বুধবার - মে ৮ - ২০২৪

সংকটের গভীরে

২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে যখন টেক্সাসে যাই, ডালাস, অ্যামারিলো বা অস্টিনের পিচঢালা মসৃণ পথে একশ কিলোমিটারের বেশি বেগে গাড়ি চালিয়ে ঘুরে বেড়াই, তখন আমার শরীর ভেতরে ভেতরে হাই বøাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপে দিশাহারা; হার্ট থেকে আসে বটে, তবে কোনোভাবেই তাকে হৃদয়ের নাচ বলা যাবে না। এ এক ভীতিকর অবস্থা! পারদ মিলিমিটারের হিসাবে উপরের কাঁটা ১৬০ থেকে ১৯০-এর মধ্যে উঠানামা করছে আর তা দেখে অ্যামারিলোতে আমাদের পারিবারিক আত্মীয় ডাক্তার শহীদ গাজির মুখের হাসি মলিন হয়ে গেছে। এই চাপ নিয়ে মাইলের পর মাইল গাড়ি চালাবো শুনে “এটা ঠিক না” বলে অনুরাগ থেকে অনু খসিয়েছিলেন তিনি। ফিরে এসে পারিবারিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হলাম, প্রথমে ডিউটি অফিসার ভদ্রমহিলা তার প্রেসার মাপা যন্ত্রে ভেসে ওঠা ১৮০ হয়তো বিশ্বাস করতে চায়নি, সেজন্য বিলম্ব না করে খোদ ডাক্তার মশাইকে ডেকে আনলেন। ডাক্তার এলেন, পরখ করলেন, আধুনিক যন্ত্রের পরিবর্তে এবার তার ভরসা সেই আদিকালের পারদের যন্ত্র― কোনোরকমে প্রেসার ১৬০-এ আনতে পেরেই তিনি মহাখুশি। প্রেসার কমাতে এতদিন সকাল বিকাল মিলে বরাদ্দ ছিল র‌্যামিপ্রিলের ২০ গ্রাম। ওটাই সর্বোচ্চ, সেজন্য এবার তাই খেতে হবে অন্য আরেকটি, আর সেটাও খেতে হবে আগের দুটোকে সাথে রেখেই। মানে আমার বøাড প্রেসার ঠিক রাখার জন্য এখন থেকে তিন সৈনিক― সকালে দুইজন এবং সন্ধ্যায় একজন।

- Advertisement -

এক সপ্তাহ চলে যায়, প্রেসার ১৪০এর নিচে নামেই না। আমিও হাল ছাড়ার পাত্র না। খেলাধুলো বাড়িয়ে দিলাম। ডাক্তারের হুকুম, ডায়াবেটিসের রোগিদের জন্য এই প্রেসার কোনোভাবেই ১৩০ অতিক্রম করতে পারবে না। ডিসেম্বরের ২২ তারিখ থেকে ২ সপ্তাহের জন্য অফিস ছুটি হয়ে গেল। আমার প্রেসারও কিছুটা নেমে ১৩০-এ আটকে গেল। আহ! কতদিন পরে। সেই কবে বøাড প্রেসার ১২০ দেখেছি সেটা মনে করতে চেষ্টা করলাম। আসলেই তো, একসময় আমার রক্তে লো-প্রেসার ছিল, তখন ডাক্তার বেশি করে ছোট মুরগির ঝোল, সিং-মাগুর মাছ খেতে বলতো, আর আমিও সেই পরামর্শ শুনে কত মুরগি আর মাছের জীবন সংহার করেছি। এখন ভাটার সময়, তাই ডাক্তারের নিষেধ মেনে গরু-খাসির মাংস হারাম, মুরগি মাঝেমধ্যে, আর এই প্রবাসে ফ্রিজে ঘুমানো অনেক দিনের পুরোনো সিং মাগুর খেতে কারই বা ইচ্ছে করে, তাই সেসবও খাওয়া হয় না। তার পরিবর্তে তিতা করলা দিয়ে রান্না করা মাছ, আর মাঝে মধ্যে সেই করলা সিদ্ধ করে তার জল ঠাÐা করে বানানো জুস।

এভাবেই চলে যাচ্ছিল বেশ। রক্তে সুগার কমানোর জন্য সকালে সন্ধ্যায় ৫০০ মিলিগ্রামের একটা করে ম্যাটফরমিন, তা গলাধঃকরণ করে আয়েশে ঘুম দিয়ে ভয়ে ভয়ে সুগার মাপি― খালি পেটে ১০/১২ঘণ্টা পরে তাতে ৭কি ৮ধরা দিলে কী যে খুশি! তা তো হয় না, মাঝে মধ্যে এ-বাড়ি ও-বাড়ির দাওয়াতে গেলে অনিয়ম হয়ে যায়, অনেক তরকারি খেতে গিয়ে একটু বেশি পোলাও কি ভাত খাওয়া হয়ে যায়, আর বাড়তি হিসাবে দই-মিষ্টি। আচ্ছা দই-মিষ্টি ছাড়া বাঙালিত্ব থাকে? কিন্তু রক্তের মধ্যে চিনি বাবাজি মুখ বুজে হাসে, তাই পরদিন খুব সাবধানে সুগার মাপি― ১১কি ১২। বউ এসে মন খারাপ করে, বকা দিতে ভুলে যায়, আদর করেই হয়তো বলে, “তোমার খাই খাই স্বভাবটা গেল না।”

ক্যালগেরি, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent