্কিপনা, কিছুটা অহমবোধ। বললেন, ‘টেনিস ইজ মাই লাইফ, আগাসী ইজ মাই হার্ট।’ তাই টেনিস ছাড়া এ মুহূর্তে অন্য কোন আলাপ আমার পছন্দ নয়। বললাম, আপনি তো চিত্র জগতের বাসিন্দা। খেলার জগতে কিভাবে জড়ালেন? এবার ভ্র“ কুঁচকে খানিকটা রাগতস্বরে ব্র“কশীল্ড বললেন, আমার সম্পর্কে আপনি সম্ভবত: একদমই অন্ধকারে আছেন, তাই যার ইন্টারভিউ করতে এসেছেন, তারই করেন।
প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে আগাসীকে জিজ্ঞেস করলাম, টানা তিনবারের উইম্বলডন বিজয়ীকে হারাবার প্রতিক্রিয়া কি? বললেন, মন্ট্রিয়লে পা রেখেই আমার মনে হয়েছিলো গতবারের অর্জিত শিরোপা এবারো অক্ষুণœ থাকবে। গ্রাসকোর্টে পিট সাম্প্রাস যতোই হট ফেভারিট হোক না কেনো হার্ডকোর্ট আমার, আর কানাডা আমার জন্য সব সময়ই ‘লাকি ওয়ান।’ কথা দিয়ে কথা রাখতে পেরেছি আমার ভক্ত আর অনুরাগীদের মাঝে। তাই এ মুহূর্তে অনাবিল এক সুখ আমাকে যেনো পেয়ে বসেছে।
আলাপের এক পর্যায়ে এসে বিশ্বনন্দিত এই টেনিস তাঁরকার প্রাইভেট সেক্রেটারী বব জন এসে জানালেন, মন্ট্রিয়লের ‘লা পেরেজ’ দৈনিকের সাংবাদিক অপেক্ষা করছেন কথা বলার জন্য। বুঝলাম আমার সময় ঘনিয়ে এসেছে। বিদায় নিতে হবে এখনই। অত্যন্ত জেদী ও একগুঁয়ে স্বভাবের আগাসী কিন্তু চলনে-বলনে আর কথাবার্তায় ভীষণ রকম প্রাণবন্ত। বললেন, ‘গুছিয়ে কথা বলার অভ্যাসটা এখনো রপ্ত করতে পারিনি। তাই যা লিখবেন গুছিয়ে লিখবেন। আর বাংলাদেশী ভক্তদের মাঝে পৌঁছে দিবেন আমার শুভেচ্ছা।

মন্ট্রিয়ল, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent