মঙ্গলবার - এপ্রিল ৩০ - ২০২৪

হিমু: মহামানব সৃষ্টির প্রকল্প

ছবিসিরাজুল ইসলাম টরন্টো

হুমায়ুন আহমেদের হিমুকে আমার ভালোই লাগতো। বলতে গেলে হিমুর সব উপন্যাসই আমি পড়েছি । রূপা নামের মেয়েটি হিমুকে খুব পছন্দ করতো কিন্তু হিমু রূপাকে সেইভাবে পছন্দ করতো কিনা তা নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয় , কারণ রূপা বহুবার হিমুর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছে , সময় , স্থান সবই নির্ধারিত হয়েছিল কিন্তু রূপা সব সময় ব্যর্থ হয়েছে । নির্ধারিত সময়ে রূপা নির্ধারিত স্থানে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে হিমুর জন্য কিন্তু হিমু আসেনি ।
হিমুকে তার বাবা মহা মানব বানাতে চেয়েছিলো । মহা মানব বানাবার প্রশিক্ষণও দিয়েছিলো যাতে হিমু মহা মানবদের মত সুখ দুঃখের অনুভূতি , জাগতিক মায়া মমতা থেকে উর্ধ্বে থাকতে পারে । মহা মানব বানাবার এই প্রশিক্ষণ শুরু হয় হিমুর ছোট কাল থেকেই ।
এই প্রশিক্ষণের একটি নমুনা হচ্ছে , একদিন হিমুর বাবা হিমুর জন্য টিয়ে পাখি কিনে আনলো । হিমু তখন বালক । টিয়ে পাখিটির সঙ্গে হিমুর বেশ ভাব হয়ে গেলো । হিমু টিয়ে পাখিটিকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারে না । টিয়ে পাখিটি হিমুর কল্যানে বেশ কিছু শব্দও শিখে ফেললো । দিন দিন টিয়ে পাখির প্রতি হিমুর মায়া মমতা গভীর থেকে গভীরতর হলো কিন্তু একদিন সকালে হিমুর বাবা হিমুকে ডাক দিলো এবং টিয়ে পাখিকে নিয়ে আসতে বললো । হিমু ভাবলো তার বাবা বুঝি টিয়ে পাখিটাকে আদর করবে । নিরীহ বালক টিয়ে পাখিটিকে এনে বাবার হাতে সপে দিলো । বাবা অবলা পাখিটিকে পাওয়ামাত্র এক টানে দেহ থেকে মাথাটিকে ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন করে ফেললো । ছোট্ট বালক হিমু অবাক বিস্ময় নিয়ে বাবার এই নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করেছে , হিমু এতো হতভম্ব ছিল যে ব্যথিত হবার সুযোগ পায়নি তার প্রিয় পাখিটির মস্তক ছিন্ন হওয়া দেখে ।এটি ছিল মহা মানব তৈরির একটি প্রশিক্ষণ যাতে হিমু জাগতিক কোন মায়া মমতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে না যায় । মহা মানবের কাজ হবে আরো ব্যাপক এবং বিস্তৃত । ছোট খাটো বিষয় তাকে যেন প্রলুব্ধ করতে না পারে ।
যাই হোক বাস্তবে মহা মানব এই ভাবে তৈরী করা সম্ভব কিনা জানিনা । হয়তো সম্ভব নয় , কারণ মহা মানবের গুণাবলী জন্মগত , এটি আরোপিত কোন বিষয় নয় ।
তবে হিমু পড়তে ভালোই লাগতো । বেশ ইন্টারেস্টিং কিছু বিষয় ছিল । এভাবেই হয়তো হুমায়ুন আহমেদ পাঠক সৃষ্টি করেছিলেন , এটি অস্বীকার করার উপায় নেই , সাহিত্য মান যাই থাকুক না কেন ।

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Read More

Recent