রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

কিছু সময় অনুভব

ছবি আইরিন গুয়ানটা

কাল একটা কাজে বাইরে যাওয়ার জন্য যখন গাড়িতে বসলাম, মনে হলো যেন ওভেনের ভিতরে ঢুকে পড়েছি। এসি চালাতে চাইলাম না। জানলা খুলে দিলাম, ঠান্ডা হাওয়া নয় তপ্ত হলকা ছুটে এলো বাইরে থেকে। কাল ছিল প্রচুর বাতাস। একশ কিলোমিটার তো হবেই। বাতাসে উড়ে যাচ্ছিলাম যেন। গাড়ি ও যেন উড়িয়ে নিয়ে যাবে এমন মনে হচ্ছিল। বাতাসের সাথে উড়ে আসছিল প্রচুল ধূলা, আর কীট পতঙ্গ। মাঠে মাঠে এখন ফসল বুনার সময়। সব মাটি আলগা ঝুরঝুরে বাতাস উড়িয়ে নিচ্ছিল সহজেই।

বাতাসের কি প্রচণ্ড শক্তি সে তো কদিন পর পরই দেখি। গাছ ঘর বাড়ি ইচ্ছে হলেই উড়িয়ে নিতে পারে। কড় কড় মরমর করে গাছের ডাল গুলো ভেঙ্গে পরে হুড়মুড় করে বাতাসের শক্তিতে।

- Advertisement -

গাছের গুড়িসহ উপড়ে ফেলে ইচ্ছে হলেই। ফেলে দেয়ে রাস্তায়, ঘরের উপর, গাড়ির উপর।

গত গ্রীষ্মে বাগান থেকে কিছু সবজি, র্হাব তুলছিলাম অপরাহ্নে, ডিনার রান্না করব সে জন্য। সারাদিন খুব সুন্দর একটা দিন ছিল শান্ত নাতিশীতোষ্ণ তাপমাত্র আর উজ্জ্বল রোদের। হঠাৎ মনে হলো দক্ষিণ দিক থেকে তুমুল একটা বাতাস আসছে।

আমি যেখানে আছি সেখানে কিছু নাই শান্ত ধীর কিন্তু ভয়ানক কিছু যেন আসছে। আমি সবজি,র্হাব গুলো হাতে সে দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে আছি। বাতাসের শব্দটা আমার ভালোলাগল না। মূহুর্তে মনে হলো সব কিছু উড়িয়ে নিবে।

আমি তাড়াতাড়ি ঘরে ঢুকে সবজি,হার্বগুলো রেখে গার্ডেন চেয়ার গুলো সরালাম। মনে হলো এদের উড়িয়ে নিয়ে দূরে গাড়ির উপর ফেলতে পারে। সব চেয়ার সরাতে পারলাম না। তার অগেই একটা চেয়ার গাড়ির কাছে উড়ে গেল। আর বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।

বৃষ্টি ভেজা হয়ে সব সরিয়ে ঘরে ঢুকে পূবের জানলা দিয়ে চেয়ে দেখি ঘরে কাছেই যে বিশাল উইল গাছটা যার গুড়িটা এত্ত বড় যে দুজন মানুষ  তাকে ধরতে পারবে না। তার একটা বিশাল ডাল অদ্ভুত ভাবে মুচড়ে ভেঙ্গে পড়ে আছে। যেন কোন দৈত্য একমূহুর্তে তছনছ করে দিয়েছে গাছটাকে। ভাগ্য ভালো অন দিকে পরেছে ভাঙ্গা ডালটা । উল্টো দিকে পরলে বাড়ির অবস্থা শেষ হয়ে যেত।

গত সপ্তাহে তুমুল ঝড় হলো অনেক গাছ উপড়ে ফেলল। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ফেলে মানুষকে অন্ধকারে এবং সব কাজ বন্ধ অবস্থায় রেখে দিল প্রভিণ্সের অনেকটা জুড়ে।

এর মধ্যে একটা খবর শুনলাম কলিগের মুখে। তাদের বাড়ির পাশে কাজ হচ্ছিল । সেখানে ছিল পোর্টেবোল টয়েলেট। একজন সেই টয়েলেটে ঢুকেছে। এই সময় তুমুল বাতাস উঠল। সব উড়িয়ে নিচ্ছে পোর্টেবোল টয়েলেটও উড়িয়ে নিয়ে আরেক বাড়ির দেয়ালের সাথে দাঁড় করিয়ে দিল। যে ভিতরে ছিল, সে তো কয়েক চক্কর খেয়েছে এখন দরজা খুলে বের হতেও পারছে না দরজা দেয়ালের সাথে আটকানো।

খবরটা জেনে যেমন ভয়াবহ লেগেছে, সাথে ফিকফিক করে হেসেও ফেলেছি পোর্টেবোল টয়েলেটের হাগু মুতুতে মাখামাখি অবস্থা ভেবে। হাসা মোটেও উচিত হয়নি তবে আমাদের মনোজগতের খবর আমরা নিজেও অনেকে সময় বুঝতে পারি না।

বাতাসের তুমুল শক্তির কথা ভেবে গাড়ির জানলা বন্ধ করে এসিই চালিয়ে দিলাম। যেতে যেতে টের ফেলাম কয়েকবার বাতাসের তুমুল মাতামাতি গাড়ি যেন উড়িয়ে নিতে চায়, হাওয়ার টানে।

আউট সাইড টেম্পারেচার দেখাচ্ছিল একত্রিশ কিছু যায়গায় আবার বেড়ে যাচ্ছিল তাপ। যা এসময়ের জন্য অনেক বেশি। ত্রিশ থেকে চল্লিশ উত্তাপ আমরা বছরে কয়েকদিন পাই গ্রীষ্ম সময়ে। কিন্তু এখনই বসন্তকালে এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ের উত্তাপ।

নতুন চারা আর বীজগুলো সদ্য বোনা হয়েছে মাঠে এ সময়ে এমন উত্তাপ তাদের জন্য ভালো নয়। বাচ্চা শরীর গুলো জ্বলে পুড়ে যাবে।

প্রতি বিকালে পানি ঢালছি চারাগুলো বাঁচাতে। অথচ একটা সময় ছিল কখনো পানি দিতে হতো না। সন্ধ্যার পর হিম শিশির এসে ভিজিয়ে রাখত গাছ গুলোকে সারারাত । মাটির নিচে থাকত প্রচুর আদ্রতা। এখন দেখা যায় চৈত্রের ফাটা মাটি বসন্তকালে।

কাল তুমুল গরমে আমাকে থাকতে হলো গাড়ির ভিতর প্রায় পাঁচ ঘন্টা। আমার একটা কাজ ছিল কাজ শেষে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়ে প্রকৃতি দেখে বাড়ি ফিরে এলাম। গরম এবং রোদের উজ্জ্বলতা এ্যারিজোনার গরমের মতন লাগছিল।

বসন্তকাল উপভোগের আগেই এবার গ্রীষ্ম এসে গেলো। কখনও শীত , কখনোও তুমুল বাতাস আর বৃষ্টি। এবার আপেল, চেরি, পিয়ার এবং এমন গাছগুলোর ফুল তেমন বাড়ার সুযোগ পেল না গাছে।

প্রতি বছর বসন্তের প্রথম একটা দিনে যখন আপেল, চেরি ফুলগুলো ঝলমল করে উঠে গাছে গাছে, সকাল বেলা দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে সারাদিন সেদিন আমি কাটিয়ে দেই বাইরে বসে প্রকৃতিকে উপভোগ করে। যত ফুল তত মৌমাছি, ভ্রমর, প্রজাপাতি, পাখি গাছগুলো ঘিরে কি একটা আনন্দ তান সারাদিন জেগে থাকে। কত রকমের পাখি শুধু ফুলের মধু খাওয়ার জন্য খুঁজে বের করে চলে আসে সেই গাছগুলোর কাছে। এ বছর সেই দিনটার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম অথচ তেমন ভাবে প্রকৃতির গুঞ্জরণে মুখরিত হলো না এবার। ফুল গুলো ফোটার পরদিনই তুমুল বৃষ্টি হলো দুদিন ধরে। সব মধু ধুয়ে মুছে গেল। প্রাণীগুলো চলে গেছে অন্য কোন দিকে। এবছর অর্ধেক মৌমাছি মরে যাওয়ার খবর দিয়েছে পরিবেশবিদরা। আমার মৌমাছিগুলোও মরে গেছে এবার। গত শীতের আগে তাদের জন্য আলাদা খাবার দিয়েও এবার তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারিনি।

এখন পর্যন্ত নতুন মৌমাছির দেখাও খুব একটা পাইনি।

প্রকৃতি বদলে যায় নিজের মতন নিজের ভালোলাগায় আর আমাদের অত্যাচারে, ব্যবহারে। তারপরও প্রকৃতির দেয়া আনন্দগুলো নিঃস্বার্থ উপভোগ্য।

 

টরন্টো, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent