রবিবার - মে ১৯ - ২০২৪

ফেইক আইডি এবং ফেসবুক চরিত্র

বুঝলাম এটি কোনো রক্ত মাংশের মানুষ নয়রক্ত মাংশের মানুষ হলে এমন অবিচার করতে পারতো না আমার আর আমার বউয়ের জ্বলজ্যান্ত ছবি

দৃশ্যপট একঃ

বিষ্যুদবার ভোর রাত। সেহরি খেয়ে ঘুমিয়েছি। ঘুম ভাঙতেই প্রিয় কুয়েটিয়ান অনুজ পলাশের মেসেজ।

- Advertisement -

“মিল্টন ভাই, নতুন ফেসবুক একাউন্ট খুলেছেন?”

নাহ। আমিতো একটা একাউন্টই ঠিকমতো ম্যানেজ করতে পারছিনা। আবার আরেকটা?

তাহলে এটা কি?

পলাশ বুদ্ধি করে মেসেজের সাথে ভূঁয়া আইডি’র স্ক্রীন শট জুড়ে দিলো। দেখলাম, ব্যাটা ফেসবুক দুর্বৃত্ত আমার সস্ত্রীক ছবি দিয়ে প্রোফাইল পিকচার এবং ব্যাকগ্রাউন্ড সাজিয়েছে। দেখে মনে হয় এটি সত্যিই আমার ফেসবুক পেজ। প্রোফাইল পিকচারটি নিয়েছে আমার স্ত্রীর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে। ব্যাকগ্রাউন্ড বানিয়েছে আমার পুরনো স্ট্যাটাসে দেয়া একটি ছবি ব্যবহার করে। ৬ জুলাই ২০২০ সালে আমাদের বিশতম বিবাহ বার্ষিকীতে পোস্ট করা ছবি।

পলাশের মেসেজ পাবার পর বিষয়টি সবাইকে জানাই। তাঁদের অনেকে “ফেইক একাউন্ট” হিসাবে এটি ফেসবুকে রিপোর্ট করে। উদ্বোধনী রিপোর্টটি পলাশ নিজেই করে। একে একে বাকী সবাই। দুপুর নাগাদ আমি রিপোর্ট করি। প্রায় সকল রিপোর্টের উত্তর এলো একই রকম। ফেসবুক আমাকে চকচকে বাংলা অক্ষরে ইমেইল দিলো। ইমেইল মেসেজটি হুবহু সেঁটে দিলাম।

Hi Hasan,

আপনার বন্ধুর অভিযোগ করা প্রোফাইলটি আমরা রিভিউ করেছি এবং দেখেছি যে এটি আপনার ছদ্মবেশ ধারণ করছে না এবং সেটি আমাদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের বিরুদ্ধে যাচ্ছে না। মনে রাখবেন: আপনি যদি কারোর প্রোফাইলে এমন কিছু দেখতে পান যা Facebook-এ থাকা উচিত নয়, তাহলে শুধু সামগ্রীটির (উদা: একটি ফটো বা ভিডিও) অভিযোগ করুন, সম্পূর্ণ প্রোফাইলটির নয়।

ধন্যবাদ,

Facebook টিম

বুঝলাম, এটি কোনো রক্ত মাংশের মানুষ নয়।রক্ত মাংশের মানুষ হলে এমন অবিচার করতে পারতো না। আমার আর আমার বউয়ের জ্বলজ্যান্ত ছবি। আমারি নাম, কেবল নামের আগে একটি এমডি লাগানো। চাকুরি, পড়াশোনা, পেশা সবই আমার। আর ব্যাটা ফেসবুক বলে কিনা এটি আমার ছদ্মবেশ ধারণ করছে না! হায় রে বুদ্ধি ফেসবুকের! এমন বুদ্ধি দিয়ে পঞ্চাশ হাজার কর্মী ছাটাই করেও ফেসবুক বাঁচানো যাবেনা। প্রতিদ্বন্দ্বীরা হাত গুটিয়ে বসে নেই মিঃ জুকারবার্গ।

দৃশ্যপট দুইঃ

শুক্রবার বিকেল। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রিয় কুয়েটিয়ান অনুজ শামীম রেজার ফোন। প্রথমে ধরতে পারিনি। পরে কলব্যাক করতেই শামীমের আর্ত কন্ঠস্বর। “মিল্টন ভাই, ভালো আছেন তো?”

হ্যাঁ, ভালো আছি।

তোমার কন্ঠ এমন কেনো?

আপনি বিপদে আছেন শুনে খুব খারাপ লাগছে।

শামীম রেজা কবি মানুষ। দুর্দান্ত কবিতা লেখে। কবিদের মন কোমল হয়। ওর ক্ষেত্রে এটি দ্বিগুন সত্য। কেনোনা ওর কণ্ঠস্বরও ভীষণ কোমল।

বললাম, “কোন বিপদের কথা বলছো?”

আপনি এখন কোথায়?

কেনো? টরন্টোতেই আছি। রোজার ভেতর কোথায় বেড়াবো?

তাহলে যে টেক্সট পাঠালেন দুবাই থেকে?

সর্বনাশ! অনেক জায়গায় ঘুরলেও বাপের জন্মে দুবাই যাইনি। দুবাই থেকে মেসেজ পাঠাবো কি করে?

আপনার নতুন আইডি থেকে এসেছে?

নতুন আইডি? এবার বুঝেছি। তুমি কি ফেইক আইডি’র রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছো? আমিতো সবাইকে সতর্ক করেছি।

ফেক আইডি মানে? ওটা আপনি নন?

তুমি সম্ভবত আমার সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়োনি। যাহোক, কি হয়েছে খুলে বলোতো।

শামীম এবার শান্ত হয়ে বলতে শুরু করে।

আপনাকে দীর্ঘদিন ফেসবুকে না দেখে ফোন দিবো ভাবছিলাম। এমন সময় নতুন ফেসবুক রিকোয়েস্ট পেলাম আপনার। সাথে সাথেই একসেপ্ট করে মেসেঞ্জারে কল দিলাম। আপনি ধরলেন না। কিন্তু লিখিত মেসেজ দিলেন। লিখলেন, আপনি দুবাই আছেন। ওয়াইফাই সমস্যা করছে। স্বল্প স্পীডে কথা ভেঙে যায়, কিন্তু টেক্সট কাজ করছে। এপর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো।

তাহলে বেঠিক হলো কখন?

পরের মেসেজে আপনি লিখলেন, খুব বিপদে পড়েছি দুবাই এসে। হেল্প দরকার। অর্থ সংক্রান্ত সমস্যা।

আচ্ছা! এরপর?

এরপরই খটকা লাগলো। মিল্টন ভাইয়ের যে নেটওয়ার্ক তাতে দুবাইয়ে আর্থিক বিপদ হবার কথা নয়। ডব্লিউএসপি’র দুবাই অফিস থেকেইতো সাহায্য নিতে পারে। তাই প্ল্যান করলাম কথা না বলে পরবর্ত্তী উত্তর দিবোনা।

অতপর… ফোনে কল দিলে। ভালো করেছো।

জ্বী মিল্টন ভাই।

শোনো শামীম, কোনো এক ফ্রড এই কাজটি করেছে। একই অবস্থা আমার বন্ধু শৈবালের। টরন্টোর জনপ্রিয় লেখক সালাহ উদ্দিন শৈবালের নামের আগে এমডি লাগিয়ে চৌর্যকর্ম সেরেছে কোনো এক তস্কর। ফেসবুকে অভিযোগ করে রোবোটিক টেমপ্লেটে একই জবাব পেয়েছে শৈবাল।

সন্ধ্যা নেমে আসছিলো। ইফতারের টাইম ঘনিয়ে এলো বলে। শামীমকে ছেড়ে দিলাম। চ্যাপটা পিছলে ফোনটি প্যান্টের ফ্রন্ট পকেটে চালান দিলাম। ক্লান্ত পায়ে পার্কিং লটে হাঁটা দিলাম। উত্তর মেরুর হেলান দেয়া সূর্য আনুভূমিক হয়ে চোখে পড়ছে। সানব্লাইন্ড হয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে ফেসবুকীয় বাটপারের কথা ভাবছিলাম। কতো সহজে কমিউনিটি স্টান্ডার্ডের নামে পার পেয়ে যাচ্ছে মিলিয়নস অব বাটপার। এদের যুক্ত করে ফেসবুক হয়তো বাড়িয়ে নেবে তাঁর সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা। বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে সাবস্ক্রিপশন সংখ্যা যে অনেক গুরুত্ত্বপূর্ণ! আমাদের মতো বিনা পয়সায় সেবাভোগীদের অভিযোগ তাঁদের আমলে নেবার প্রয়োজন পড়েনা।

শেষ কথাঃ লেখাটি বাংলাতেই মূদ্রিত হলো। বাংলায় প্রাপ্ত ইমেইল থেকে বুঝলাম ফেসবুক বাংলা বোঝে! ফেক আইডির ছবিটিও সঙ্গে দিলাম।

- Advertisement -

Read More

Recent