বৃহস্পতিবার - মে ৯ - ২০২৪

ন্যানো প্রজন্মের উত্থান এবং আসন্ন মন্দা (দ্বিতীয় পর্ব)


ষাটের দশকের প্রজন্মকে বলা যায় রেডিও জেনারেশন। আকাশবাণী থেকে নীলকমল আর লালকমলের নাটক চলছে, আর সেই নাটক শোনার জন্য রেডিওর চারপাশে সবাই গোল হয়ে বসেছে, মাথা গুঁজে, যেনো মনোযোগের কোনো ঘাটতি না হয়। অথবা পাকিস্তান রেডিওতে বাজছে…
মেরে খেয়ালও পে ছাহি সে এক
সুরত ভি মাতেওয়ালি সি
নাজুক সি শর্মিলী সি
মাসুম সে ভলে ভালি সি
রাহিতি হায় দূর কাঁহা আতা পাতা মালুম নাহি
কো কো করিনা…
কো কো করিনা…
ষাট এর দশকের প্রজন্মকে স্কুলে গাইতে হতো
পাক সার জমিন সাদ বাদ
কিশওয়ারে হাসিন সাদ বাদ
তু নে সানে আজমে আলি শান…
সেটা আবার বাংলা ভার্সনে ছিলো
পূরব (পূর্ব) বাংলার শ্যামলীমায়
পঞ্চনদীর তীরে অরণীমায়…
একই জমিনে এই দ্বিধা বিভক্তি থেকেই এই প্রজন্মের যাত্রা শুরু। তাঁরা দেখেছে
পরাধীনতা, বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধউত্তর স্বাধীন দেশে অরাজকতা, দুর্ভিক্ষ, রিলিফ, মজুতদারী, বঙ্গবন্ধুর অ্যাসাসিনেশন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তন, সামরিক শাসন।
ষাটের দশকের প্রজন্ম দেখেছে রেডিওর পর টেলিভিশনের আগমন। সাদা কালো থেকে রঙিন টিভি, রূপালী পর্দা থেকে রঙিন পর্দা, রেকর্ড প্লেয়ার থেকে ক্যাসেট প্লেয়ার, ভিসিয়ার থেকে ডিভিডি, ল্যান্ডলাইন টেলিফোন থেকে সেলুলার ফোন। কিংবা বলা যায় এনালগ থেকে ডিজিটাল যুগের পরিবর্তন।
পশ্চিমে বিটলসের পপ মিউজিক, রোলিং স্টোনসের রক এন রোল, স্কিড রো র হেভি মেটাল। ন্যানো জেনারেশন সেই সব ফেলে গড়ে তুলেছে হিপ হপ কালচার।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই জেনারেশন মনে করে তাঁরা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন দেখেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তাদের পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ নব্বই দশকের পরের প্রজন্ম আরো চমকপ্রদ পরিবর্তন দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু মূল পার্থক্য হলো ষাটের দশক থেকে নব্বই পরবর্তী প্রজন্ম আরো বেশী টেক স্মার্ট কিংবা প্রযুক্তি ব্যবহারে চৌকষ। এরা সামাজিক এবং প্রযুক্তির পরিবর্তনকে অনেক সহজ ভাবে নিতে শিখেছে। কিন্তু আগের প্রজন্মের মতো সহজেই বিষ্ময় জাগে না। কিংবা সেই ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক। কারন কৌতুহল মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে, আকর্ষনীয় করে তোলে। সৃজনশীলতার জন্মই হয় বিষ্ময় আর কৌতুহল থেকে।
(চলবে…)
পুনশ্চ: (ষাট দশকের জনপ্রিয় উর্দূ গান কো কো করিনা, গীতিকার: সোহেল রানা, সুরকার: মাসরুর আনোয়ার, গায়ক: আহমেদ রুশদি, খুব সম্ভবত।
পূর্ব বাংলার শ্যামলিমায়: গীতিকার গোলাম মোস্তফা, সুরকার জানা যায়নি, রচনাকারী ১৯৫৬ সাল)

- Advertisement -

Read More

Recent