শুক্রবার - জুলাই ২৬ - ২০২৪

বইয়ের সঙ্গে বিকশিত হও আমার ছোট্ট বন্ধুরা

ফেল্টুস চড় খাবি বই হাতে ছোট্টবন্ধু নির্বাণ এবং ছোট্ট ছড়াবন্ধু মীরা মুখে মুখে ছড়া বানায় সে তৃতীয় ছবিতে ছড়াকার চন্দনকৃষ্ণ পাল ও অবিনাশ আচার্য ইনবক্স থেকে পাওয়া

ইশতিয়াক আহমেদ খুবই পাঠকনন্দিত একজন কথাশিল্পী। একুশের বইমেলায় নিজের চোখেই দেখেছি ওর জনপ্রিয়তার নমুনা। কিন্তু স্বভাবে লাজুক ইশতিয়াক নিজেকে খানিকটা আড়ালেই রাখে। ওকে পাঠক চেনে। ওর লেখা বই পাঠক কেনে। যে কারণে খুব নিরবেই ওর একেকটা বইয়ের একাধিক এডিশন হয় এক মেলাতেই। ওর জনপ্রিয়তাকে আমি উপভোগ করি বইমেলায়, দূর থেকে। আমার বিশেষ স্নেহভাজন সে। ওর জীবনের প্রথম লেখাটা ছাপা হয়েছিলো আমার ‘ছোটদের কাগজ’ নামের পত্রিকায়। সেদিনের কিশোর লেখক ইশতিয়াক আজ পাঠকনন্দিত লেখক, এটা আমার জন্যে আনন্দ আর গৌরবের।

গেলো সপ্তাহে ইশতিয়াক একটা ছোট্ট লেখা আপলোড করেছে ফেসবুকে। লেখার সঙ্গে মন প্রসন্ন করা একটা ছবি। হাফ প্যান্ট পরা এইটুকুন এক বালক বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আমার সদ্য প্রকাশিত কিন্ডারবুকস্‌-এর ‘ফেল্টুস চড় খাবি’ নামের বইটা খুলে খুব মনোযোগী পাঠকের মতো রাজীব দত্তের আঁকা ইলাস্টেশন দেখছে। এখনো পড়তে না শেখা এই খুদে বালকটা ইশতিয়াকের ছেলে নির্বাণ।

- Advertisement -

ইশতিয়াক ওর টাইমলাইনে লিখেছে–

“[আপাতদৃষ্টিতে এই ছবিটা একটা সাধারণ ছবি।

মেলার সময় শিশুরাও বই পড়বে, বই নিয়ে বসে থাকবে এটা খুব নিয়মিত দৃশ্য।

কিন্তু আমার জন্য এই ছবিটার তাৎপর্য অনেক বিস্তৃত, ব্যাপক।

পড়তে না শেখা আমার পুত্রের জন্য প্রথমবারের মতো মেলা থেকে একজনের বই কিনে আনলাম।

নির্বাণের জন্য আনা প্রথম বই হিসেবে যেটা হওয়ারই কথা ছিলো।

আমার পুত্র বড় হয়ে জানবে, তার বাবা যে সামান্য লেখালেখি করতে শিখেছে, লেখালেখির রাস্তা ধরে হেঁটেছে, এটা এই বইয়ের লেখকের কল্যাণেই। লেখকের নাম, লুৎফর রহমান রিটন।

রিটন ভাই, আপনি যত আরও দীর্ঘকাল লিখে যান।

আমি আমার পুত্র, তার পুত্রদের জন্য আপনার বই মেলা থেকে নিয়ে আসতে চাই…]”

আহা। কী যে ভালো লাগলো ছবিটা দেখে। আর কিছুকাল পরে, এই পিচ্চিটা যখন পড়তে শিখবে, তখন পাঠ্য বইয়ের বাইরে আমার ছড়ার বইটাও পড়বে। দৃশ্যটা কল্পনা করে মন ভালো হয়ে গেলো আমার।

মেসেঞ্জারে ইশতিয়াক লিখলো–

“আপনার বইটা কাল এনেছি

আজ ছেলেকে পড়তে দেবো

পড়ে শোনাবো…

যদিও সেখানে বয়সসীমা ৮ বছর

আমার ছেলে যে ম্যাচিউর সে আপনার এটা বুঝে যাবে নিশ্চিত

কাল তার মা একটা পড়ে শুনিয়েছে

সে বলে, আবার বলো

আবার বলো…

আমি লিখলাম–

তুমি যে ছেলের জন্যে আমার বইটা নিয়ে গেছো সেটা আমার জন্যে অনেক আনন্দের ব্যাপার হলো।

ইশতিয়াক লিখলো–

এটা তো ভাই সারাজীবন থাকবে

যতদিন আপনি লিখবেন

ততদিন তার জন্য একটা বই এলেও আপনার বই আসবে…

আমার ছেলে বই বুঝতে পারার পর পাঠ্য বইয়ের বাইরে তার প্রথম বই আপনারটা হবে এটাই তো স্বাভাবিক

আপনাকে ছুঁয়ে যেতে পেরেছে

এটা আমাদের বড় পাওয়া…।”

এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে এভাবেই চলছে আমার পরিভ্রমণ গত চল্লিশ/পঞ্চাশ বছর ধরে। বিত্তের বৈভব না থাকা আমার চিত্ত যে মহা বিত্তশালী সেটা আমি সগৌরবে প্রায়শঃ উচ্চারণ করে থাকি এই কারণেই।

আমি ছোটদের লেখক।

ছোটদের হাতে টাকা থাকে না বলে ওরা নিজেরা আমার বই কিনতে পারে না। কিন্তু ইশতিয়াকের মতো বাবারা, মায়েরা, ভাইয়ারা কিংবা আপারা আমার প্রতি ভালোবাসা আর মমতা বশতঃ তাঁদের পরিবারের খুদে সদস্যদের জন্যে মেলা থেকে আমার বই কিনে নিয়ে যান। আর আমি অনায়াসে ঠাঁই পেয়ে যাই ছোট্ট বন্ধুদের মনোজগতের ভেতরে।

বইয়ের সঙ্গে বিকশিত হও আমার ছোট্ট বন্ধুরা।

আনন্দময় হোক তোমাদের শৈশব।

অটোয়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

- Advertisement -

Read More

Recent