রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

শামিম রহমানের দেশসেরা ফিল্ম এডিটর হয়ে ওঠার গল্প

শুরুটা হয়েছিল গিটারের হাত ধরে। ছোট্ট একটা শহরের এক কোনে ছিল তার কিং পার্ক নামের ব্যান্ড দল। পরিবারের বাবা মা আর ছোট দুই ভাই নিয়েই ছিল তাদের সাজানো ছোট্ট একটি পরিবার। আজ থেকে ৫ বছর আগে ছেলেটা কখনো ভাবেনি যে, দেশের একজন গুণী ফিল্ম এডিটর হবেন। বলছি শামীম রহমানের কথা। লাইট ক্যামেরা অ্যাকশনের টুকরো টুকরো ফ্রেমের গল্পগুলোকে যিনি সাজিয়ে নেন দুর্দান্তভাবে।

- Advertisement -

বর্তমানে কর্মরত আছেন দেশের জনপ্রিয় পরিচালক, মাবরুর রশিদ বান্নাহ’র প্রোডাকশন ইউসিএফের চিফ এডিটর হিসেবে। এবার ফিরে যাই, শামীমের লাইফের ট্র্যাক বদলের গল্পে।

মিউজিশিয়ান থেকে ফটোগ্রাফার, সিনেমাটোগ্রাফার, অবশেষে চ্যালেঞ্জ নিয়ে দেশের অন্যতম সেরা ফিল্ম এডিটর হয়ে ওঠার গল্প।

শামীম রহমানের জন্ম ও বড় হয়ে নীলফামারী জেলার ছোট্ট একটি থানা শহর সৈয়দপুরে। পড়ালেখার পাশাপাশি ২০০৯ সালে শখের বশে বন্ধুদের সাথে গিটার বাজানো শুরু করেন।

তারপর ২০১১ সালে নিজের ছোট দুই ভাই ফয়সাল ও রাফিকে নিয়ে কিং পার্ক নামে একটি লোকাল ব্যান্ড শুরু করেন এবং ছোট ছোট কিছু লোকাল কন্সার্টও করেন তারা।শামীম বলেন তিনি ছোট থেকেই তার ভালো লাগার বিষয়গুলোর ওপর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ভালোবাসতেন। ফটোগ্রাফিও ছিল তার একটি ভালো লাগার বিষয়।

তিনি মোবাইল দিয়ে ফটোগ্রাফি করতেন এবং পরবর্তীকালে টাকা ধার করে ক্যামেরা কিনেন। সেই ক্যামেরা নিয়ে তিনি প্রথম পর্যায়ে তার মা-বাবার কাছ থেকে যাতায়াত খরচ নিয়ে আশে-পাশে বিভিন্ন জায়গায় ফটোগ্রাফি করতে বেড়িয়ে পড়তেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি তার খরচ যোগানের জন্য সীমিত টাকায় ছবি তুলতে ইচ্ছুক ছেলে-মেয়েদের ছবি তুলে দিতেন ও মাঝেমধ্যে ওয়েডিং ফটোগ্রাফিও করতেন। তিনি ২০১৭ -তে গ্রামীণফোন ওয়াও বক্স ফটোগ্রাফি এওয়ার্ড অর্জন করেন।

তিনি আরো বলেন, তার অভিজ্ঞতা বাড়ানোর জন্য শর্টফিল্ম ও মিউজিক ভিডিও করতেন এবং বাসায় থাকা একটি পুরনো কম্পিউটারে সেসব এডিটও করতেন।

এমনি এক শর্ট ফিল্মে তার এডিট করা একটি ট্রেইলার তিনি ২০১৮ সালে এক কাছের বড় ভাই মৌসুম আহমদের পরামর্শে দেশের জনপ্রিয় পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ -কে মেইল করেন। পরিচালক মাবরুর রশিদ বান্নাহ সেই ট্রেইলারটি দেখে শামীম রহমানকে ইন্টারভিউর জন্য ঢাকায় ডাকেন এবং তার প্রোডাকশন কোম্পানি ইউ সি এফ-এ এডিটর হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেন ২০১৯ সালে। আর এখন শামীম রহমান সেই প্রোডাকশন কোম্পানির চিফ এডিটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি “কিং পার্ক” নামে নিজের পোস্ট প্রোডাকশন কোম্পানি শুরু করেছেন ঢাকায়। তিনি এই পর্যন্ত ১০০+ নাটক ও ওয়েবসিরিজ এডিট করে সেঞ্চুরি করেছেন বাংলাদেশ মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে।

তার এডিট করা মুভি “মায়ের ডাক” এর জন্য তিনি ২০২২ সালে সেরা এডিটর অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন নেক্সজেন ইন্টারনাশনাল শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড হতে। তিনি কিছুদিন আগে ইন্ডিয়ান সাউথ ইন্ডাস্ট্রির কিছু বিটিএস ও শো-রিল এর কাজও সম্পাদনা করেছেন। শামীম রহমান বলেন বর্তমানে তিনি মাবরুর রশিদ বান্নাহ’র বদমাইশ পোলাপাইন সিজন ৪ সহ থাইল্যান্ডের ৬ টি প্রজেক্ট এবং নিজের “কিং পার্ক” প্রোডাকশনের কিছু কাজ নিয়েই ব্যস্ত রয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, ২০২৩ সালে মুভি এবং ওটিটি’র জন্য কাজ করবেন ইনাশাল্লাহ।

শামীম রহমানের করা জনপ্রিয় ফিকশন ওয়েবসিরিজ গুলোর মধ্যে রয়েছে মায়ের ডাক (ড্রামা), বদমাইশ পোলাপাইন (ওয়েবসিরিজ), দেয়ালের ওপারে তুমি, ব্রাদার্স ৩, ও আমার বোন না, সুইপারম্যান, এ বিটার লাভ স্টোরি, শোবার ঘর (ওয়েবসিরিজ),দ্যা বেগার, মানুষ টোকাই, আমার অপরাধ কি?, ফ্রেন্ডস ভার্সেস চিটার, ব্যঞ্জনবর্ণ, একজন মধ্যবিত্ত বলছি, চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি, হাফ হানিমুন, আদার হাফ, অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ, রিভার্স, হাটতে চাই তোমার পাশে, লাভ জার্নি, ব্লাইন্ড বার্ডস, মেইড ফর ইচ আদার ইত্যাদি।

শামীম বলেন, “ফ্রেমের টুকরো টুকরো গল্পগুলোকে একটি আনন্দে কিংবা আবেগের সংমিশ্রণ ঘটান, তার পুরো কন্টেন্ট টি প্রিভিউ করতে গিয়ে নিজের অজান্তেই কখনও কেঁদেছেন আবার কখনও অনেক হেসেছেন। তিনি এটাও বলেছেন যে ফিল্ম এডিটিং অনুভুতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। এটা একটা নেশার মত। আর এই নেশা নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। অডিয়েন্সকে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে চাই। পাশাপাশি আমার পরিচালনায় যাবার বেশ একটা ইচ্ছা আছে। সময় সুযোগ মত সেই সেই ইচ্ছাটা নিয়ে কাজ করবো ইনশাআল্লাহ। শামীম রহমান তাঁর সফলতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান, মহান সৃষ্টিকর্তা, পিতা-মাতা, মাবরুর রশিদ বান্নাহ, প্রিন্স এবং মৌসুম আহমেদ সহ নিজ ইচ্ছা শক্তিকে। সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Read More

Recent