রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

বাবার সঙ্গে আমার আনন্দের স্মৃতি খুব কম


বাবার সঙ্গে আমার আনন্দের স্মৃতি খুব কম।
বাবাকে আমি আব্বা ডাকতাম।
আমার আব্বা খুব নিষ্ঠুর ছিলেন। ছেলেমেয়েদের তিনি পেটাতেন অত্যন্ত নির্মম ভাবে।
ভাইবোনরা আব্বাকে খুব ভয় পেতো। আমিও। আব্বার নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ্য করে খুব ছেলেবেলাতেই আমি মনঃস্থির করেছিলাম–বড় হয়ে আমি কখনোই বাবার মতো হবো না। আমি হবো অন্যরকম বাবা। কোনোদিন আমার ছেলেমেয়েদের আমি মারবো না। বরং ওদের ভালোবাসবো। ওদের সঙ্গে মিশবো বন্ধুর মতো।
আব্বাকে আমরা ভালোবাসতাম কম। কিন্তু ভয় পেতাম বেশি।
আমি চেয়েছিলাম–আমার ছেলেমেয়েরা আমাকে কখনো ভয় পাবে না। বরং ভালোবাসবে। আমার সঙ্গে ওদের সম্পর্কটা হবে বন্ধুর মতো।
হয়েছেও তাই।
আমার একমাত্র মেয়ে নদীকে কোনোদিন মারিনি আমি।
০২
মধ্যবিত্ত পরিবারে মোট নয়জন ভাইবোন ছিলাম বলে আবদার-টাবদার খুব একটা করতাম না আমি, বাবার কাছে। খুব ইন্ট্রোভার্ট ছিলাম। একজনের উপার্জনে ১১জনের সংসার চালানো যে খুব সহজ নয় সেটা সেই বয়েসেই বুঝতে অসুবিধে হতো না আমার। আমি তাই চুপচাপ মেনে নিতে পারতাম যে কোনো অপ্রাপ্তিকে। আমার তাই কোনো দুঃখ ছিলো না।
ঊনিশ শ চৌষট্টি সালে ‘সুতরাং’ নামে একটা সিনেমা রিলিজড হলো গুলিস্তানে। আমি তখন খুব ছোট। ৫/৬ বছরের বালক।
রেডিওতে সুতরাং সিনেমার একটা গান তখন মাঝে মধ্যেই বাজে। গানটা ছিলো–‘এমন মজা হয় না/গায়ে সোনার গয়না/বুবুমনির বিয়ে হবে/ বাজবে কতো বাজনা।’
বাবার কাছে বায়না ধরলাম–আমাকে সুতরাং সিনেমাটা দেখাতে নিয়ে যেতে হবে।
বাবা রাজি হলেন। নিকটবর্তী একটা শুভ দিন নির্ধারিত হলো।
অফিস থেকে বিকেলে ফেরেন বাবা। সিদ্ধান্ত হলো আমাকে নিয়ে যাবেন সন্ধ্যার শো দেখাতে।
নির্ধারিত দিনে দুপুরের পর থেকেই ফিটফাট বাবুটি সেজে আমি তৈরি হয়ে থাকলাম। সেদিন বাবা ফিরলেন রাতে। আমি তাঁর অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এক বুক অভিমান নিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। রাত ন’টার পর বাড়ি ফিরে আমাকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে বাবা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কিন্তু আমি তো ঘুমাইনি! ঘুমের ভান করে শুয়ে ছিলাম। দেখতে চাইছিলাম বাবা আমার অভিমান ভাঙাতে কী করেন।
এক সময় আমি টের পেলাম বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালেন বাবা। তারপর মাকে জিজ্ঞেস করলেন–কখন ঘুমিয়েছে? মা বললেন আধ ঘন্টা আগে। বাবা বললেন–আচ্ছা ঘুমিয়ে গেলে তো ওর ডান পায়ের বুড়ো আঙুলটা নড়ার কথা!
আমি যে ঘুমিয়ে আছি সেটা বোঝাতেই চটজলদি ডান পায়ের বুড়ো আঙুলটা নাড়াতে শুরু করলাম। বাবা হেসে উঠলেন। আর আমি নিজের বোকামি বুঝতে পেরে হতাশায় ডুবে গেলাম! তক্ষুণি থেমে গেলো আমার আঙুল নাড়ানো। ধরা পড়ে গেছি। ঘুমানোর নাটক করে আর লাভ নেই। পিটপিট করে তাকালাম। বাবা আমাকে টেনে তুললেন। বললেন–কাল অবশ্যই নিয়ে যাবো। সন্ধ্যা ৬টার শোতে যাবো। তুই রেডি থাকিস।
পরদিনও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলো। অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত অবষণ্ণ হয়ে এক বুক অভিমান নিয়ে আটটার পর সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়লাম। বাবা ফিরলেন সাড়ে আটটায়। বিছানা থেকে ঘুমিন্ত আমাকে তড়িঘড়ি টেনে তুলে একটা রিকশায় বসিয়ে বাবা চললেন গুলিস্তান সিনেমা হলের দিকে। ছোট্ট বালক আমার মনে তখন একশোটা পঙ্ক্ষিরাজ আর দুইশোটা রাজহাঁস ডানা ঝাপটাচ্ছে।
গুলিস্তান হলের সামনে ঝুলছে বিশাল হোর্ডিং(হোর্ডিংই তো নাকি?) সুতরাং। চিত্রনাট্য পরিচালনা সুভাষ দত্ত। সঙ্গীত সত্য সাহা। শ্রেষ্ঠাংশে–কবরী, রানী সরকার, মেসবাহ, বেবী জামান, খান জয়নুল, সুভাষ দত্ত।
মুগ্ধ বিস্ময়ে আমি বিশাল পর্দায় ফ্রক পরা এক বালিকাকে নেচে নেচে গাইতে দেখলাম–এমন মজা হয়না/ গায়ে সোনার গয়না/ বুবুমনির বিয়ে হবে বাজবে কতো বাজনা/…ও বুবু দ্যাখ দুলাভাইয়ের কত্তো বড় দাড়ি/ তার সঙ্গে কালকে যাবি মজার শশুর বাড়ি…।
শাদাকালো সিনেমা সুতরাং-এর কবরী নামের প্রায়কিশোরী নায়িকাটি আমার মন জয় করে নিলো। আহা কী সুন্দর তার হাসি!
০৩
কয়েক বছর পর।
আমি তখন স্কুলে নিচের ক্লাশে পড়ুয়া বালক। রেডিওতে সিনেমার গান শোনা তখন আমার প্রিয় হবি। রাজ্জাক-কবরীর ‘নীল আকাশের নিচে’ তখন সুপার হিট। সেই সিনেমার গানগুলো আমার ঠোঁটস্ত। ইন্টারল্যুড মিউজিকসহ। দু’দিনের জন্যে বাবাকে যেতে হবে গ্রামে। জমিজমা সংক্রান্ত কাজ। আমি গ্রাম খুব ভালোবাসি। কী মনে করে বাবা আমাকে সঙ্গে নিলেন।
ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার প্রত্যন্ত একটা অঞ্চলে বাবার জন্ম। গ্রামের নাম বাঁশগাড়ি। সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে বাঞ্ছারামপুর কিংবা রামচন্দ্রপুরে নেমে বাবা আর আমি হাঁটা ধরলাম। বাবার হাতে ছোট একটা স্যুটকেস যেখানে তাঁর কিছু কাগজপত্র আর আমাদের দু’জনের অল্প কিছু কাপড়-চোপড়। বাবা হাঁটছেন আগে আগে আর আমি তাঁর পেছনে পেছনে। রোদ ঝলমল বিকেলটা গড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা হাঁটছি নদীর কিনার ঘেঁষে। নদীর পানি কমতে শুরু করেছে বলে তীরবর্তী অঞ্চলটা খানিক ভেজা ভেজা কাদামাখানো। প্রচুর কচুরিপানা ভাসছে নদীতে। কচুরিপানার বিরাট একটা অংশ তীরবর্তী ঢালে এসে আটকা পড়েছে। ওরা আর যেতে পারছে না নদীর পানিতে। শুকনোয় তাই কোনোমতে বেঁচেবর্তে আছে ওরা। শুকনোয় পড়লেও সেই সামান্য কাঁদাপানিতেও কী রকম ফুটে আছে দুর্দান্ত রূপসী কচুরিপানার ফুলগুলো! আমার খুব প্রিয় ফুল এই কচুরি। শাদা আর বেগুনি রঙের এমন অপরূপ কম্বিনেশন যে চোখ ফেরানো দায়।
শুকনোয় আটকে পরা কিছু কচুরিপানা বেশ পুরনো হওয়ায় জলের অভাবে এবং সূর্যতাপে শুকিয়ে যেতে যেতে কেমন তামাটে আর খয়েরী চেহারা ধারণ করেছে। কিন্তু সেই শুষ্কং-কাষ্ঠং কচুরিপানার কয়েকটার পেট তখনো ফুলেফেঁপে টইটম্বুর, বাতাসভর্তি।
বাবার পেছনে পেছনে হাঁটতে হাঁটতে আমি ছন্দে ছন্দে দুলতে দুলতে ‘নীল আকাশের নীচে আমি রাস্তায় চলে একা/এই সবুজের শ্যামল মায়ায় দৃষ্টি পড়েছে ঢাকা’ গাইতে গাইতে নাচের ভঙ্গিতে খানিকটা লাফিয়ে লাফিয়ে সেই পেট মোটা শুকনো কচুরিপানাকে টার্গেট করে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমার জুতোর তলায় চাপা খেয়ে সেটা ফেটে যায় ফট্টাস করে। ঘটনাটা আমি ঘটাই বারবার। ওই যে ফট্টাস করে ফেটে যাওয়া, সেটা আমাকে বিনোদিত করে বিপুল ভাবে। ঘাড় ফিরিয়ে বাবাও সেটা লক্ষ্য করেন। বালক পুত্রের সঙ্গীত প্রতিভা সেই প্রথম প্রত্যক্ষ্য করেন বাবা।
মোটামুটি লম্বা সময় ধরে হেঁটে আমরা যখন গ্রামে পৌঁছুলাম তখন সূর্যের আলোটা একেবারেই সোনালি আভায় পরিপূর্ণ। বাড়িতে থাকা মহিলারা বাবাকে বললেন–তাঁর বড় দুই ভাইই অই যে দূরের মাঠের শস্যক্ষেতে, কাজ করছেন। বাড়ির উঠোন থেকেই দেখা যাচ্ছে তাঁদের। সম্ভবত গোল আলু কিংবা মিষ্টি আলু বা সেরকম কিছু ফসল তাঁরা তুলছিলেন ক্ষেত থেকে।
স্যুটকেসটা নামিয়ে রেখে বাবা আর আমি চলে গেলাম ফসলের মাঠে।
আমার বাবার দু’টি ভাই। তাঁরা দু’জনেই বাবার অগ্রজ। সেই হিশেবে তাঁরা আমার জেঠু। কিন্তু একজনকে আমি কাকা ডাকতাম।
জেঠু আর কাকা দু’জনেই আছেন সেখানে। বাবাকে দেখে তাঁরা দুই ভাই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তাঁদের সঙ্গে কয়েকজন মধ্যবয়স্ক সহযোগীও কাজ করছেন ক্ষেতের মধ্যে। বাবার সবচে বড় ভাইকে জেঠু আর তাঁর পিঠেপিঠি বড়ভাইকে আমি কাকা বলে সম্বোধন করতাম।
আমার কাকার হাতে কাঁচি। সেই কাঁচি চালিয়ে কাকা আলু উত্তোলন করছিলেন। জেঠুকে সালাম দিয়ে কাকাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম–কেমন আছেন কাকা?
কাকা জবাব দিলেন–আমি তো ভালো আছি, তুমি কেমন আছো? দাঁড়াও হাতের এই কাজটা শেষ কইরা লই। আইতাছি তোমার কাছে।
আমাদের কথোপকথন শুনে মধ্যবয়স্ক সহযোগীদের একজন টিপ্পনি কাটলেন–কী ভাতিজা দুইজনেই তো তোমার বাপের বড় ভাই। একজনেরে ডাকলা জেঠু আর অইন্যজনরে ডাকলা কাকা। ক্যান্‌? সে একটু গরিব বইলা? সে একটু গরিব বইলাই তারে তুমি কাকা বললা!?
(এরকম বেমক্কা প্রশ্নে কাকা আমার খানিকটা হতচকিত। বাবাও বিব্রত। কারণ কথাটা তো মিছে নয়। ঢাকায় বাবা ইট-সিমেন্টের দালান কোঠার মালিক। আমাদের তুলনায় কাকারা অনেক গরিব তো বটেই।)
এরকম পরিস্থিতিতে বালক আমি প্রতিবাদী কণ্ঠে বললাম–না তো! আমাদের তো কোনো কাকা নাই, তাই আমি শখ কইরা তাঁরে কাকা ডাকি।
আমার এরকম তাৎক্ষণিক জবাবে খানিক আগের বিব্রতকর পরিস্থিতিটা পালটে গেলো মুহূর্তেই। কাকা তাঁর হাতের কাজ শেষ না করে দাঁড়িয়ে পড়লেন–আসো কাকা তোমারে একটু আদর কইরা দেই…
ক্ষেত মাড়িয়ে আমি তাঁর কাছে গেলাম। লুঙ্গিতে দুই হাতের মাটি মুছে তিনি আমাকে কাছে টেনে নিলেন। আমার মাথায় চুলে গালে কপালে অনেকক্ষণ ধরে হাত বুলিয়ে দিলেন। তাঁর চোখ দু’টো চকচক করছে আনন্দ-বেদনার যৌথ প্লাবনে!
০৪
ছেলেবেলায় আমার সবক’টা ভাইবোন নিষ্ঠুর বাবার বেধড়ক মার খেলেও একমাত্র আমিই কোনোদিন মার খাইনি তাঁর হাতে। মার খাওয়ার মতো কোনো কাজেই আমি শামিল হতাম না। খুব সতর্কতায় এড়িয়ে চলতাম সমস্ত ঝুট ঝামেলা। চুপচাপ মানিয়ে নিতাম নিজেকে। খাওয়ার সময় এটা খাবো না ওটা খাবো না এটা চাই ওটা দিতে হবে টাইপের কোনো বায়নাক্কা আমার ছিলো না। মা যা-ই দিতো, খেয়ে নিতাম। খাবার পছন্দ না হলে অল্প খেয়েই উঠে পড়তাম। কিন্তু ঝামেলা করতাম না। ডিম অর্ধেকটা দিলেও আস্ত দিতে হবে বলে চ্যাঁচাতাম না। কিন্তু আমার অন্য ভাইবোনরা প্রায়ই সেটা করতো।
এতো মানিয়ে চলার পরেও বাবার নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রেহাই পাইনি আমি। ছেলেবেলায় আমার ওপর নিষ্ঠুরতা সংগঠিত না হলেও বড় বেলায় বাবার(এবং মায়েরও) চরম নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিলাম আমিই। একান্নবর্তী পরিবারে বাস করে তরুণ বয়েসে নিজের পছন্দের ভালোবাসার মেয়েটিকে বিয়ে করার অপরাধে বাবা আমাকে আমাদের ওয়ারি হেয়ার স্ট্রিটের দোতলা বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। আমি ছিলাম আমাদের পরিবারের একমাত্র বিতাড়িত সন্তান।
আমার নিষ্ঠুর বাবা খুব অহংকারী ছিলেন। দাম্ভিক ছিলেন। অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের প্রতি তিনি ছিলেন খুবই অত্যাচারী স্বভাবের। বদরাগী ছিলেন। প্রচণ্ড দুর্ব্যবহার করতেন গরিব আত্মীয়দের সঙ্গে। নিজের টাকা আর সম্পত্তির বড়াই ছিলো বাবার। আমি যেদিন সস্ত্রীক বেরিয়ে যাচ্ছি বাড়ি থেকে, বাবা আর মা দোতলার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন আমার প্রস্থান বা গৃহত্যাগ দৃশ্য। ওপর দিকে তাকিয়ে আমি শেষ সংলাপ হিশেবে বাবা মায়ের উদ্দেশ্যে বলেছিলাম–এই যে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন আব্বা, আমি আর কোনোদিন ফিরে আসবো না এই বাড়িতে।
শুনে আমার দাম্ভিক বাবা বলেছিলেন–সম্পত্তির জন্যে হলেও আসবি, আমি জানি।
আমি বলেছিলাম–সাড়ে সাত শো কোটি মানুষের এই পৃথিবীটা অনেক বড় আব্বা। আমাদের পরিবারের এগারোজন সদস্যের বাইরে বাকি সাড়ে সাতশো কোটি মানুষ কিন্তু বেঁচে আছে টিকে আছে আপনার কোনো রকম সাহায্য সহযোগিতা ছাড়া। আমিও বেঁচে থাকবো আপনার বিত্তের সহায়তা ছাড়াই। এতো বড় পৃথিবীতে কোথাও না কোথাও আমার জায়গা হবেই। হয়তো সংকট থাকবে কিন্তু শত সংকটেও আমি কোনোদিন হার মানবো না। কোনোদিনই ফিরে আসবো না এই বাড়িতে। থাকেন আপনি আপনার সম্পত্তি নিয়ে। আমার অন্য ভাইবোনরা হয়তো সম্পত্তির কাঙাল, কিন্তু আমি নই। এর প্রমাণ আপনি পাবেন।
০০
হ্যাঁ। প্রমাণ তিনি পেয়েছিলেন।
নিষ্ঠুর অহংকারী ধনাঢ্য বাবাকে আমি পরাজিত করেছিলাম।
আমি আমার বাবার সম্পত্তির কানা কড়িও নিইনি।
এবং আমি আর কোনোদিনও ফিরে যাইনি সেই বাড়িতে।

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent