রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

অনাবাসী জীবনের কড়চা


১.
আমি মোটেও শক্ত মানুষ নই।কাটাকাটি, রক্তপাত ভীষন ভয় পাই। কিন্তু নানান সময়ে সামান্য খোঁচাখাচিতে, কাঁটাছেড়ায় রক্তপাতে খুবই নার্ভাস হয়ে পড়ি। গতকাল দুপুরে মেজাজ হারিয়ে ( কেন, সেটা উহ্য রইলো) অনাবধানতাবশতঃ হাত ফস্কে বা’হাতে ধারালো চাকু পড়ে কেটেছে। অবিরাম রক্তঝরায় বেশী নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম। কেটে যাওয়া স্থানে টেড দ্রুত স্প্রে করে দিতেই রক্তপাত বন্ধ হয়। ঈদের পূর্বে এরকম বিশ্রী ভীতিজনক ঘটনায় দু’দিন যাবত মন খারাপ হয়ে আছে।
তবুও সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মোবারক
২.
সামারের জন্য আটটি মাস তীর্থের কাকের মতন পথ চেয়ে ছিলাম। এপ্রিল হতে অপেক্ষায় ছিলাম, কখন সামার আসবে। প্রচন্ড ঠান্ডায় নাস্তানাবুদ হয়ে মনে মনে শীতকে গালিগালাজ করেছি, কেন তুই যাস নে?
অনেক তো রইলি, এবার বিদায় হও বাপ!
মে মাসের প্রথম দিনে কাংখিত সামার শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘ আট মাসের মাইনাস তাপমাত্রায় প্রচন্ড ঠান্ডা, হুটহাট তুষারপাতে বিপর্যস্ত জনজীবনে কোন স্বস্তি পাইনি। এভাবেই বছরের পর বছর কানাডায় দিন চলে যাচ্ছে।
পহেলা মে, তাপমাত্রা প্লাসের ঘরে। ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচন্ড গরমে সামারের প্রথমদিনেই নাভিশ্বাস উঠেছে!
গরম কাকে বলে, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়ার দিন চলে এলো!
শীতে কাবু হয়ে বলেছিলাম, বাপ,বিদায় হও,আর ঠান্ডা সহ্য হচ্ছে না। এখন সামার পুরোপুরি শুরু না হতেই আতংকিত হয়ে পড়েছি, এই গরম সহ্য করবো কি করে?
৩.
আমার বাসা হতে সামান্য দূরে লিটিল ইটালীয়া। পুরো এলাকাজুড়ে ইতালীয় বংশোদ্ভুত কানাডিয়ানদের বসবাস। তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা বানিজ্য, অফিস, র্গীজা, বাজারহাট সবকিছুই এখানে। সাপ্তাহের পাঁচদিন আমাকে লিটিল ইটালীয়ায় যেতে হয়। প্রতিদিনই এভিনিউ জ্যান্তালুনের রুয়ে ডরলেট ক্রসিংয়ের টিমহর্টনে এক কাপ ফ্রেঞ্চ ভ্যানিলা খেতে যাই। সেখানে রেগুলার আসা যাওয়ার মধ্যে পরিচয় হয় অষ্টাদশী স্বর্নকেশী মারিনো’র সাথে। মাত্রই সে ইউনিভার্সিটি যাওয়া শুরু করেছে। পড়াশুনোর পাশাপাশি টিমহর্টনে পার্টটাইম জব করে। প্রায় দিনই দেখা সাক্ষাতে সে জেনে গেছে আমার প্রিয় কফি কি, কোন সাইজের গ্লাস পছন্দ করি। টিমহর্টনের ভেতর আমাকে দেখলেই মারিনো কাউন্টার হতে বলবে, রনি, ফ্রেঞ্চ ভ্যানিলা স্মল ?
ইয়েস বলার আগেই মারিনো কফি হাতে ইশারায় কাউন্টারে ডাকবেই।
সামার চলে আসায় বেশ কিছুদিন মারিনোর সাথে দেখা হয় না। হঠাৎ রবিবার সকালে টিমহর্টনে মারিনোর সাথে দেখা। কুশলাদি বিনিময়ের পর কফি দিতে গিয়ে গ্লাসের ক্যাপে স্মাইল ফেস ও লাভ সাইন এঁকে দিয়ে বললো, ইটস স্পেশাল অনলি ফর ইউ।
ধন্যবাদ দিয়ে যখন আমি চলে আসব তখন পিছন হতে মারিনো বলে,রনি, অনেক দিন দেখা হবে না। আমি ভ্যাকেশানে যাচ্ছি। ভাল থেকো।

মন্ট্রিয়ল, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent