রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

বিপর্যস্ত অনুভব

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম এমএ পাস করে বেরুল হারুন সামিয়া যুদ্ধ সময় যেন জড়িয়ে বেঁধে দিয়েছে ওদের এক বন্ধনে দুজনে দুজনার প্রতি টান অনুভব করে ভালোবাসার একত্রে পথ চলার

যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম এমএ পাস করে বেরুল হারুন, সামিয়া। যুদ্ধ সময় যেন জড়িয়ে বেঁধে দিয়েছে ওদের এক বন্ধনে। দুজনে দুজনার প্রতি টান অনুভব করে ভালোবাসার, একত্রে পথ চলার। তাই ওরা জীবনযুদ্ধে একসাথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিয়ে করে সংসার জীবনে জড়ায় দুজনে। একই সময়ের নাগপাশ দিয়ে যাওয়া সমমনা দুজন মানুষ সংসার জীবনের পাশাপাশি, এত রক্তের বিনিময়ে পাওয়া দেশের নানা দুরবস্থায় বারবার কাতর হয়। সব দুর্নীতি অব্যবস্থার বিরুদ্ধে আবার একটা যুদ্ধের কথা ভাবে।
দুজনের পারস্পরিক সুন্দর বন্ধনের মধ্যেও সেই যুদ্ধ স্মৃতির ভয়াবহতা প্রচণ্ড রকম প্রভাব ফেলেছিল। ভালো চাকরি করছে দুজন, সচ্ছল অবস্থা, হাসিখুশি আনন্দময় জীবনযাপন। অথচ বিয়ের কয়েক বছর পরও সামিয়া বাচ্চা নিতে চাইতো না। হারুন বাচ্চা চায়, সামিয়াও বাচ্চা চায় কিন্তু সামিয়ার মনে আতংক ওর বাচ্চা হারিয়ে যাবে। সে বাচ্চা রাখতে সমর্থ না। ভয়ানক ব্যর্থ এক মা সামিয়া। আতংকে অস্থির প্রায় পাগলিনী হয়ে উঠত সামিয়া এই একটা বিষয়ে। বারবার মনে হতো বাবুয়ার হারিয়ে যাওয়া। বুক খালি হয়ে যাওয়া সে কষ্ট নিজের বাচ্চা নেয়ার সাহস সঞ্চয় করতে পারত না কিছুতেই। হারুন যতই বোঝায় দুঃসময়ের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে, সামিয়া কিছুতেই দায়ী না কিন্তু সামিয়া নিজেকেই দায়ী করতে থাকত।
এই বিষয় অনেক তিক্ততা তৈরি করেছে দাম্পত্য জীবনে। মাঝে মাঝে হাসিখুশি শান্ত হারুনের মনও বিদ্রোহ করেছে। আবার ভালোবাসা মায়ায়, মনস্তাত্ত্বিক সহায়তায়, চিকিৎসায় সাহস সহযোগিতা যুগিয়েছে সামিয়ার মনে।
বিয়ের প্রায় আট নয় বছর পর ছেলের জন্ম হলে সে ছেলের কিশোর হয়ে না উঠা পর্যন্ত ছেলে হারিয়ে যাওয়ার ভয় কাটাতে পারেনি সামিয়া। সেই অনেক প্রতীক্ষা, অনেক ভয়ের, আদরের ধন ছেলে তিতাস এখন ছাব্বিশ বছরের যুবক।
এক ছেলে তিতাসকে নিয়ে ওরা ভালো আছে। কাজের পাশাপাশি সামিয়া লেখালেখির সাথে জড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ বিষয়ক স্মৃতিকথা বলার জন্য টেলিভিশনে ওকে প্রায় যেতে হয়। বিশেষ করে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে। আর টেলিভিশনের চ্যানেলের মালিক আবেদিন আহমেদ কোনো কথা শুনবেন না। সামিয়াকে মাসে একটা হলেও তার চ্যানেলের অনুষ্ঠান করতেই হবে। হারুন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মুক্তিযোদ্ধা আর রাজাকারের লিস্ট করার কাজ করে যাচ্ছে আপন মনে। অনেক বছর পার হয়ে গেছে এই কাজগুলো দেশের সরকার আজো সঠিকভাবে করতে পারল না।
রাজাকারের দল ভিতরে ভিতরে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের সঠিক ইতিহাস ভুল পথেই বারবার পরিচালিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ মেরে ফেলছে নানাভাবে। হারুন সামিয়াদের মতন মানুষ আতংকগ্রস্ত সঠিক ইতিহাস হারিয়ে যাবার ব্যাপারে। তাই তারা নিজেদের মতন কাজ করে যায়। পরবর্তী প্রজন্মকে বলে দিতে চায় সঠিক ইতিহাস।
তিতাস, ইকনমিক্সে পাস করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ভালো একটা কোম্পানিতে কাজ করে কিন্তু পাশাপাশি সাংবাদিকতার ঝোঁক ওর। প্রায়ই সে বের হয়ে যায় নতুন কোনো সংবাদ লেখার জন্য। ঘুরে বেড়ায় নানান জায়গায়। মা বাবা নিজেরাই ভালোবাসেন এ জীবন। তাই ছেলেকেও উৎসাহিত করেন, মানুষের খবর খুঁজে আনতে।
ছুটি-ছাটায় তিতাস চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। কথা বলে গল্প করে মানুষের সাথে। শোনে মানুষের নানা বিচিত্র কাহিনী। তবে একটু বয়স্ক মানুষ হলে সে জানতে চায় যুদ্ধের সময়ে সে কত বড় ছিল, কি ছিল তার যুদ্ধ ভূমিকা। ওর ইচ্ছা অনেকের জীবন থেকে নেয়া কাহিনী দিয়ে বই বের করবে সে একটা। তবে মাঝে মধ্যে পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায় লেখা দেয় ওর সংগ্রহ থেকে। বন্ধু, পরিচিত জনের প্রশংসাও পায় সেসব লেখার জন্য।

টরন্টো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent