রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মূল ভিত্তির একটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা

সমস্যার গভীরে যেতে হবে। ভাবতে হবে সমস্যা কি, তার উৎস কি এবং সমাধান কি। এভাবে লেখালেখি করে, নামমাত্র প্রতিবাদ করে, নিন্দা জানিয়ে, ফেসবুকে লেখালেখি করে লাভ হবে না।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি একসময় ছিল। সেই সময়টা কখন? এবং কেনই বা সেই সময় সম্প্রতি ছিল, তা নিয়ে ভাবতে হবে।
স্বাধীনতা উত্তর বঙ্গবন্ধু যতদিন বেচে ছিলেন আর বাহাত্তরের সংবিধান যত দিন ছিল তত দিন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি ছিল। এই সম্প্রতি থাকার প্রথম কারন ছিল, বংবন্ধু নিজে মুসলমান হয়েও তিনি অন্তকরনে অসাম্প্রদায়িক ছিলেন। তিনি সারা জীবন অন্য সব ধর্মের প্রতি হয় নির্মোহ আচরণ করেছেন, নয়তো বা নিরপেক্ষ আচরন করেছেন। নিজ ধর্মকে তিনি কখনই রাজনীতির মাঠে কৌশল হিসাবে ব্যবহার করেননি।
আরেকটি কারনে তখন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ছিল। কারনটি ছিল, বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মূল ভিত্তির একটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। অর্থাৎ রাষ্ট্র বা সরকার সাংবিধানিকভাবেই সকল ধর্মের প্রতি হয় সমান আচরন করবে,নয়তো বা নির্মোহ আচরন করবে।
বাহাত্তরের সংবিধান অন্যান্য সকল ধর্মের অনুসারীদের রক্ষাকবচ হিসাবে কাজ করেছে। বাহাত্তুরের সংবিধানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল, ধর্মের উপর ভিত্তি করে কোন রাজনীতি করা যাবে না অর্থাৎ বাহাত্তরের সংবিধান অনুযায়ী ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। সংবিধানের এই বিধানটিও সকল ধর্মের অনুসারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছিল। কারন, ধর্ম রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে সংপৃক্ত না থাকার কারনে ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত চর্চার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, ধর্ম কখনোই রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উঠে এসে ডোমিনেন্ট ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারেনি।
এই দুটি কারনেই তখন সামপ্রদায়িক সম্প্রতি ছিল। এর ঘোর পরিবর্তন ঘটে ১৯৭৫ সালে বংবন্ধুর হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে। সকল ধর্মের প্রথম রক্ষাকবচ বংবন্ধুকে হত্যা করা হয়, দ্বিতীয় রক্ষাকবচ বাহাত্তরের সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয় এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে জামাতে ইসলামী, মুসলিম লীগের মত স্বাধীনতা বিরোধী দলগুলি ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি করার অধিকার পায়।
মূলতঃ এই সময় থেকেই বাংলাদেশে আর সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় থাকেনি। এর পর যে সব শক্তি দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় ছিল তারা নানাভাবে ধর্মকে রাজনৈতিক খেলায় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেছে। আর এই রাজনৈতিক খেলায় প্রধান শিকারে পরিনত হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। প্রতিবার তারা সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্যের শিকারে পরিনত হয়েছে।
বংবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় দীর্ঘ দিন পর ফিরে আসলেও ২১ বছরে যে দীর্ঘ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তা মেরামতের জন্য তেমন কোন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেননি। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানের সেই রক্ষাকবচ গুলি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেননি। তিনি দ্বিতীয় দফায় দীর্ঘ ১৩ বছর ক্ষমতায় আছেন কিন্তু তিনি সংখ্যালঘুদের রক্ষার জন্য তেমন কোন পদক্ষেপ নেননি বরং হেফাজতে ইসলামী নামের উগ্র সাম্প্রদায়িক একটি দলকে নানাভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিয়েছিল।
পিতার সংগে কন্যার এখানেই তফাত। বংবন্ধু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেননি কিন্তু তার কন্যা ধর্মকে পুজি করে তার রাজনীতি এগিয়ে নিতে চান।
শেখ হাসিনা বাহাত্তরের মূল সংবিধানে ফিরে যাননি। তিনি হয়ত ভেবেই নিয়েছেন যেখানে ৯০ শতাংশ মুসলমান সেখানে আর ১০ শতাংশের সাথে থেকে লাভ কি?
এখানেই শেখ হাসিনা তার বাবার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। তার উচিত ছিল বাহাত্তরের মূল সংবিধান ফিরিয়ে এনে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু তিনি নানা রকম রাজনৈতিক কূটকৌশলের কাছে নিজেকে সমার্পন করে তার পিতার আদর্শ থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। একমাত্র শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব ছিল দেশটাকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া কিন্তু তিনি সেই সৎসাহস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। অনেক কিছুর সাথে আপোষ করে তিনি আজ রাজনীতি করছেন যা তার পিতার আদর্শ থেকে অনেক দূরে ।
আজ একটি ফেসবুকের পোস্টকে কেন্দ্র করে রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দুদের বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এমন একটি দেশ যারা চায় তারা আসলে কারা? ভেবে দেখার সময় এসেছে।

- Advertisement -

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent