রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

বিটিভির হাবীব আহসান

হাবীব আহসানের সঙ্গে লেখক

আহসান হাবীব। ডাক নাম কোহিনুর। বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী অনন্য এক মানুষ। বিটিভি পর্দায় অনুষ্ঠান শেষে প্রযোজক হিশেবে টেলপে তাঁর নামটি প্রদর্শিত হতো হাবীব আহসান নামে। চট্টগ্রাম গ্রুপ থিয়েটারে সক্রিয় ছিলেন নাট্যকার এবং নির্দেশক হিশেবে। কবিতা লিখতেন। গল্প লিখতেন। ছবি আঁকতেন। স্বাধীনতার পর চট্টগ্রামের মেধার দীপ্তিতে উজ্জ্বল একদল ক্ষ্যাপা তরুণ কবি-লেখক-আঁকিয়েদের প্লাটফর্ম ‘স্পার্ক জেনারেশন’এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। বেহালা বাজাতেন। বাজাতেন গীটারও। বাংলাদেশ টেলিভিশনে নাটকসহ নানান অনুষ্ঠান প্রযোজনা করতেন। স্বৈর শাসক এরশাদের পতনের পর আমার গ্রন্থনা ও উপস্থাপনায় প্রচারিত ‘সৌরভে গৌরবে’র অন্যতম প্রযোজক ছিলেন তিনি। মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মুক্তধারা নামের সেমিনার ধর্মী অনুষ্ঠানটিও ছিলো তাঁর প্রযোজিত। অভিনয় করতেন। বিটিভির বহু নাটক ছাড়াও অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। অসাধারণ আর্টিস্টিক ছিলো তাঁর হস্তাক্ষর। নিজের প্রযোজিত অনুষ্ঠানের টেলপ তিনি নিজেই লিখতেন।

তিনি ছিলেন আমার হাবীব ভাই। খুব ভালোবাসতেন আমাকে। আমাদের সম্পর্কটা বিটিভির গন্ডি পেরিয়ে ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রেও তিনি আসতেন নিয়মিত। আমাদের কেন্দ্র কেন্দ্রিক সমস্ত আড্ডা আনন্দ-আয়োজনে তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি নতুন ব্যাঞ্জনা সৃষ্টি করতো। আমি ছাড়াও মাযহার আমীরুল বকুল সারোয়ার সবুজ চয়ন লিলি এবং সায়ীদ স্যারের সঙ্গেও তাঁর ছিলো দারুণ সখ্য। কেন্দ্রে আমাদের জুনিয়র বন্ধুদের সঙ্গেও ভাব ছিলো তাঁর সমানতালে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে পহেলা বৈশাখে আমাদের একটা র‍্যালি নিয়ে আমরা গিয়েছি শাহবাগ হয়ে চারুকলায়। র‍্যালিতে চয়ন ইসলামের পরিকল্পনায় বানানো গেরুয়া-লাল জোড়াতালি দেয়া পাঞ্জাবি পরা আমাদের সঙ্গে শামিল ছিলেন হাবীব ভাইও। তিনিও পরেছিলেন সেই পাঞ্জাবি।

- Advertisement -

বিটিভি ভবনে কতো যে আড্ডা দিয়েছি তাঁর সঙ্গে! একটা বিশাল কক্ষে অনেকটা ইউ প্যাটার্নে থাকা ছয়টা টেবিলে ফরিদুর রহমান, মোহাম্মদ আবু তাহের, আলী ইমাম, খ ম হারুণ, ম হামিদ এবং হাবীব আহসান বসতেন। বিকেলে অফিস ছুটির পর কক্ষের সবাই বাড়ি চলে গেলেও হাবীব আহসান যেতেন না প্রায়ই। একদিন আমি ঠেঁসে ধরলাম–ভাইজান বাড়ি যাইবেন না?

তিনি হাসলেন। না। একটু বেহালা আইমিন ভায়োলিন প্র্যাকটিস করুম। জরুরি কাম না থাকলে বহো।

আমি খুব হালকা চালে টাইম পাস টাইপ মুডে বসলাম তাঁর টেবিলের বিপরীতে। তিনি বাজানো শুরু করলে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেলাম! আরে হাবীব ভাই আপ্নে তো মিয়া জিনিস একটা! এতো কিছু পারেন ক্যাম্নে!

বিচিত্র বিষয়ে তাঁর বিপুল আগ্রহের কারণে আমি তাঁকে আলাদা সমীহের চোখে দেখতাম। টিভি ভবনে তাঁর সহকর্মীরা আড়ালে আবডালে তাঁকে নিয়ে রঙ্গ করতো। সেটা জানতেন হাবীব ভাই। কিন্তু পাত্তা দিতেন না।

আমার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটায় অনেক রঙ্গ রসের উপাদানে ভরপুর ছিলো। এক দুপুরে টিভি ভবনে আমাকে দেখেই বললেন–অই মিয়া তোমার একটা কালার প্রোফাইল ছবি দেও তো।

–আমার ছবি দিয়া কী করবেন?

–আরে কাম আছে। কাইলকা অবশ্যই লইয়া আইবা।

পরদিন তাঁকে একটা ছবি দিলাম। তিনি সেটা যত্ন করে ডায়রীর ভেতরে রাখলেন। কিন্তু ছবি দিয়ে কী করবেন সেটা বললেন না।

আমিও ভুলে গেলাম ছবি প্রসঙ্গ।

এর মধ্যে ঘটলো কাণ্ড। পথে ঘাটে লোকজন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আমার দিকে। নিউমার্কেটে ভিড়ের মধ্যে মেয়েদের গ্রুপ আমাকে দেখে হাসে, খামোখাই। একটা মেয়েকে বললাম–কাহিনি কি?

আমাকে দেখে হাসছেন কেনো আপনারা? মেয়েটা বললো

–আপনাকে তো নাটকে দেখলাম।

–আমাকে?নাটকে? নো। আমি তো অভিনয় করি না।

–আপনি অভিনয় করেন না সেটাই তো জানতাম। কিন্তু পরশু নাটকে তো আপনার ছবি দেখলাম!

–আমার ছবি?

–হ্যাঁ। মেয়েটার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসা লোকটা পাত্র হিশেবে তো আপনার একটা ছবিই দেখালো একেবারে ক্লোজ করে!

আমি হেসে ফেললাম–ভাই রে ওটা প্রযোজক আমাকে ডোবানোর জন্যে করেছেন। আমি জানতাম না সত্যি।

মেয়েগুলো হাসতে হাসতে চলে গেলো।

ভীষণ করিৎকর্মা ছিলেন হাবীব ভাই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (লোকপ্রশাসন বিভাগ) একজন স্মার্ট শিক্ষক ছিলেন আহসানুল হাবীব নামের এক লেখক-উপস্থাপক। তিনি উপস্থাপনা করতেন উন্নয়ন মূলক অনুষ্ঠান। একটা হোন্ডা চালাতেন। টিএসসির মোড়ে এক বিকেলে হোন্ডা এক্সিডেন্টে তিনি মারা গেলেন। রাতে শিক্ষকদের আবাসিক কলোনীর বাসভবনে গিয়েছি তাঁকে শেষ বিদায় জানাতে। কারণ ময়না তদন্তের পর তাঁর লাশটি এখানে আনা হবে। তারপর তাঁর লাশ বহনকারী ট্রাকটা রওনা দেবে গ্রামের উদ্দেশ্যে। আমার আর আলী ইমামের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা মধুর ছিলো। রাত নটার দিকে আহসানুল হাবীবের মৃতদেহটিকে নিয়ে আসা হলো। আমরা সবাই (বিটিভির কয়েকজন প্রযোজকসহ তাঁর সহকর্মীরা) যখন শোকার্ত এবং বেদনার্ত চোখে আহসানুল হাবীবের সেলাই করা বুক এবং নাকে তুলো গোঁজা মুখটা দেখছি, বিটিভির করিৎকর্মা প্রযোজক হাবীব আহসান তখন ফোন করছেন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধতন কোনো কর্মকর্তাকে কারণ শেষ ফেরীটাকে আটকাতে হবে। নইলে সারা রাত আহসানুল হাবীবের লাশটি পড়ে থাকবে ফেরীঘাটেই। তিন চার জায়গায় হুলুস্থুল ফোনের পর ফোন করে আরিচা ঘাটের শেষ ফেরীটাকে লেখক-উপস্থাপক আহসানুল হাবীবের লাশবাহী ট্রাকটি না পৌঁছানো পর্যন্ত অপেক্ষার বিষয়টি ফাইনাল করে তবেই থামলেন হাবীব ভাই।

অত্যন্ত জরুরি এই বিষয়টা আর কারো খেয়ালই ছিলো না।

১৯৮৮/৮৯ সালে বিটিভিতে আমার রচনা ও পরিচালনায় প্রচার শুরু হয়েছিলো ছোটদের সিরিজ নাটক ‘হইচই’। বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গল্প-উপন্যাসের নাট্যরূপ দিতাম আমি। এই সিরিজের প্রথম নাটকটি ছিলো মোহাম্মদ নাসির আলীর ‘লেবু মামার সপ্তকাণ্ড’ বইয়ের গল্প অবলম্বনে রচিত ‘কুকুর নিয়ে কারবার’। নাটকটিতে কিশোর নায়ক চরিত্রের ছেলেটাকে(অঞ্জন)  ধোঁকা দেয়া ফ্রড একজন মানুষের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হাবীব আহসান। রিহার্সাল ইত্যাদির পর রেকর্ডিং-এর আগের দিন হাবীব ভাই বললেন–রিটন তুমি যে স্ক্রিপ্টে লিখসো চক্রাবক্রা লুঙ্গি পড়ুম আমি তো এই চক্রাবক্রা লুঙ্গি তো আমার নাই। অহন কী করি? যে কোনো লুঙ্গি দিয়া চালাইয়া দেই?

আমি বললাম, না। ঢাকাইয়া চরিত্রের ফ্রড চরিত্রটার চক্রাবক্রা লুঙ্গিই লাগবে। অসুবিধা নাই লুঙ্গি আমি নিয়া আসুম আপ্নে কাইল শুটিং-এর আগে পাইয়া যাইবেন।

আগের সপ্তাহে আমি কোলকাতা থেকে বাটিক প্রিন্টের কয়েকটা লুঙ্গি কিনে এনেছিলাম, পরবো বলে। সবচে উজ্জ্বল এবং বর্ণাঢ্য লুঙ্গিটা আমি নিয়ে গেলাম আউটডোর লোকেশন রমনা পার্কে। এক্সট্রা গোঁপ জরুল ইত্যাদির মেক আপ টিভি থেকেই করে এসেছিলেন হাবীব ভাই। আর্টিস্ট এবং ক্যামেরা ও টেকনিশিয়ানদের বহনকারী টিভির মিনিবাসের ভেতরে বসেই লুঙ্গিটা পরলেন তিনি। বিকেলের চকচকে রোদে চক্রাবক্রা লুঙ্গিটা রীতিমতো ঝলমল করছিলো। গাড়ি থেকে নেমে তিনি উচ্ছ্বসিত–ডিরেক্টর ছাব লুঙ্গিটা মানাইছে নিহি?

আমি বললাম, হেব্বি।

শুটিং শুরু হলো। কিশোর নায়ক অঞ্জনকে বোকা বানিয়ে অঞ্জনের কাছে তিনি বিদেশী কুকুর ছানা পরিচয়ে একটা ছাগল ছানা বিক্রি করলেন।

শুটিং শেষ। কিন্তু হাবীব আহসান আমার লুঙ্গিটা খুলতে চান না। বললেন–আমার একটিং কেমুন হইলো? আমি বললাম, ফাস্কেলাস। এলায় লুঙ্গি খোলেন।

তিনি বললেন–এইটা পইরাই বাড়িত যাই। কাইলকা ফেরত পাইবা।

কিন্তু সেই কাইলকা আর আসে না। আমি জিজ্ঞেস করি, কী হইলো? আমার লুঙ্গি কই?

হাবীব ভাই বিগলিত হাসিতে মাথা নাড়েন–তোমার লুঙ্গিটা আমার পছন হইছে। ফেরত পাইবা না।

আমি বললাম, আমি কইলাম আপ্নের নামে নালিশ করুম জিএমের কাছে।

তিনি বললেন, যা খুশি করো গা। এমন সুন্দর লুঙ্গি ফেরত দেয় কুন হালায় হাহ হাহ হাহ…

এরপর সময় গড়িয়েছে।

আমরা ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হয়েছি।

এলিফ্যান্ট রোডে আমার বাড়িতে পার্টি। রাতে বিপুল খানাখাদ্যের আয়োজন। মাযহার-আমীরুলরাও আছে। আর আছে হাবীব ভাই। খাওয়া-দাওয়ার আইটেম পছন্দ হওয়ায় মাত্রার অতিরিক্ত ভোজন হয়ে গেলো হাবীব ভাইয়ের। এক পর্যায়ে আমাকে বললেন–ভাইডি হাঁসফাঁস লাগতাছে। বেশি খাইয়া ফালাইছি।

দেখলাম ঘামছেন রীতি মতো।

বললেন–একটু শুইতে হইবো।

তাঁকে আমাদের মাস্টার বেডে নিয়ে গিয়ে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে দিলাম। এক্সট্রা আরেকটা স্ট্যান্ড-ফ্যানও তাঁর দিকে ফিট করা হলো। তারপর আমি টাওয়েল ভিজিয়ে তাঁর ঘাড় কপাল মুছে দিচ্ছি। শার্লি দুশ্চিন্তায় অস্থির। আমার অক্লান্ত সেবা শুশ্রুষায় এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লেন হাবীব ভাই।

আমার বাকি অতিথিরা এক সময় চলে গেলেন। আমি তাদের বললাম, হাবীব ভাই এখানেই ঘুমিয়ে থাকুক। সকালে আমি তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসবো। সবাই চলে গেছেন। এই ফাঁকে আমি হাবীব ভাইয়ের বাড়িতে ফোন করে ভাবীকে আশ্বস্ত করলাম–ভাবী, অতিরিক্ত ভোজন ক্লান্তিতে হাবীব ভাই এখন আমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। চিন্তা করবেন না। আজ রাতে তিনি ফিরবেন না। ভাবী মেনে নিলেন।

কিন্তু রাত দেড়টার পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি তখনো তাঁর শিয়রের পাশে। তিনি বললেন–ওরা সব গেলো কই!

আমি বললাম, মিয়া রাইত বাজে দেড়টা। অরা গ্যাছে গা। আপ্নে ঘুমান।

তিনি বললেন, নাহ্‌। এহন আমি ঠিক আছি। বাড়ি যাইতে হইবো।

আমি বললা, ভাবীকে অনেক আগেই ফোনে জানিয়ে দিয়েছি। বলেছি আজকে এখানেই থাকবেন আপনি। তিনি মেনেও নিয়েছেন।

কিন্তু হাবীব ভাই মাথা নাড়ান–মেয়েটা আমার চিন্তায় ঘুমাবে না।

তুমি আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো।

অতঃপর একটা স্কুটার যোগাড় করে রাত দুইটা আড়াইটায় হাবীব ভাইয়ের বেইলি রোডের বাড়িতে তাঁকে পৌঁছে দিয়ে তিনটায় বাড়িতে ফিরলাম।

খেতে খুবই ভালোবাসতেন হাবীব ভাই।

এ বছর বইমেলায় এক সন্ধ্যায় তিনি হাজির হয়েছিলেন ঝিঙেফুলের স্টলে, আমাকে সামনা সামনি দেখবেন বলে। অনেকদিন দেখা হচ্ছিলো না আমাদের। আগেই বলে রেখেছিলেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি আসবেন বলেছিলেন। বলেছিলেন, রিটন তুমি আমার ‘গান-বাজনার সমঝদারি’ বইটা চেয়েছিলে। ওটার একটা কপিও নেই প্রকাশকের কাছে। তুমি গান ভালোবাসো তাই তোমার জন্যে একটা বই আমি ফটোকপি করিয়েছি। তারপর বাইন্ডিংও করিয়েছি। বইটা নিজের হাতে দেবো তোমাকে। তুমি থেকো কিন্তু। আমি না আসা পর্যন্ত যেও না। কিন্তু সেদিন তিনি আসতে পারেন নি। ফোন করে বললেন অন্য কোনো দিন আসবেন।

২৯ ফেব্রুয়ারি মেলার সমাপ্তিদিনে সন্ধ্যায় তিনি এসেছিলেন।  লাঠিতে ভর দিয়ে। মুখে কাঁচাপাকা দাঁড়ি। মাথায় কাপড়ের একটা হ্যাট। আহা আমার দেখা দীর্ঘদেহী পরিপাটি পোশাক-আশাক চাল চলনে স্মার্ট হাবীব আহসানের একী বিধ্বস্ত অবস্থা! বুকটা আমার ভেঙে গেলো তাঁকে দেখে। পরম যত্নে তিনি আমাকে লিখে দিলেন বইটা। (শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে তাঁর জ্ঞান ছিলো অপরিমেয়।)  তারপর বললেন–তোমার বই দিবা না?

দিমু না মানে অবশ্যই দিমু। আমি আমার নতুন ছড়ার বইটা (ছোটদের ছোট ছোট ছড়া) তাঁকে দেবো বলে প্রচ্ছদ উলটে কিছু লিখতে গেছি। তিনি থামিয়ে দিলেন আমাকে। বললেন, আমাকে না। আমার আম্মাকে লিখে দাও।

আমি খুশি হয়ে উঠলাম–খালাম্মাকে?

হাবীব ভাই হাসলেন–হ।

খালাম্মাকে নিয়ে বিশেষ একটা গল্প বলেছিলেন হাবীব ভাই,আমাকে।

খালাম্মা খুবই বোল্ড একজন মহিলা। রূপসী। পড়ুয়া। হাস্যোজ্জ্বল আর সাহসী।

একদিন, বাড়িতে সিনিয়র কেউ নেই। হাবীব ভাইকে খালাম্মা কিছু টাকা দিয়ে বললেন, যাও তো বাবু, দোকান থেকে একটা ডেটল, এক প্যাকেট ব্লেড আর বেশকিছু তুলো নিয়ে আসো তো তাড়াতাড়ি। দোকানে যাবার আগে দাইমা খালাকে গিয়ে বলো  এক্ষুণি  আসতে। আমাদের একটা ছোট্ট বাবু আসবে। তোমার একটা ভাই হবে আজকে।

হাবীব ভাই এক দৌড়ে দাইমা খালা নামে পরিচিত মহিলাকে খবর দিয়ে দোকান থেকে ব্লেড তুলো আর ডেটল কিনে নিয়ে এলেন। হাবীব ভাইয়ের একটা ছোট ভাই হলো।

সেই দুর্দান্ত সাহসী আর বোল্ড খালাম্মাকে লিখে দিলাম আমার লাল মলাটের বইটা। (পরদিন খালাম্মার জন্মদিন ছিলো বোধ হয়)। খালাম্মাকে লিখে দেয়ায় একজন শিশুর মতো আনন্দিত হয়ে উঠলেন হাবীব ভাই। আমার সঙ্গে কয়েকটা ছবিও তুললেন।

দু’দিন আগে জন্মদিন ছিলো হাবীব ভাইয়ের। ফেসবুকে তাঁকে আমি উইশ করেছিলাম–জন্মদিনের শুভেচ্ছা ভাইডি! কিন্তু সেখানে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। ভেবেছিলাম চোখে পড়েনি হয়তো। তখনো জানতাম না তিনি অসুস্থ। দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছিলেন বলে দুদিন আগে একটা দাঁত ফেলতে হয়েছিলো। পেইন কিলার খাচ্ছিলেন ব্যথা উপশমে।

নিয়মিত কথা হতো তাঁর সঙ্গে, মেসেঞ্জারে। এই ক’দিন আগেও হয়েছে। আমার ফেসবুক পোস্টগুলোয় তাঁর কমেন্ট থাকতোই থাকতো। হোক সেটা গদ্য বা পদ্য। ফেসবুকে আমার আর কোনো লেখা তিনি পড়বেন না। আর কোনো লেখায় তিনি মন্তব্য করবেন না। কারণ কয়েক ঘন্টা আগে তিনি চলে গেছেন অনন্তের পথে।

বিদায় হাবীব ভাই।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent